ডেঙ্গুর টিকা তৈরিতে কাজ করছে ভারত বায়োটেক

ডেঙ্গুর টিকা আবিষ্কার নিয়ে কাজ করছে ভারতের অন্যতম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেক। একইসঙ্গে মশাবাহিত চিকুনগুনিয়ার টিকার তৃতীয় ট্রায়াল শেষে অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান 'ভারত বায়োটেক' কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদে ভারত বায়োটেক কারখানায় ভারত সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রতিনিধি দলকে এক প্রেজেন্টেশনে এসব তথ্য জানানো হয়।

ভারত বায়োটেক কর্তৃপক্ষ প্রেজেন্টেশনে জানায়, ডেঙ্গুর টিকা আবিষ্কার নিয়ে আমরা কাজ করছি। ডেঙ্গুর ভাইরাস খুবই জটিল। এদের ভ্যারিয়েন্টের খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। তাই এই ভাইরাস নিয়ে কাজ করাও কঠিন।

মশাবাহিত চিকুনগুনিয়ার টিকা আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে। চিকুনগুনিয়ার টিকা ও একইসঙ্গে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিসের টিকার তৃতীয় ট্রায়াল শেষে অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে জানিয়েছে ভারত বায়োটেক কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, ভারত বায়োটেকের কো-ফাউন্ডার ও এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান কৃষ্ণা এলা ভ্যাকসিন গবেষণায় বিপ্লব এনেছেন। বিশেষ করে করোনার কঠিন সময়ে অক্সফোর্ড, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্নার মতো ভ্যাকসিনের পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে কোভ্যাক্সিন আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দেয় ভারত বায়োটেক।

করোনা যখন একটু কমা শুরু করে, তখন নতুন গবেষণা করা হয়। হাতে ইনজেকশন পুশ করার ভীতিতে করোনার টিকা নেওয়া থেকে সরে যান অনেকে। ভারত বায়োটেক কর্তৃপক্ষ ভাবতে থাকে কীভাবে এটা দূর করা যায়। পরে ইন্ট্রানাসাল টিকা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় সংস্থাটি। ২০২২ সালে যেটা ব্যবহারের অনুমোদন মেলে। নাকে ড্রপের মাধ্যমে টিকা কার্যকর হওয়ায় সহজ হয় কোভিড মোকাবিলা।

এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে কীভাবে বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে ভারত বায়োটেক। শুধু তাই নয়, কীভাবে স্বল্প রিসোর্স ব্যবহার করে টিকা সাশ্রয়ী করা যায়, সে চেষ্টাও সবসময় থাকে বলে জানানো হয়।

ক্যানসার, ডায়াবেটিসের মতো রোগের টিকা নিয়েও কাজ করছে ভারত বায়োটেক। পশুর লাম্পি ডিসিজ, যা পক্সের মতো ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল ভারতে, গত কোরবানির ঈদের আগে বাংলাদেশেও ব্যাপক হারে ছড়ায় রোগটি। কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয় এ রোগে। সেই লাম্পি ভাইরাসের টিকাও প্রায় অনুমোদন পর্যায়ে এবং টিবি ভ্যাকসিনেরও ট্রায়াল চালাচ্ছে ভারত বায়োটেক। জিকা ভাইরাস নিয়ে গবেষণাও শেষ পর্যায়ে।

ভারত বায়োটেক কর্তৃপক্ষ জানায়, মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখি ও গাছের বিভিন্ন রোগের টিকা নিয়েও কাজ করছে তারা। ভারত কীভাবে সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করছে, তার উদাহরণ হতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশে তুলনামূলক কম মূল্যে টিকা দিচ্ছে তারা। ১৯৯৬ সালে ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের জেনম ভ্যালিতে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারত বায়োটেক।

আলু, পেঁয়াজসহ এমন যেকোনো খাদ্যপণ্যে যদি কোনো রোগ বিপর্যয় নিয়ে আসে, তাহলে সেটা রোধে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে ভারত বায়োটেক কাজ করছে বলেও জানানো হয়। করোনার মতো খাদ্যপণ্যের কোনো রোগ সামলাতে যেন কষ্ট কম হয়, সেজন্যই এ উদ্যোগ।

শিশুদের ডায়রিয়া রোধে রোটা ভাইরাসের টিকার ডোজ কমিয়ে আনা প্রসঙ্গে জানানো হয়, প্রথমে রোটা ভাইরাসের টিকা ছোট শিশুদের মুখে আড়াই এমএল পরিমাণ দিলে তারা মুখ থেকে বের করে দিতো। আর একবার বের করে দিলে ওই শিশুকে আর মুখে খাওয়ানোর এ টিকা দেওয়া যেত না।

ভারত বায়োটেক এটা নিয়ে কাজ শুরু করে, যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আইসিডিডিআরবির বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. ফিরদৌসী কাদরী। তারা রোটাভ্যাকের ডোজ আড়াই মিলি থেকে হাফ মিলিতে (দশমিক ৫০) নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। এতে যেমন পরিবহন খরচ, উৎপাদন খরচ সবই কমে, তেমনি শিশুদের ওপর কার্যকারিতা বেড়ে যায় মুখ থেকে বেরিয়ে না আসার কারণে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আট জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু এক হাজার ২১৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৩৫০ জন।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Over 102,000 annual deaths in Bangladesh linked to air pollution

Study also finds air pollution behind 266 million sick days every year hurting the economy

30m ago