নাটোরে পুলিশের সঙ্গে আসামি ধরার অভিযানে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী

ছবিতে হাতকড়া পরিহিত ময়েনের ডানপাশে কালো পোলো শার্ট পরিহিত তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গোলাম কিবরিয়া সেলিম। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরে পুলিশের সঙ্গে আসামি ধরার অভিযানে অংশ নিয়েছেন পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গোলাম কিবরিয়া সেলিম। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের সখ্যতা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

ভিডিও ও ছবিতে দেখা যাচ্ছে নাটোরের সন্ত্রাসী গোলম কিবরিয়া সেলিম এবং পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) এ জে মিন্টু মারামারি মামলার আসামি ময়েন উদ্দীনকে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন গোলাম কিবরিয়া সেলিমের কয়েকজন সহযোগী।

গত বৃহস্পতিবার নাটোরের শ্রমিকলীগ নেতা বাপ্পিকে মারধরের মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযানে যান এসআই এ জে মিন্টু এবং এসআই মো. আরিফুল ইসলাম। বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে ময়েনকে গ্রেপ্তার করেন তারা। এই ঘটনার ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে পুলিশের সহযোগী হিসেবে দেখা যায় গোলাম কিবরিয়া সেলিমকে।

বিষয়টি সামনে আসার পর এসআই আরিফুল ইসলামকে নলডাঙ্গা থানা এবং এসআই মিন্টুকে বাগাতিপাড়া থানায় বদলী করা হয়।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নাটোর থানার সামনে একদল নারী পুরুষ এসআই মিন্টু এবং এসআই আরিফকে 'মানবিক পুলিশ অফিসার' দাবি করে তাদের বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এসআই আরিফুল ও মিন্টুকে নাটোর থানা থেকে বদলির প্রতিবাদে মানববন্ধন। ছবি: বুলবুল আহমেদ/ স্টার

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক নাটোর জেলা শাখার সভাপতি আব্বাস আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আসামি ধরার এখতিয়ার শুধু পুলিশের। আসামি ধরতে কোনো সন্ত্রাসীর যাওয়ার ব্যাপারটা খুবই ভয়ঙ্কর। এটা সুশাসনের জন্য হুমকি। সন্ত্রাসী যদি আসামি ধরে আনে তাহলে পুলিশের কাজ কী?'

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা আলী বাবলু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নাটোর থানার ওসির সঙ্গে গোলাম কিবরিয়া সেলিমের ঘনিষ্ঠতা সবাই জানেন। পুলিশের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন যায়গায় আসামি ধরার অভিযানে যান। সন্ত্রাসীরা যদি আসামি ধরতে যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলার অবস্থা কি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।'

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়া সেলিম বলেন, 'সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমি পুলিশকে আসামি ধরতে সহযোগিতা করেছি। পুলিশের সঙ্গে বাপ্পীকে মারধরের আসামি ময়েনকে বাগাতিপাড়া থেকে ধরে নিয়ে এসেছি। আমি সাধারণ মানুষ, পুলিশ জনতা ভাই-ভাই। আমি আসামির খবর পেয়ে পুলিশকে ধরিয়ে দিয়েছি।'

মারামারির অভিযোগে গোলম কিবরিয়া সেলিমের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা থাকার কথা দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমীন নেলী।

অভিযোগের ব্যাপারে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ বলেন, 'মারামারি মামলার আসামি ময়েনকে বাগাতিপাড়া থেকে গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করেন এসআই এ জে মিন্টু এবং আরিফুল ইসলাম। এরপর আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে আসামি ধরার ছবি পাঠায়। আসামি ধরার ক্ষেত্রে তারা কার সহযোগিতা নিয়েছেন সেটা আমার জানা নেই। তারা যে অপরাধ করেছেন সেটার শাস্তি তারা পেয়েছেন।'

তবে গোলাম কিবরিয়া সেলিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

আসামি ধরতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) তারিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আসামি ধরার জন্য কোনো চিহ্নিত অপরাধীর সাহায্যের প্রয়োজন নেই পুলিশের। সমাজে অনেক ভালো মানুষ আছে পুলিশকে সাহায্য করার জন্য।'

তবে দুই এসআইকে বদলীর বিষয়টিকে পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ বলে দাবি করেন তিনি। তাদের বদলী ঠেকাতে কারা মানববন্ধন করল সে বিষয়ে খতিয়ে দেখে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দেন তিনি।

তবে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অভিযুক্ত এসআই এ জে মিন্টু ও আরিফুল ইসলাম ফোন ধরেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Govt yet to receive any letter from Tulip: Shafiqul

Tulip has written to Yunus as she wants to meet him in London to clear up a "misunderstanding" after corruption allegations made by the interim govt led her to resign from the UK government

1h ago