বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের প্রভাব কাটাতে শিশুকে যেভাবে সহায়তা করবেন

ছবি: সংগৃহীত

'বিচ্ছেদ' শব্দটি বেদনাবিধুর হলেও জীবনের প্রয়োজনে অনেক সময়ই সম্পর্কের ইতি টানা আবশ্যক হয়ে পড়ে। এই ইতি টানা তিক্ত জীবন থেকে স্বামী-স্ত্রীকে মুক্তি দিলেও সন্তানের জীবনে এর প্রভাব অনেকখানি।

এটা সত্যি যে, তিক্ত দাম্পত্য জীবন সন্তানের মানসিক সুস্থতায় এতটাই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যে, এরচেয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার তার জন্য ভালো। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও সত্যি যে, পৃথিবীতে যাদের ভালোবাসা ও নির্ভরতার আশ্রয়ে বেড়ে উঠে সন্তান, সেই বাবা-মায়ের আলাদা হওয়া মেনে নিতে তাদের কষ্ট হবে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য বিষয়টির সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়া কঠিন হতে পারে।

এই পরিস্থিতি যেন তাদের ভবিষ্যতের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। কীভাবে তাদের জন্য বিষয়টি একটু সহজ করা যায় সে বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের উপপরিচালক (মনোবিজ্ঞান) শুভাশীষ কুমার চ্যাটার্জি

সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের প্রভাব

বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের কারণে সন্তানের জীবনের গতিধারায় অনেক পরিবর্তন আসে। যেমন-বাবা না মা কার সঙ্গে থাকবে তা নিয়ে দ্বিধা, বাবা না মা কে বেশি ভালো তা নিয়ে মানসিক দ্বন্দ্ব। আবার অনেক সময় এই বিচ্ছেদের পেছনে শিশু সন্তানরা নিজেদের দায়ী করে থাকে।

শুভাশীষ কুমার চ্যাটার্জির বলেন, 'বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ কোনো সন্তানের জন্যই সুখকর সংবাদ না। কারণ তারা জন্মের পর থেকে এই ২ জন মানুষকেই সবচেয়ে কাছের বলে জানে। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান কিছুক্ষেত্রে বিচ্ছেদের বিষয়টি বেশ সহজভাবে গ্রহণ করলেও অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের জন্য এই সংবাদ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো।'

তিনি আরও বলেন, 'বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ শিশুদের মনে নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দেয়। আমি বাবার সন্তান নাকি মায়ের, এই ভাবনা থেকে তাদের মধ্যে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি হতে পারে। তবে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব হলো, অনেক সময় এই শিশুরা মানুষকে বিশ্বাস করতে পারে না। অবিশ্বাসের কারণে জীবনে সুখী হতে বেশ সমস্যা হয়।'

করণীয় কী

'বিচ্ছেদ হতে পারে' এই চিন্তা নিয়ে পৃথিবীতে কোনো মানুষ কখনো সম্পর্কে জড়ায় না। তা হোক বন্ধুত্ব কিংবা দাম্পত্যের সম্পর্ক। তবে ব্যক্তিগত সমস্যা অথবা পরিস্থিতির চাপে অনেক সম্পর্কই মাঝপথে ইতি টানতে হয়। বাবা-মা বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে অনেকেই সন্তানের সুখের কথা ভেবে সারাজীবন একসঙ্গে কাটিয়ে দেন। কিন্তু সংসারে অশান্তি, ঝামেলা, কলহ লেগেই থাকে। এই অবস্থায় সন্তানের মঙ্গলের চেয়ে অমঙ্গল হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

বিচ্ছেদের পর সন্তানের মানসিক ধাক্কা সামলে নিতে অভিভাবকদের কৌশলী হতে হয়, ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়। এক্ষেত্রে সন্তানের প্রতি বাবা-মা সবারই সমানভাবে মনোযোগী হওয়া জরুরি।

মনোবিদ শুভাশীষ কুমার চ্যাটার্জি সন্তানের মানসিক ধাক্কা সামলে নিতে অভিভাবকদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো হলো-

সন্তানের সামনে ঝগড়াঝাটি নয়

বিচ্ছেদের পর তিক্ততা তৈরি হলেও কোনো অবস্থাতেই সন্তানের সামনে ঝগড়াঝাটি করা উচিত নয়। এতে তারা ভয় পায়, নিজের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি হয়। অনেকে আবার এই ঝগড়ায় নিজেদের দোষী ভাবতে শুরু করে। কারণ অনেকক্ষেত্রে বাবা-মা কী নিয়ে ঝগড়া করছে তা বুঝতে পারে না।

কাউকে দোষারোপ করা যাবে না

বিচ্ছেদের পর অনেক বাবা-মা অন্য পক্ষের দোষ ও সমস্যা নিয়ে সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করেন। কেউ কেউ আবার তার পার্টনারকে প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করেন সন্তানের সামনে। ভুল যারই থাকুক, দিনশেষে সন্তান ২ জনের। তাই সন্তানের সামনে কাউকে ভিলেন হিসেবে উপস্থাপন করা যাবে না। এতে তাদের মনে হিংস্রতা, হতাশা, বিষণ্ণতা তৈরি হয়।

সময় দেওয়া

বিচ্ছেদ হলেও সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে ২ জনকেই। অবশ্যই বাবা-মা ২ জনকেই সন্তানের জন্য সময় বের করতে হবে। সম্ভব হলে মাঝেমাঝে দুজন একসঙ্গে সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন। এতে তাদের মন ভালো থাকবে।

বিচ্ছেদের কারণ বুঝিয়ে বলা

বিচ্ছেদের পর থেকেই সন্তানের মনে প্রশ্ন জাগে, কেন তারা অন্যদের বাবা-মায়ের মত সবসময় একসঙ্গে থাকতে পারল না। অনেকে আবার নিজস্ব মনোজগত তৈরি করে নিজেদের সেখানে দোষী ভাবা শুরু করে দেয়। অভিভাবকদের বোঝাতে হবে, সম্পর্ক ভাঙতে নয় বরং একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখতেই তারা আলাদা হচ্ছেন। এখনও তারা ভালো বন্ধু হিসেবে আছেন।

সৃষ্টিশীল কাজে ব্যস্ত রাখা

সন্তানের সুপ্ত প্রতিভার প্রতি মনোযোগী হোন। সে কোন সৃষ্টিশীল কাজের প্রতি বেশি আগ্রহী সেটি আবিষ্কার করে তাকে ওই কাজে ব্যস্ত রাখুন। এতে তার সময় ভালো কাটবে, পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসও বাড়বে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

4h ago