মূলধন সংকটে ৮২ শতাংশের বেশি হস্তশিল্প উদ্যোক্তা: জরিপ

হস্তশিল্প, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিবিএস,

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৮২ শতাংশেরও বেশি হস্তশিল্প উদ্যোক্তা মূলধন সংকট ভুগছেন। ফলে, তারা ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

স্থানীয় হস্তশিল্প শিল্পগুলোর বেশিরভাগ পরিবারভিত্তিক হলেও একটি অংশের আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে। যাদের আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে তাদের প্রায় ৮৫ শতাংশ মূলধন সংকটে পড়েছে।

গতকাল বুধবার 'হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান জরিপ ২০২২' এর ফলাফল প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশের ৭ হাজার ৩১০টি হস্তশিল্প কারখানায় এই জরিপ চালানো হয়।

জরিপে আরও দেখা গেছে, প্রায় ২৪ থেকে ৪৬ শতাংশ হস্তশিল্প উদ্যোক্তা ক্রেতার অভাব, অর্থনৈতিক মন্দা, বিপণন সমস্যা, কাঁচামাল এবং শ্রম ব্যয়ের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

দেশের প্রায় ১ লাখ ৪৮ হাজার মানুষ হস্তশিল্প শিল্পের সঙ্গে জড়িত, তাদের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশ নারী। মোট কর্মীর মধ্যে ৯৫ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবারভিত্তিক কারখানা এবং ৪ দশমিক ২ শতাংশ পৃথক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

জরিপে অংশ নেওয়া দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ মনে করেন, হস্তশিল্প তাদের প্রধান পেশা এবং বাকি ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, এটি তাদের আয়ের দ্বিতীয় উৎস।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো হস্তশিল্প নির্মাতাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে অনিচ্ছুক।

তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মতো হস্তশিল্প উদ্যোক্তাদেরও তহবিল সুরক্ষিত করতে গ্যারান্টার ও ট্রেড লাইসেন্সের পাশাপাশি ব্যবসায়িক রেকর্ডের ব্যবস্থা করতে হয়। সুতরাং এসব কাগজপত্রের অভাবে অধিকাংশ ব্যাংক তাদের ঋণ দিতে আগ্রহ দেখায় না।

'এসএমই ফাউন্ডেশন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের সুযোগ করে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু, মূলধন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে,' যোগ করেন তিনি।

২০২২ সালে গড়ে এ শিল্পের কর্মসংস্থান ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। পরিবারভিত্তিক কারখানা থেকে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা এবং ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা পৃথক প্রতিষ্ঠান থেকে।

সব মিলিয়ে ওই বছর মোট কর্মসংস্থান ব্যয় ছিল ৯৯৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, হস্তশিল্প নির্মাতাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য মূলধনের অভাব একটি বড় সমস্যা।

তিনি বলেন, 'বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) যথাযথ ডকুমেন্টেশনের সামর্থ্য না থাকায় দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে সঠিকভাবে সেবা নিতে পারছে না।'

'ফলে তারা সাধারণত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হন,' বলেন তিনি।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান আরও বলেন, 'দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য এটি (এসএমইদের জন্য আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং) নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'

এই প্রেক্ষাপটে তিনি সরকারকে এনজিওগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে স্বল্প সুদে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

Comments

The Daily Star  | English
FY2026 Budget,

How the FY2026 budget can make a difference amid challenges

The FY2026 budget must be more than a mere fiscal statement.

18h ago