আমার স্বামী ছোট্ট বিষয়ে বিশ্রী সিচুয়েশন তৈরি করে ফেলেছেন: চ্যানেল আইকে এডিসি সানজিদা

এডিসি সানজিদা
পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে থানায় নিয়ে মারধরের ঘটনায় গত শনিবারের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হকের স্ত্রী পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে চ্যানেল আইয়ের ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।

এডিসি সানজিদা আফরিন বলেন, তার স্বামী আজিজুল হক এডিসি হারুন অর রশিদের গায়ে প্রথমে হাত তোলেন।

সাক্ষাৎকারের সানজিদা আফরিনের বক্তব্য দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য হুবহু প্রকাশ করা হলো।

সানজিদা বলেন, 'আসলে লাস্ট বেশ কিছু দিন থেকে আমার কিছু কার্ডিয়াক প্রবলেম হচ্ছিল। আমি ২০১৯ সাল থেকে হাইপার টেনশনের রেগুলোর মেডিসিন খাচ্ছি। শেষ চার-পাঁচ মাস ধরে প্রবলেমটা বেড়েও যায়। শেষ দুই-তিন সপ্তাহ ধরে চেস্ট পেইন বেড়ে যাচ্ছিল। যেহেতু সব দিন টাইম মেনেজ করা সম্ভব হয় না, লাস্ট শনিবার ব্যথাটা একটু বাড়ে। ওই দিন আমার মনে হলো, আজকে একটু ফ্রি সময় আছে, একটু টাইম ম্যানেজ করতে পারছি, তো আজকেই ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে কোনো ডক্টরকে দেখাতে চাচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'যেহেতু একটু আর্জেন্টও ছিল, চেস্ট পেইন বাড়ছিল। আমি ল্যাবএইড হাসপাতালে যে স্যারকে দেখাই তিনি দেশের বাইরে আছেন। ওই দিন আমার মনে হলো অফিস থেকে যাওয়ার পথে ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে কোনো ডক্টরকে দেখাতে পারি। ইমার্জেন্সি যেহেতু আমার একটা ডক্টর অ্যাপয়েনমেন্ট দরকার ছিল; ইব্রাহিম কার্ডিয়াক যে স্যারের জুরিসডিকশনে আছে, স্যারের পরিচিত। সে জন্য আমি স্যারকে একটু...যে স্যারকে নিয়ে কথা হচ্ছে, স্যারকেই আমি বলি যে, আমাকে একটা সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেওয়া সম্ভব কি না? তখন স্যার ওসির মাধ্যমে একটা সিরিয়াল ম্যানেজ করে দেন।'

'সন্ধ্যা ৬টার পরে সিরিয়াল ছিল। আমি সেই হিসাবে সন্ধ্যা ৬টার পরে যাই ওখানে কিন্তু যাওয়ার পরে জানতে পারি যে (ডক্টর) স্যার কোনো একটা কনফারেন্সে আছেন। যেহেতু আমার একটু আর্জেন্ট দরকার ছিল, আমি স্যারকে ইনফর্ম করি, ডক্টর কনফারেন্সে আছেন, উনি আজকে দেখবেন না। আমার আর্জেন্ট দরকার ছিল, অন্য কাউকে ম্যানেজ করা যায় কি না। স্যার খুব সম্ভবত আশে পাশেই ছিলেন। তিনি বলেন, ঠিক আছে, আপনি বসেন। আমি এসে দেখি কথা বলে কাউকে ম্যানেজ করা যায় কি না। বেশ কিছুক্ষণ পর স্যার আসেন। এসে উনাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ডক্টর একজন ম্যানেজ হয় এবং আমি ডক্টরকে দেখাই,' বলেন সানজিদা।

ডাক্তার তাকে বেশ কিছু টেস্ট দিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমি ব্লাড টেস্ট করিয়েছি। ইকো করানো হয়েছিল, ইসিজি করানো হয়েছিল। যে সময় ইনসিডেন্ট সে সময় আমি ইটিটি করাচ্ছিলাম। ইটিটি রুমেই ছিলাম। ইটিটিতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়, ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মতো। ইটিটি যখন শেষ পর্যায়ে ওই সময় আমি রুমের বাইরে হট্টগোলের শব্দ শুনতে পাই। খুব চিৎকার-চেঁচামেচি হচ্ছে। প্রথম যে সাউন্ডটা আমার কাছে আসে, সেটা হলো স্যারই (এডিসি হারুন) চিৎকার করে বলছিলেন, ভাই, আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না।'

'আমার প্রথমে ধারণা হয়েছিল, হতে পারে ওখানে অন্য কারো সঙ্গে ঝামেলা বা কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই যে, আমার স্বামী...উনি আসলে কেন গিয়েছেন, কী করছেন, আমি আসলে জানি না। উনাকে টোটালি আউট অব মাইন্ড লাগছিল এবং উনি খুবই উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন। ওনার সঙ্গে বেশ কয়েকজন ছেলেও ছিল। আমি আসলে তাদের চিনি না,' বলেন তিনি।

সানজিদা বলেন, 'স্যারকে (এডিসি হারুন) এক রকম মারতে মারতে এবং টেনে-হিঁচড়ে ওই রুমটাতে (পরীক্ষা কক্ষে) নিয়ে আসেন। রুমটার ভেতর নিয়ে আসলেন যখন তারা স্যারকে (এডিসি হারুন) মারছিলেন। এক পর্যায়ে স্যার অনেকটা তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইটিটি রুমের এক কোণায় গিয়ে দাঁড়ালেন। ওই সময় আনফরচুনেটলি (দুর্ভাগ্যবশত), আমার হাসব্যান্ড ওই ছেলেগুলোকে বলছিলেন, তোরা এই দুই জনের ভিডিও কর।'

'আমি তখন ইটিটির পোশাকে ছিলাম। আপনারা জানেন যে, ইটিটির পোশাক কী রকম থাকে। গায়ে বিভিন্ন রকম তার লাগানো ছিল। স্বাভাবিকভাবে পোশাকটি খুব শালীন অবস্থায় ছিল না। আমি হাসব্যান্ডের সঙ্গে শাউট করছিলাম, এই রুমের ভেতরে তো কোনো ছেলে ঢোকার কথা নয়। আপনি ঢুকেছেন, এতগুলো লোক নিয়ে কেন ঢুকেছেন? আবার আপনি এদের বলছেন ভিডিও করার জন্য। তো আমি যখন শাউট করছিলাম, তখন উনি আমাকেও দুই-তিনটি চড় মারেন,' বলছিলেন সানজিদা।

তাকেও মারধর করা হয়েছে জানিয়ে সানজিদা বলেন, 'পরিস্থিতিটা এ রকম দাঁড়িয়ে যায়, আমার ড্রাইভার (গাড়িচালক) ছুটে আসে। মাঝখানে দাঁড়ায়। ড্রাইভারের ওপর দিয়ে আমার গায়ে হাত তোলা হয়। একটা পর্যায়ে ওরা যারা ভিডিও করছিল, একটা ছেলে। আমি ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। ওর সঙ্গেও আমার একটু হাতাহাতি, ও রকম একটা সিচুয়েশন (পরিস্থিতি) তৈরি হয়ে যায়। কারণ আমি কোনো অবস্থাতেই চাচ্ছিলাম না, আমি ওই পোশাকে আছি, আমি একজন মহিলা, এই অবস্থায় তারা আমার ভিডিও করুক।'

'পরবর্তীতে আমার যেটা মনে হলো, তাদের ইনটেনশন (উদ্দেশ্য) ছিল, স্যার তো বাইরে ওয়েট করছিলেন। জাস্ট আউট অব কার্টেসি, আমি তার কলিগ, অসুস্থ কলিগ। তিনি ওই হিসেবেই বাইরে ওয়েট করছিলেন। তাদের ইনটেনশন দেখে মনে হয়েছিল যে, তাঁরা দুজনকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে একটা ভিডিও করতে চাচ্ছেন। যেটা হয়তো পরবর্তীতে তাঁরা ইউজ (ব্যবহার) করবেন, অবশ্যই কোনো একটা অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য,' যোগ করেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে এডিসি সানজিদা বলেন, 'ওরা আসলে ভিডিও করছিল। যাকে আহত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। আমি ওর হাত থেকেও বেশ কয়েকবার ক্যামেরা নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। স্যার যেহেতু আমার পাশেই, ট্রেডমিলের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন নিজের সেফটির জন্য, ওরা আমার গায়ের ওপর দিয়ে গিয়ে উনাকে মারার চেষ্টা করছিল।'

তিনি বলেন, 'স্বাভাবিকভাবেই আমি আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে শাউট করছিলাম যে, এটা আসলে কোনো সিচুয়েশনই ছিল না। উনি এই জিনিসটাকে, ছোট্ট একটা বিষয়কে এ রকম বিশ্রী একটা সিচুয়েশন তৈরি করে ফেললেন। উনি জানতে চাচ্ছিলেন, আমি অসুস্থ। উনার সঙ্গে আমার এসব নিয়েই কথা হচ্ছিল। আমি আসলে শাউট করছিলাম দেখে উনি আমার ড্রাইভারের ওপর দিয়ে গিয়ে আমার গায়ে হাত তোলেন। স্যারকে ওখান থেকে বের করার চেষ্টা করছিলেন। স্যার বলছিলেন, আমাকে এখান থেকে বের করে আপনারা মেরে ফেলবেন। খুব বাজে একটা সিচুয়েশন ছিল।'

'স্যার তখন বললেন, আমি থানার ফোর্স আসতে বলেছি। ওরা আসলে তার পরে আমি বের হবো। এর মধ্যে হাসপাতালের সিকিউরিটি যারা ছিলেন তারা এসেছিলেন। তারা আসার পরে স্যার ওখানেই কিছুক্ষণ অবস্থান করলেন, অবশ্যই নিজের সেফটির জন্য। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে থানা থেকে ফোর্স এসেছিল। তার পরে তারা নিচে যায়। আমার বডিগার্ডও ব্যথা পেয়েছিল। তার সঙ্গে যে ছেলেগুলো ছিল, তারা আমার বডিগার্ডের গায়ে হাত তুলেছিল। আমার গায়েও হাত তুলেছিল,' বলেন তিনি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বরখাস্ত অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন-অর-রশীদকে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে মারধরের ঘটনায় গতকাল সোমবার সাময়িক বরখাস্তের পর তাকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

2h ago