মির্জা ফখরুলের আটক ও চলমান রাজনীতি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রোববার কারাগারে পাঠায় আদালত। ছবি: সংগৃহীত

দেশের রাজনীতি বিপর্যয়ের দিকে এগুচ্ছে এটা সবাই বোঝে। আমি নিজে বইপত্র লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সচেতন নাগরিক হিসাবে চলমান পরিস্থিতির খবর না রেখে উপায় নেই, বিশেষত যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশের জন্য পৃথিবীব্যাপী ভূ-রাজনীতির নতুন মেরুকরণ কী তাৎপর্য বহন করছে তা নিয়ে কিছু গবেষণা করছি। তবে সেটা এ লেখার বিষয় নয়।

সুশীল সমাজের পক্ষ হয়ে কোনো পর্যবেক্ষণ করার অবস্থানেও আমি নেই। তবে আমার মনে হয়েছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এ সময়ে আটক করা আগামী নির্বাচন পূর্ববর্তী পরিস্থিতির জন্য সমীচীন হয়নি। উভয় প্রধান দলের নেতৃত্বস্থানীয় রাজনীতিকদের মধ্যে তিনিই বোধহয় ক্রমাগত এককভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলে আসছেন এবং সংঘাত সৃষ্টির মতো উস্কানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থেকেছেন। 

বাইরে থেকে ঘটনাপ্রবাহ দেখলে এবং তার বক্তব্য শুনলে অন্তত আপাতদৃষ্টে মনে হবে তিনি কোনোরকম সংঘাত এড়িয়ে শুধু স্বতঃস্ফূর্ত গণজাগরণের মাধ্যমেই তার দলের লক্ষ্য অর্জন করতে চাইছেন; সেটা সফল হবে কি না, তা ভিন্ন প্রশ্ন। তার গোপন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকলেও তা নিয়ে তো আমাদের মন্তব্য করার সুযোগ নেই; যা দৃশ্যমান তা নিয়েই শুধু তার রাজনীতিকে এ মুহূর্তে বিচার করতে পারি।

এর বিপরীতে উভয় দলের অন্যান্য অনেক নেতার গণমাধ্যমে প্রচারিত বক্তব্য থেকে এ ধরনের অহিংস আন্দোলনের বদলে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের পরিচয়ই বেশি দেখা যায়। এ অবস্থায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেওয়ার মানে হলো সংঘাতময় পরিস্থিতির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেওয়া। অবশ্য তিনি তার দলকে কতখানি সংযত রাখার ক্ষমতা রাখেন তা আমার মতো রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ মানুষের জানার কথা নয়। নানা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের খবরও আমদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। 

কিন্তু আপাতদৃষ্টে তার মতো ঘোষিত একজন অহিংসতাবাদী মূল রাজনৈতিক নেতার অনুপস্থিতি চলমান রাজনীতির সংঘাত প্রশমনের সহায়ক হবে না বলেই মনে হবার কথা।

চলমান রাজনীতির সমাধান অহিংস পথে হবে, না সংঘাতের মাধ্যমে ফয়সালা হবে তার ওপর নির্ভর করবে দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ। মূল্যস্ফীতির চাপ নির্দিষ্ট বা বাঁধা আয়ের মানুষের ওপর আরও কত দুর্বিষহ হয়ে উঠবে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি কতখানি ধরে রাখা যাবে এবং আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে আদৌ এগুতে পারব কিনা। 

এই বড় প্রেক্ষাপটে মির্জা ফখরুলের আটকের ঘটনাকে হয়তো অতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে, কিন্তু এটা বড় কিছুর অনুঘটক হিসেবে কাজ করলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই। তাকে আবার তার অহিংস রাজনীতির ধারা ধরে রাখার প্রচেষ্টায় ফিরে যেতে দেওয়াই দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য হয়তো মঙ্গলকর হবে।'

(অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া)

Comments

The Daily Star  | English
Income inequality in Bangladesh

Growth obsession deepened rich-poor divide

Income inequality in Bangladesh has seen a steep rise over the past 12 years till 2022, according to official data, as economists blame a singular focus on growth rather than sorting out income disparities.

14h ago