রাতারাতি কেজিতে ১০-১৫ টাকা বাড়ল পেঁয়াজের দাম

ফাইল ছবি

ভারত প্রতিটন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করার পর গতকাল বাংলাদেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।

পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে এবং অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে শনিবার ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে গত এক বছরে দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তার ওপর এই সিদ্ধান্ত ভোক্তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে।

ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের একটি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম এই রপ্তানিমূল্য কার্যকর থাকবে।

পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে গড়ে ১০ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

শ্যামবাজারের পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল মাজেদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত শনিবার তিনি প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

একইভাবে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় পৌঁছেছে, যা আগে ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা।

মাজেদের মতে, বাংলাদেশে বছরে ২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও ভারত থেকে আমদানির মাধ্যমে পূরণ হয় মাত্র ২৫ শতাংশ।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের এক পরিসংখ্যান দেখা গেছে, গতকাল আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক সপ্তাহ আগের তুলনায় সাড়ে ১২ শতাংশ এবং এক মাস আগের তুলনায় ২৯.৬৩ শতাংশ বেশি।

একইভাবে, বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ এবং মাসে ২৬.০৬ শতাংশ বেশি।

তবে, দেশের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে শনিবার প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ৮৫ টাকা।

দেশি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকার পরিবর্তে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের মতে, চলতি বছর দেশে প্রায় ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। তারপরও অতিরিক্ত ৬-৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। তার কারণ সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে বেশির ভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে।

পাবনার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিমণ (৩৭ কেজি) দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়। গত সপ্তাহেও যেখানে দাম ছিল ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা।

পাবনার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মিলন হোসেন বলেন, 'যেহেতু পেঁয়াজের দাম দ্রুত বাড়ছে, তাই আজ (রোববার) আমি অল্প পরিমাণে কিনলাম।'

পাবনার খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মোহাম্মদ নান্নু জানান, শুক্রবার পর্যন্ত তিনি প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করলেও এখন তিনি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করছেন।

রাতারাতি দাম বৃদ্ধির কারণে চট্টগ্রামের অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী আরও বেশি দাম বাড়ার আশায় ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি আপাতত বন্ধ রেখেছেন।

গত শনিবার চট্টগ্রামে ভারতীয় খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়ে ১০৫-১২০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা আগে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।

চট্টগ্রামের পেঁয়াজ আমদানিকারক ওমর ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে ভারত পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়েছে। এ কারণে অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করা হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'তবে ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে নানা জটিলতার কারণে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ফলে পেঁয়াজের স্বাভাবিক আমদানি ব্যাহত হয়েছে।'

গাজীপুরের কাপাসিয়া বামনখলা গ্রামের নুরুল আমীন সিকদার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, 'আজ ৩০ অক্টোবর কাপাসিয়া বাজারে পেঁয়াজ কেজিতে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ১২০টাকা কেজি বিক্রি করেও পোষাতে পারছে না।'

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় একাধিক ব্যবসায়ী ব্যবসা ছেড়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।'

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৩-৪ দিন আগেও পেঁয়াজের বিক্রয়মূল্য ছিল কেজিতে ৯০-১০০ টাকা। আজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। 

 

Comments

The Daily Star  | English

IMF loan tranches: Agreement with IMF at last

The government has reached a staff-level agreement with the International Monetary Fund for the fourth and fifth tranche of the $4.7 billion loan programme, putting to bed months of uncertainty over their disbursement.

8h ago