বিশ্বজুড়ে ডিজাস্টার ট্যুরিজমের ৭ স্থান

ছবি: সংগৃহীত

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বরাবরই তীব্র। এসব কারণে সুদূর কিংবা নিকট অতীতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া কোনো জায়গায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে সেসব বিয়োগান্তক ঘটনাকে অনুধাবনের প্রবল আকাঙ্ক্ষাও কাজ করে অনেকের ভেতর। এই ধারণাকে ঘিরেই উদ্ভব হয়েছে ডিজাস্টার ট্যুরিজম বা ‍দুর্যোগ পর্যটনের।

এ সংক্রান্ত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যও বলছে, বিশ্ব সম্পর্কে জানার প্রবল আগ্রহ, সামাজিক সচেতনতা প্রসার, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ দুর্যোগকবলিত জায়গার প্রতি আকৃষ্ট হয়। কেউ কেউ গণমাধ্যমের প্রচারে আশ্বস্ত না হয়ে সত্য ঘটনা উদঘাটনের জন্যও এসব জায়গা ভ্রমণ করতে চান।

তাহলে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের এমন আকর্ষনীয় ও বিখ্যাত কিছু ডিজাস্টার পর্যটন স্পট।

ইতালির পম্পেই

ইতালির প্রাচীন বন্দর নগরী পম্পেই একসময় ছিল রোমান সাম্রাজ্যের অংশ। ৭৯ খ্রিস্টাব্দে এখানেই ঘটে যায় ভয়ানক এক অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা। ভিসুভিয়াস পর্বতের লেলিহান লাভায় মাত্র ১৮ ঘন্টায় পুড়ে ছাই হয়ে যান এ শহরের বাসিন্দারা। সারনো নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে গিয়ে ১৮৬৩ সালে ছাইয়ের ভেতর থেকে আবিষ্কার করা হয় নগরীর বাসিন্দাদের দেহাবশেষ। লাভার আস্তরণে শক্ত হয়ে যাওয়া সেসব মৃত মানবাকৃতির মেলে সেখানে গেলে। সুদূর অতীতের প্রাণবন্ত এই শহরের বিভিন্ন স্থাপনা, বাজার ও লোকালয় হিসেবে চিহ্নিত জায়গাগুলো এখনো যেন অতীতের গল্প শোনায়।

ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের চেরনোবিল

এককালে ইউক্রেনের চেরনোবিল ছিল ১৪ হাজার মানুষের আবাসস্থল। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিলের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর এটি ভূতের শহরে পরিণত হয়েছে। ক্ষতিকারক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ায় ৪ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এখন শহরটিতে হাতেগোনা ৫০০ জনের আবাস। শহরের অধিকাংশ এলাকাও সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। দিনের আলোতে বন্য পশুদের দেখা মেলে পথেঘাটে।

ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্কের গ্রাউন্ড জিরো

নাইন ইলেভেন আমেরিকার ইতিহাসের একটি বড় ট্র্যাজেডির নাম। ২০০১ সালে সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে টুইন টাওয়ারের পতনের ঘটনায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়। যাদের স্মরণে পরে নিউইয়র্ক সিটির গ্রাউন্ড জিরোতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। তারপর টাওয়ারের জায়গায় নির্মিত ফোয়ারায় লেখা হয়েছে নিহতদের নাম। ভয়াবহ আক্রমণের দৃশ্য তুলে ধরতে তৈরি করা হয়েছে জাদুঘর। গ্রাউন্ড জিরোতে গিয়ে অনেকে এখনো নিহতদের আত্নার শান্তি কামনা করেন।

ছবি: সংগৃহীত

নিউ অরলিন্সের হারিকেন ক্যাটরিনা

১৪ বছর আগে নিউ অরলিন্সে আঘাত হানে হারিকেন ক্যাটরিনা। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আট লাখ বাড়িঘর। গৃহহীন হয়ে পড়ে অগণিত মানুষ। তাদের পুনর্বাসনে ১৬০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পরও পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি এখনো। এক দশকেরও অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও ঝড়ের প্রভাব পুরোপুরি কাটেনি। এমন দুর্যোগকবলিত কবলিত জায়গা পুনর্নিমাণে সহযোগিতার হাত বাড়াতে নিউ অরলিন্স ঘুরে দেখতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা সিটি ন্যাশনাল মেমোরিয়াল

১৯৯৫ সালে ওকলাহোমা সম্মুখীন হয় এক কুখ্যাত সন্ত্রাসী হামলার। একটি গাড়িবোমা বিস্ফোরণ আলফ্রেড পি. মুরাহ ফেডারেল বিল্ডিংকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এই ঘটনায় নিহত হন ১৬৮ জন মানুষ। আহত হন শতাধিক। ওকলাহোমা সিটি ন্যাশনাল মেমোরিয়ালে হামলায় হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নামে রাখা হয়েছে পাথরের চেয়ার। এখানকার জাদুঘর আক্রমণের ইতিহাস তুলে ধরে।   

নেভাদা ন্যাশনাল সিকিউরিটি সাইট

লাস ভেগাস থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে অবস্থিত নেভাদা ন্যাশনাল সিকিউরিটি সাইট বা নেভাদা বর্জ্যভূমি। এখানে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ট্র‍্যাজেডি না হলেও এটি আজ পরিত্যক্ত স্থান ছাড়া কিছু নয়। এখানে ১৯৫০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ৯০০টিরও বেশি বিস্ফোরণ ঘটানো হয় পারমাণবিক পরীক্ষার জন্য। এখনো পারমাণবিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিখ্যাত নেভাদা পরিদর্শন করতে যান অনেকে।

নিউজার্সির হিন্ডেনবার্গ ক্র্যাশ সাইট

`ওহ, হিউম্যানিটি!' শব্দদ্বয় অনেকের কাছে পরিচিত। রেডিও রিপোর্টার হার্ব মরিসন ১৯৩৭ সালে কুখ্যাত হিন্ডেনবার্গ ক্র্যাশের ভয়াবহতা বোঝাতে এটি ব্যবহার করেন। বিলাসবহুল জার্মান এয়ারশিপ এলজেড-১২৯ হিন্ডেনবার্গ নিউজার্সির আকাশে আগুনে ফেটে পড়ার ঘটনায় ৩৭ জন যাত্রী নিহত হন। নেভি লেকহার্স্ট হিস্টোরিক্যাল সোসাইটি এয়ারশিপ ক্র্যাশের স্থানে দর্শকদের ট্যুর অফার করে। অ্যাভিয়েশন ইতিহাসে আগ্রহী যে কেউ সেখানে যেতে পারেন।

সত্যি বলতে, পর্যটনের অন্য ধারাগুলোর মতোই ডিজাস্টার ট্যুরিজম স্থানীয় অর্থনীতিকে সহায়তা করতে পারে। বিপর্যস্ত সম্প্রদায় পুনর্গঠন ও সংস্কারে সাহায্য করতে পারে এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে এসবের বিপরীতে ট্যুরিজমের এই ধারাটি নিয়ে নেতিবাচক মতামতও জারি আছে।

ডিজাস্টার ট্যুরিজম অনেক সময় বিপর্যস্ত মানু্ষের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া পর্যটকদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, ব্যক্তিগত স্বার্থ, অনুমতি ছাড়া ছবি তোলার মতো নানা কারণে ডিজাস্টার ট্যুরিজমের সমালোচনাও কম নয়।

তথ্যসূত্র: দ্য ট্রাভেল, ওয়াইজ ট্যুর

Comments

The Daily Star  | English

US tariff talks: First day ends without major decision

A high-level meeting between Bangladesh and the Office of the United States Trade Representative (USTR) ended in Washington, DC, yesterday without a major decision, despite the looming expiry of a 90-day negotiation window on July 9.

3h ago