বাংলাদেশে ফ্রান্সের বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনা

বাংলাদেশে ফ্রান্সের বিনিয়োগ

সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্টে এমানুয়েল মাখোঁর সরকারি বাসভবন থেকে জানা গেছে যে, ফ্রান্স বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ ও অ্যারোনটিকসসহ কয়েকটি কৌশলগত প্রকল্পে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করতে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের উপায় খুঁজতে ঢাকায় এসেছেন বলে সরকারি বাসভবন এলিসি প্রাসাদ থেকে জানানো হয়েছে।

গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্টের বাসভবনের এক কর্মকর্তা ব্রিফিংয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন যে, ফ্রান্স এখন বাংলাদেশকে কতটা ভিন্নভাবে দেখছে।

ওই কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশ বিপুল জনসংখ্যা, জলবায়ু পরিবর্তন ও রোহিঙ্গা সংকটসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। তবুও দেশটি গত ১০-১৫ বছরে উল্লেখযোগ্য আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এসব চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে বাধা দেয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা "স্মার্ট বাংলাদেশ" নামে বিস্তৃত উন্নয়ন কর্মসূচি গড়ে তুলেছেন। তিনি কৌশলগত মিত্র ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন এবং নতুন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করছেন। তিনি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের অংশ হতে চান।'

এলিসি প্রাসাদ বাংলাদেশকে আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিক থেকে একটি 'মডেল রাষ্ট্র' হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছে—দেশটির ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ। এটি ঋণদাতাদের চাপে সংকুচিত নয়। যেমনটি দেখা যাচ্ছে কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের শক্ত অর্থনৈতিক ভিত্তি, অপার সম্ভাবনা ও ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবণতা আছে।

সূত্রটি আরও জানায়, '২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৩০টি বৃহৎ অর্থনীতির একটিতে পরিণত হওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে।'

এই প্রেক্ষাপটে ফ্রান্স বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে চায়। যেসব খাতে ফ্রান্স শক্তিশালী সেসব খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে চায়।

ফরাসি মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থালেস ইতোমধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাডার ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ করছে। একই প্রতিষ্ঠান ২০১৮ সালে উৎক্ষেপণ করা বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তৈরি করেছিল।

ফ্রান্স থেকে আরেকটি স্যাটেলাইট কেনার বিষয়ে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড চেষ্টা করছে। এয়ারবাসের কাছ থেকে ১০টি বিমান কেনার বিষয়েরও চেষ্টা চলছে।

২০২১ সালে শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের সময় ২ দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে লেটার অব ইনটেন্ট সই করে।

অ্যারোনটিকস ছাড়াও ফ্রান্স বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।

প্যারিসের কূটনৈতিক সূত্রটি আরও বলেন, 'আমরা চাই এই সফর বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা নিয়ে আলোচনা ত্বরান্বিত করুক। এরপর প্রয়োজনগুলো চিহ্নিত করতে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক হবে।'

বিকল্পগুলোর মধ্যে আছে পারমাণবিক শক্তি, সৌর শক্তি ও জলবিদ্যুৎ। জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা বেশি আছে। এলিসি প্রাসাদের ব্রিফিংয়ের কথা উল্লেখ করে সূত্রটি আরও বলেছে, বাংলাদেশে সৌর শক্তির সম্ভাবনাও আছে।

সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কমাতে সহায়তার জন্য ফরাসি উদ্যোগের অংশ হিসেবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ফরাসি সংস্থা এজেন্সি ফ্রাঁসেজ ডি ডেভেলপমেন্টের (এএফডি) প্রতিশ্রুতি বহুগুণ বেড়ে দুই বিলিয়ন ইউরোতে দাঁড়িয়েছে। আগামী তিন বছরে এএফডি প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ইউরো দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আরও জানা গেছে যে, মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি ফ্রান্স রোহিঙ্গা ও অন্যান্য ইস্যুতে বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায়।

প্যারিসের কূটনীতিকের দাবি, ফ্রান্স এখন তার বৃহত্তর ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এমনকি রাশিয়ার চাপের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও ফ্রান্সের দিকে তাকিয়ে আছে।

তিনি মনে করেন, 'এই অঞ্চলে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র হওয়ার জন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছা সত্যিই বাংলাদেশের আছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Exporters to get Tk 108.5 for a dollar from Aug 1

Taka gains against dollar after several years

Taka gains ground as dollar influx rises, strengthening currency after years

2h ago