বিএনপির বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতার নাশকতা মামলা, পুলিশ বলছে ভাঙচুর-বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি

বোয়ালখালী থানা
বোয়ালখালী থানায় এ মামলা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী অবরোধের তৃতীয় দিনে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে গাড়ি ভাঙচুর ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে দাবি করে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা একটি মামলা করেছেন।

অথচ, বোয়ালখালী উপজেলায় বৃহস্পতিবার কোনো ভাঙচুর বা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি বলে পুলিশ জানালেও, বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ঘটনার সাড়ে ৫ ঘণ্টার মধ্যে মামলাটি রেকর্ড করেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে মামলাটি থানায় রেকর্ড করা হয়। বোয়ালখালীর শাকপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

মামলায় বিএনপির বিরুদ্ধে দেশের চলমান উন্নয়ন ব্যাহত, সড়কে যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি ও যানবাহন ভাঙচুর, টায়ার জ্বালিয়ে ও হাতবোমা বিস্ফোরণ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।

এসব অভিযোগে বিএনপির ১৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৭০-৮০ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে।

এজাহারে নাসির দাবি করেন, বৃহস্পতিবার ভোরে ব্যবসায়িক কাজে তিনি শহরের উদ্দেশে বের হন। ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে বোয়ালখালী থানাধীন শাকপুরা ইউনিয়নের মিলিটারি ব্রিজ থেকে প্রায় ৫০০ গজ উত্তরে আরাকান সড়কে পৌঁছে তিনি দেখতে পান, বোয়ালখালী থানা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ৭০-৮০ জন অবরোধ কর্মসূচির নামে ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ির টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয় ও ওই রাস্তায় চলা গাড়ি ভাঙচুর করছে।

এ অবস্থায় রাস্তায় ভাঙচুর করা গাড়িসহ অন্যান্য গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। 

যুবলীগ নেতা নাসিরের দাবি, সে সময় তিনি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ করলে আসামিরা তাকেও আক্রমণ করে। এতে তিনি পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন।

তিনি তখন ঘটনাস্থল থেকে চলে গিয়ে পুলিশকে এ ঘটনা জানান এবং বোয়ালখালী থানার এসআই মোহাম্মদ মোবারক হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের  চেষ্টা করেন বলে দাবি তার।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিএনপি নেতাকর্মীদের আটকের চেষ্টা করলে, তারা ঘটনাস্থল থেকে মোটরবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। 

মামলায় নাসির বলেন, 'বিষয়টি আমি দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে আসামিদের নাম-ঠিকানা জেনে এবং চিকিৎসা নিয়ে থানায় গিয়ে ৭০-৮০ জনের বিরুদ্ধে এজাহার করি।'

ভাংচুর-বোমা বিস্ফোরণের বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশিক মাহমুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত যতদূর আমি জানি বৃহস্পতিবার বোয়ালখালী উপজেলায় কোনো ভাঙচুর বা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি।'

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি মামলার বিষয়ে জানি না। এ বিষয়ে বোয়ালখালীর ওসির সঙ্গে কথা বলতে পারেন।'

বোয়ালখালী থানার ওসি আছহাব উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি ভাঙচুর বা বোমা বিস্ফোরণের কোনো ঘটেনি বলে স্বীকার করেন এবং কল কেটে দেন।

এরপর সন্ধ্যা থেকে তাকে অন্তত ৫ বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফোনে এসএমএস পাঠালেও তিনি জবাব দেননি।

এ কারণে এ মামলায় কেউ আটক বা গ্রেপ্তার আছে কি না, তা জানা যায়নি।

যোগাযোগ করা হলে ঘটনাস্থলে যাওয়া এসআই মোবারক কথা বলতে অস্বীকার করে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি কিছু জানি না। দয়া করে আমার ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলুন।'

এদিকে এজাহারে বাদী নাসির ঘটনার সময় ব্যবসার কাজে যাওয়ার কথা বললেও, ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ভোরে তিনি ও তার কয়েকজন অনুসারী একটি অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন।

নাসির বলেন, 'ফিরে আসার সময় তারা যানবাহন ভাঙচুর করে এবং আমাদের ওপর হামলা করে। হামলায় আমরা আহত হই।'

তবে, নাসিরের পায়ে আগে থেকেই সমস্যা আছে স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু মামলার সব তথ্যই সত্য বলে দাবি করেন নাসির। 

মামলায় এজাহারনামীয় আসামিদের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

US states worried about election unrest take security precautions

Many of the most visible moves can be seen in the battleground states that will decide the presidential election, states like Nevada where protests by Trump supporters broke out after the 2020 election.

1h ago