মিরাজকে সর্ব রোগের ঔষধ বানাতে গিয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

এবার বিশ্বকাপে চার ম্যাচে মিরাজ ব্যাট করেছেন তিনটি ভিন্ন পজিশনে। মানে সর্ব রোগের ঔষধ যেন তিনি। কিন্তু মুশকিল হয়েছে ঔষুধটাও কাজে লাগছে না বরং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়ে তৈরি করে ফেলছে নতুন রোগ।

মুম্বাই থেকে

মিরাজকে সর্ব রোগের ঔষধ বানাতে গিয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

ছবি: এএফপি

মেহেদী হাসান মিরাজের তকমা এখন কি হবে? মেইক শিফট ওপেনার তো আর বলা যাচ্ছে না। এতগুলো পজিশনে তাকে প্রক্সি দিতে হচ্ছে তার নিজেরই হয়ত দ্বিধায় পড়ে যাওয়ার কথা। তাকে নিয়ে দলের চিন্তা কি তাও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না।

এবার বিশ্বকাপে চার ম্যাচে মিরাজ ব্যাট করেছেন তিনটি ভিন্ন পজিশনে। মানে সর্ব রোগের ঔষধ যেন তিনি। কিন্তু মুশকিল হয়েছে ঔষুধটাও কাজে লাগছে না বরং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়ে তৈরি করে ফেলছে নতুন রোগ।

গত এশিয়া কাপে লিটন দাস শুরুতে অসুস্থতার কারণে না থাকায় মিরাজকে 'মেইক শিফট' ওপেনার হিসেবে খেলিয়ে সাফল্য মিলে। শুনতে খারাপ লাগতে পারে, এক ম্যাচের এই সাফল্য এখন হিতে বিপরীত।

মিরাজের উপর ভরসা রেখে বিশ্বকাপে নেওয়া হয়নি বাড়তি ওপেনার, এমনকি বাড়তি ব্যাটারও। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তিনে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফের তিনে সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে মিরাজ নামেন চারে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে সহজ রান তাড়ায় ৫৭ রান করেছিলেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো শুরু পর ফেরেন ৩০ রানে। বাকি দুই ম্যাচে তিনি মলিন। মিরাজকে আগে নামানোর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন জানিয়েছিলেন,  টপ অর্ডারদের ব্যর্থতা আর ডান-বাম সমন্বয় বিবেচনায় তাকে উপরে পাঠানো হয়। প্রধান কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক মিলেই নেনে এসব সিদ্ধান্ত তাও জানিয়েছিলেন তিনি।

টপ অর্ডার ব্যর্থতার যুক্তি না হয় মানা গেল। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে এসবের কোন সমীকরণই ছিল না। এদিন তো টপ অর্ডার ব্যর্থ হয়নি। তবু মিরাজকে চারে পাঠিয়ে কেন বুমেরাং করে দেওয়া হয় পরিস্থিতি? 

এদিন দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম এনেছিলেন দারুণ শুরু। বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাস সেরা উদ্বোধনী জুটির পর স্বাভাবিক ব্যাটিং অর্ডারে খেলাটাই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু ১১০ রানে ২ উইকেট পড়ার পর মিরাজ নামেন চারে। ওই সময় ১৩ বলে ৩ করে বাজে শটে বিদায় নেন। গত বছর দুয়েকে মিরাজের ব্যাটিংয়ের উন্নতি হয়েছে বটে। তবে জাসপ্রিট বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজদের মতো কোয়ালিটি বোলারদের বিপক্ষে তাকে মূল ব্যাটিং ভরসা ভাবার অবস্থা কি এসেছে?

যেখানে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম, তরুণ তাওহিদ হৃদয় বা মাহমুদউল্লাহর মতো ব্যাটার আছেন। তাদের আগে নিয়মিত মিরাজকে ব্যাট করতে পাঠানো প্রশ্নের জন্ম দেয়। বিশ্বকাপের আগে পাঁচে নিয়মিত ভালো করছিলেন হৃদয়। বিশ্বকাপে তাকে সাতে নামিয়ে করে ফেলা হয় দ্বিধাগ্রস্ত। হৃদয় এখন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। ছোট্ট ক্যারিয়ারে এরমধ্যে তিনি খেলে ফেলেছেন পাঁচটি আলাদা পজিশনে!

ভারতের বিপক্ষে বড় রানের ভিত নষ্টের পেছনে মিরাজকে আগে পাঠানোর দায়ও আছে। ৯৩ রানের উদ্বোধনী জুটির থামার পর শান্তও ফেরেন দ্রুত। ১১০ রানে ২ উইকেট পড়ার পর লিটন টানছিলেন দলকে। মাঝের ওভারে একাধিক বাউন্ডারি বের করে নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছিলেন তিনি। ওই সময় দরকার ছিল ক্রিজে চনমনে কারো উপস্থিতি, প্রচুর প্রান্ত বদল করলে লিটনের উপর চাপ তৈরি হতো না।

মিরাজ চারে নেমে থাকেন আড়ষ্ট, উল্টো চাপ বেড়ে যায়। মানসম্পন্ন পেস সামলাতে না পেরে কুপোকাত হন আলগা শটে। লিটনের ছন্দও তাতে নড়ে যায়। মুশফিকের মতো 'প্রপার' ব্যাটার কেউ তখন ক্রিজে থাকলে পরিস্থিতি হতে পারত ভিন্ন।

ব্যাটিং অর্ডারের এমন উলটপালট নিয়ে প্রকাশ্যে হতাশা জানানো সম্ভব নয়। ভারত ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া শান্তও তাই দেন নরম উত্তর, 'আমার মনে হয় সবাই নিজেদের ব্যাটিং পজিশন জানে। যদি জানা তাকে তাহলে ব্যাটিং পজিশনে কোন পার্থক্য হয় না।'

বিশ্বকাপের বাকি আছে আরও পাঁচ ম্যাচ। মিরাজকে আর কোন কোন পজিশনে খেলানো হবে তা কৌতূহলের।

Comments

The Daily Star  | English
Anti-Discrimination Students Movement

Students to launch a party by next Feb

Student leaders who spearheaded the July-August mass uprising are planning to launch a political party by early February 2025 and contest the next general election.

7h ago