পায়রা বন্দর

অক্টোবরে প্রথম টার্মিনাল চালুর সম্ভাবনা, শুরু হবে সড়কপথে পণ্য পরিবহন

পায়রা বন্দর
আগামী অক্টোবরের মধ্যে পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল চালু হতে যাচ্ছে। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল চালু হতে যাচ্ছে আগামী অক্টোবরের মধ্যে। এর ফলে মাদার ভেসেল থেকে সড়কপথে বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন শুরু হবে। টার্মিনালটি চালু হলে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।

চলতি বছর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পর মাদার ভেসেলগুলো পায়রা বন্দরের পাশের পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটি ব্যবহার শুরু করে।

এ বিষয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ট্রাফিক) আজিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্দরের প্রথম টার্মিনালে পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দিনরাত কাজ করছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।'

তিনি আরও বলেন, 'রাবনাবাদ চ্যানেলের চারিপাড়ায় এ টার্মিনালে একই সঙ্গে ২০০ মিটারের তিনটি মাদার ভেসেল ভেড়ানোর সক্ষমতা থাকবে। এ ছাড়া, ৬৫০ মিটার দীর্ঘ মূল টার্মিনাল, তিন লাখ ২৫ হাজার বর্গমিটার ব্যাকআপ ইয়ার্ড ও ১০ হাজার বর্গমিটার সিএফএস সুবিধা থাকছে এতে।'

এ বন্দরে আরও দুটি টার্মিনাল নির্মাণাধীন আছে বলেও জানান তিনি।

পায়রা বন্দর
পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

'প্রথম টার্মিনাল থেকে সড়ক পথে আন্ধারমানিক নদীর ওপর সেতু দিয়ে আপাতত পণ্য পরিবহন করা হবে। তবে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য খুব শিগগিরই ওই নদীতে ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে। এ ছাড়াও, নদীর ওপর ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সড়কপথে পণ্য পরিবহনের জন্য টার্মিনালের সঙ্গে ছয় লেনের ৬ দশমিক ৩৫০ কিলোমিটার সড়কের কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। আন্ধারমানিক নদীতে এক দশমিক ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল, ছয় লেন সড়ক ও চার লেন সেতু নির্মাণসহ এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৫১৬ কোটি টাকা।

জানা গেছে, পায়রা বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষে গত ২৬ মার্চ দেশের গভীরতম চ্যানেলটি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে বিদেশি ড্রেজিং কোম্পানি জান ডি লুন। এর পর থেকে বন্দরের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ভিড়তে শুরু করে ১০ দশমিক ৫০ মিটার ড্রাফটের পণ্যবাহী জাহাজ।

বন্দরের ইনার-আউটার বারে মার্কিং ও বয়া বাতি বসানো হয়েছে। ইনার বারে ১৫টি জাহাজ রাখা যাবে। সেখানে লোডিং-আনলোডিং কার্যক্রম চলবে।

বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বেশ কয়েকজন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বন্দরের কনফারেন্স রুমে ওই সভায় বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফ্রেইড ফরোয়ার্ডস অ্যাসোসিয়েশন ও বন্দরের সীমানার মধ্যে ঘাটগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বন্দর ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজের মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ মোহাম্মদ (মিঠু) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বরিশাল, ভোলা ও ঢাকার আমদানিকারকদের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এসব এলাকার বড় বড় আমদানিকারকদের উৎসাহিত করতে পারলে পায়রা বন্দর ব্যবহার করে তারা পণ্য নিয়ে আসবেন। এর ফলে বন্দরের কার্যক্রমে যেমন গতি আসবে, তেমনি আর্থিকভাবেও বন্দর লাভবান হবে।'

পায়রা বন্দর
এগিয়ে চলছে পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল চালুর প্রস্তুতির কাজ। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পায়রা বন্দরের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সফলভাবে ৩৩৯টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ, এক হাজার ৪৫৯টি দেশীয় লাইটারেজ জাহাজসহ মোট এক হাজার ৭৯৮টি জাহাজের অপারেশনাল কার্যক্রম শেষ করেছে। এ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ ৯১৩ কোটি ১৯ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৭২ টাকা রাজস্ব আয় করেছে।

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল গোলাম সাদেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পায়রা একটি অপারেশনাল বন্দর হিসেবে কাজ শুরু করেছে। এ বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই সিমেন্টের কাঁচামালসহ নানান পণ্য নিয়ে আসছেন। দিন দিন পায়রা বন্দরের কার্যক্রম বাড়ছে। বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পায়রা বন্দর পূর্ণাঙ্গ বন্দরে পরিণত হলে আমরা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা দিতে পারব।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা মনে করি, পায়রা বন্দর হলো স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট বন্দর। আমাদের এখন স্লোগান হচ্ছে 'পায়রা বন্দর আগামীর বাংলাদেশ।'

২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সমুদ্র বন্দরের ফলক উন্মোচন করেন। এরপর ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট বন্দরের আনুষ্ঠানিক পণ্য খালাস কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে বন্দরের প্রথম টার্মিনাল, ইয়ার্ড ও সংযোগ সড়কসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলমান আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Palak admits shutting down internet deliberately on Hasina's order

Former state minister for ICT Zunaid Ahmed Palak has confessed to shutting down the internet nationwide deliberately during the July mass uprising on former prime minister Sheikh Hasina’s orders. .His testimony was recorded by ICT’s investigation agency following a questioning session held

6m ago