এবার ‘সৌন্দর্যবর্ধনে’ গাছ কাটছে খুলনা সিটি করপোরেশন

সোনাডাঙ্গা-মুজগুন্নি সড়কের বিভাজকের অন্তত ২৫টি গাছ ইতোমধ্যে কেটে ফেলেছে সিটি করপোরেশনের নিয়োজিত শ্রমিকরা। খালিশপুর নতুন রাস্তার বিভাজকে কেটে ফেলা একটি গাছের গোড়া। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

মুজগুন্নি মহাসড়কের ডিভাইভারে লাগানো গাছ কেটে ফেলছে খুলনা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ওই সড়কের বিভাজকের অন্তত ২৫টি বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যক্তি উদ্যোগে লাগানো কিংবা সিটি করপোরেশনের লাগানো গাছ বড় হয়ে সড়ক ডিভাইডার ভেঙে যাচ্ছে, তাই সব গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।

তবে এই বিভাজকে নতুন করে সৌন্দর্যবর্ধক গাছ লাগানো হবে বলে জানিয়েছে তারা। ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে পর্যায়ক্রমে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হবে।

আজ বুধবার সিটি করপোরেশনের নিয়োজিত শ্রমিকদের সড়ক বিভাজকের গাছ কাটতে দেখা যায়। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

আজ বুধবার সকালে মুজগুন্নি মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, ১২-১৩ জন শ্রমিক গাছ কাটছেন। তারা জানান, সিটি করপোরেশন নয় বরং স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। কাউন্সিলরের নির্দেশেই গাছ কাটা হচ্ছে।

শ্রমিকদের একজন ইসমাইল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুনেছি বড় সব গাছ কেটে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ঝাউ গাছ লাগানো হবে। নতুন রাস্তার মোড় থেকে কালভার্ট পর্যন্ত অংশের গাছগুলো সব কেটেছি। পরে এই সড়কের অন্য অংশের গাছ কাটা হবে।'

তবে মোট কতগুলো গাছ কেটেছেন তা তিনি বলতে পারেননি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিএল কলেজের সাবেক শিক্ষক ইকবাল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকালে এই পথে আমরা মর্নিং ওয়াক করি। গাছগুলো দেখে ভালো লাগে। কেন গাছগুলো কাটল ঠিক বুঝতে পারছি না। পরিবেশের যে অবস্থা তাতে খুব বেশি অসুবিধা না হলে গাছ না কাটা উচিত। বরং আমাদের আরও বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে।' 

তিনি বলেন, 'সকালে গাছগুলো কাটছে দেখে খারাপ লাগল, শ্রমিকদের কাছে জিজ্ঞাসা করে জানলাম সিটি করপোরেশন নিজেই কাটছে। গাছগুলো চোখের সামনে ৫-৬ বছর ধরে দেখছি। এখন একদম ফাঁকা।'

সরেজমিনে দেখা গেছে, খুলনা সোনাডাঙ্গা-মুজগুন্নি সড়কের নতুন রাস্তার মোড় থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত ৪০০ মিটার অংশের গাছ কাটা হয়েছে। 

সড়কে সারি ধরে থাকা এসব ছোট গাছও কেটে ফেলার পরিকল্পনা করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

এই অংশে কতগুলো গাছ ছিল তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে মাঝারি ও বড় গাছের কাটা অংশ পাওয়া গেছে ২৫টির বেশি। শ্রমিকরা গাছগুলো গোড়া থেকে কেটে সড়কের পাশে নিয়ে ডাল ছেঁটে আলাদা করে ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকদের কেউ কেউ কোদাল দিয়ে কাটা অংশের গোড়া মাটি দিয়ে সমান করছে। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) খুলনার সমন্বয়কারী বাবুল হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গাছ কেটে নতুন করে গাছ লাগানো এক ধরনের প্রহসন, অর্থ লোপাটের ব্যবস্থা করা। এই গাছ যদি কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে লাগিয়ে থাকেন তাতে অসুবিধা কোথায়? মহাসড়কের ডিভাইডারে লাগানো ছোট ছোট গাছগুলো ছায়া দিত।'

'কেটে ফেলা গাছগুলোর মধ্যে একটি বটগাছের ছবি এখনো চোখে ভাসছে আমার,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'উন্নয়ন সবসময় পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত। রাস্তার দোহাই দিয়ে, ডিভাইডার ভালো রাখার অজুহাত দিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের এই গাছ কাটা ঠিক হচ্ছে না।'

গাছ কাটার বিষয়ে মন্তব্য জানতে সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিভাজক ভেঙে যাচ্ছে দেখে বড় বড় গাছ কাটা হচ্ছে। ছোট ও নিমজাতীয় গাছের মতো প্রয়োজনীয় গাছ কাটা হচ্ছে না।'

গাছ কেটে সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মেয়রের আদেশে এসব গাছ কাটা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।'

জানতে চাইলে খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিভাইডারের বড় গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে কারণ এগুলোর জন্য ডিভাইডার ফেটে যাচ্ছে। তাছাড়া এই গাছগুলো লাগানো হয়েছে ব্যক্তি উদ্যোগে। কেন তারা সড়ক ডিভাইডারে গাছ লাগাবে?'

'ইচ্ছামতো তো এখানে গাছ লাগানো যাবে না। এই ডিভাইডার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের মতো করে গাছ লাগাবে,' বলেন তিনি।

এর আগে চলতি বছরের মে মাসে রাজধানী ঢাকায় 'সৌন্দর্যবর্ধনের' কথা বলে ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কের গাছ কেটে ফেলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। 

 

Comments

The Daily Star  | English

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

1h ago