কোচ আসে কোচ যায়…

এবার বিশ্বকাপে ৮৬ শতাংশ ক্যাচ নেওয়ার দক্ষতা দেখিয়ে সবগুলো দলের মধ্যে নেদারল্যান্ডস এক নম্বরে! যে কুকের অধীনে বাংলাদেশ ছিলো দিকহারা, তালগোল পাকানো। সেই কুকই বদলে দিলেন ডাচদের।

দিল্লি থেকে

কোচ আসে কোচ যায়…

Chandika Hathurusingha
চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

রায়ান কুক তখন বাংলাদেশের ফিল্ডিং কোচ, ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি কোচ থাকার সময় গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্যাচ হাতছাড়া করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। তারপর এই কোচেরর কাজ ও দক্ষতা নিয়ে উঠে প্রশ্ন। কড়া মন্তব্য করেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও।

তীব্র সমালোচনার জেরে ওই বিশ্বকাপের পর কুককে বাদ দেয় বিসিবি। মজার কথা হলো সেই কুকের অধীনে বিশ্বকাপে এসে এবার নেদারল্যান্ডস হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দেখে থাকলে আলাদা করে চোখে পড়ার কথা ফিল্ডিং। বাংলাদেশ যেখানে দুই ক্যাচ হাতছাড়া করেছে, বেশ কিছু গ্রাউন্ডস ফিল্ডিংও ছিল নড়বড়ে। ডাচরা সব দিক থেকেই ছিলো ঝাঁজালো। দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে জমিয়েছে দারুণ সব ক্যাচ, বাউন্ডারি আটকাতেও তাদের দেখা গেছেন ক্ষিপ্র।

এবার বিশ্বকাপে ৮৬ শতাংশ ক্যাচ নেওয়ার দক্ষতা দেখিয়ে সবগুলো দলের মধ্যে নেদারল্যান্ডস এক নম্বরে! যে কুকের অধীনে বাংলাদেশ ছিলো দিকহারা, তালগোল পাকানো। সেই কুকই বদলে দিলেন ডাচদের।

অথচ মাশরাফি ২০২১ সালে প্রশ্ন তলে বলেছিলেন, ২০১৯ বিশ্বকাপের পর সব কোচকে বাদ দেওয়া হলেও রায়ান কুককে কেন রেখে দেওয়া হয়েছে? তখনকার প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর মতো কুকও দক্ষিণ আফ্রিকান হওয়ায় মাশরাফির মন্তব্য ছিলো,  'এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয়, একটা পুনর্বাসন কেন্দ্র! যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার সব চাকরি না পাওয়া কোচগুলো একসঙ্গে আমাদের রিহ্যাব সেন্টারে চাকরি করছে। এদের বাদ দেওয়া আরও বিপদ। কারণ, চুক্তির পুরো টাকাটা নিয়ে চলে যাবে…।'

এই প্রসঙ্গে পেছনে যেতে হলো একটা কারণে। আসলেই কি সমস্যা কেবল ছিলো কোচিং স্টাফে? কুকদের দক্ষতা নিয়ে যদি প্রশ্ন থাকে তাহলে নেদারল্যান্ডস কীভাবে ভালো করছে? একের পর এক কোচ বদল করেও কেন ডুবছে বাংলাদেশ।

পরিসংখ্যানে ডমিঙ্গো ছিলেন বাংলাদেশের সফলতম কোচ। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলের ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে হয় তাকে। তাকে যে সরানো হবে বিসিবি থেকে সেই আভাস ছিল স্পষ্ট। প্রধান কোচ পদে থাকলেও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়নি দলের সঙ্গে। নিয়ে আসা হয় শ্রীধরণ শ্রীরামকে। ডমিঙ্গোকে এক পর্যায়েই পারষ্পারিক সমঝোতায় চলে যেতে হয়।

বিশ্বকাপের এক বছরেরও কম সময় বাকি থাকতে নিয়ে আসা হয় পুরনো কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে। যার অধীনে ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বড় বড় সাফল্য ছিল বাংলাদেশের।  না, এবার কোন ম্যাজিক নিয়ে হাজির হননি হাথুরুসিংহে। কিন্তু  তার অধীনে চলতি বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ খেলে ছয়টিতেই শোচনীয়ভাবে হেরেছেন সাকিব আল হাসানরা। ফল নির্ভর পরিকল্পনার জন্য খ্যাতি ছিলো তার, অথচ হাথুরুসিংহের পরিকল্পনাই সব গোলমাল লেগে গেছে এই বিশ্বকাপে।

বিশ্বকাপের পর হয়ত হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় অধ্যায়ও থেমে যাবে। আবার খোঁজ পড়বে নতুন কোন কোচের। যিনি এসে ভোজবাজির মতন সব বদলে দেবেন বলে করা হবে আশা। ফের হয়ত আরেকটি চক্রেই ঘুরপাক খেতে থাকবে সব।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ফেরা পুরনো আরেক কোচের কথা প্রাসঙ্গিকভাবেই এসে যায়। ২০১১ বিশ্বকাপে প্রধান কোচ ছিলেন জেমি সিডন্স। প্রায় এক যুগ পর আবার ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিয়ে আসা হয় তাকে। জানা যায় তাকে ফেরাতে পরামর্শ ছিল একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটারের। সিডন্সের ফেরাটা জাতীয় দলের জন্য হয়নি সুখকর। সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি হওয়ায় দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান অ্যাশওয়েল প্রিন্স।

সিডন্স জাতীয় দলের জন্য পরে হয়ে যান অস্বস্তি। তার কোচিং ধরণের সঙ্গে মেলে না বর্তমান বাস্তবতা। জাতীয় দলের সেটআপ থেকে সরিয়ে এই অস্ট্রেলিয়ানকে এবার কাজে লাগানো হচ্ছে ডেভোলাপমেন্ট ধাপে।

করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ হয়ে উঠছিল নজরকাড়া। ওটিস গিবসনের অধীনে পেসাররা হয়ে উঠেন ম্যাচের প্রভাবক। ২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডের মাঠে গিয়ে পেসারদের সাফল্যেই টেস্ট জিতে নেয় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে গিয়ে সিরিজ জেতাতেও ছিল পেসারদের অগ্রণী ভূমিকা।

পেসারদের উন্নতিতে ভূমিকা রাখা গিবসনের সঙ্গেও তিক্ত সমাপ্তি টানে বিসিবি। বিদায়ের সময় দ্য ডেইলি স্টারকে এক সাক্ষাতকারে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোচ বলে যান, নতুন চুক্তিতে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি, কাজ করতে চেয়েছিলেন তাসকিন আহমেদদের সঙ্গে। কিন্তু সাড়া দেয়নি বিসিবি।

বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি অ্যালান ডোনাল্ড সামলাচ্ছেন পেস বোলিং বিভাগের দায়িত্ব।  গত দুই বছরে পেসাররা ভালো করায় প্রশংসিত হচ্ছিল তিনি। তবে বিশ্বকাপে খারাপ পারফরম্যান্সের পর তার উপর তোপ পড়লে অবাক হওয়ার থাকবে না।

বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের পাদচারণা সব সময়ই ছিলো। ২০১৯ বিশ্বকাপে কোর্টনি ওয়ালশ ছিলেন। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর তার বিদায়ও ছিলো একদম মলিন।

একটা দলের ভালো করার ক্ষেত্রে কেবল কোচই নয়। ক্রিকেটারদের সহজাত দক্ষতা, নিবেদন, বোর্ডের ব্যবস্থাপনাও যেন অনেক বেশি ভূমিকা রাখে, কোচ বদলের গরম খবরের তাওয়ায় তা বরাবরই আড়ালে থেকেছে। এবার বিশ্বকাপের পরও এর ব্যতিক্রম কিছু হবে বলে আভাস মিলছে না।

Comments

The Daily Star  | English

Barishal University VC, pro-VC, treasurer removed

RU Prof Mohammad Toufiq Alam appointed interim VC

24m ago