গাজীপুর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র

চিকিৎসক নেই, বন্দিদের চিকিৎসাও নেই

গাজীপুর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র
টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বর্তমানে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র। ছবি: স্টার

গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে এক সময়ের 'শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র' বর্তমানে 'কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র' নাম নিয়েছে। তবে এখানকার বন্দি কিশোরদের চিকিৎসার জন্য বর্তমানে নেই কোনো চিকিৎসক। এখানকার বন্দিদের কেউ অসুস্থ হলে তাদের পাঠানো হয় টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে ৫ দশমিক ৩৪ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত এ কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে সরকার অনুমোদিত বন্দি ধারণক্ষমতা ২০০।

তবে সেখানে এখন ৭২৭ কিশোর বন্দি আছে। কিন্তু, তাদের চিকিৎসায় নেই কোনো চিকিৎসক, কমপাউন্ডার বা নার্স।

কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক এহিয়াতুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে চিকিৎসক না থাকায় কোনো বন্দি অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।

তিনি বলেন, 'এখানে একজন কমপাউন্ডার ছিলেন। তিনি সম্প্রতি জামালপুরে বদলি হয়েছেন। কমপাউন্ডার ও নার্সের পদ ২টি খালি আছে।'

চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসক ও নার্সের পাশাপাশি এখানে আরও আবাসন ভবন দরকার বলে মনে করেন তিনি।

এই কেন্দ্রে বন্দি কিশোর মুহিতের ভাই মহিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানকার বন্দিদের মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসা সেবায় আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। অথচ এখানে কোনো চিকিৎসাসেবাই নেই।'

গত ২৮ জুন বিকেলে জামিনে মুক্তি পায় নারায়ণগঞ্জের রফিকুল ইসলামের ছেলে আল আমীন। রফিকুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ছেলে যে কক্ষে ছিল সেখানে একটি কক্ষে ১০ জন থাকত। ছেলেটা বলেছে যে জ্বর-ঠাণ্ডা হলে কোনো চিকিৎসা নেই।'

'পানি খাওয়া যায় না। খাবার পানিতে দুর্গন্ধ। গোসলের পানি নোংরা। নোংরা পানিতে গোসল করে তার শরীরে ঘা হয়েছে। আমার ছেলের সঙ্গে আরও যারা জামিনে বের হয়েছে সবার শরীরে ঘা হয়েছে,' বলেন তিনি।

গত ২৪ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টঙ্গী কিশোর উন্নয়নের বন্দি কিশোর রাকিবের মৃত্যু হয়। তার পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসা পেতে দেরি হওয়ায় রাকিব মারা গেছে

এর আগে গত জুনে এক কিশোর মারা যায় এই উন্নয়ন কেন্দ্রে।

টঙ্গী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মীরা ডেইলি স্টারকে জানান, অতিরিক্ত বন্দিদের জন্য এখানে অবকাঠামো নির্মাণ জরুরি। তারা চিকিৎসক-নার্সসহ একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালেরও দাবি জানান।

তারা আরও জানান, এখানে বন্দিদের ৩ বেলা খাবার রান্না করে পরিবেশন করা হয়। বিকেলে নাস্তাও দেওয়া হয়। ২ বাবুর্চি এসব রান্না করেন।

এই কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ এহিয়াতুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে বন্দি শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে প্রশিক্ষণসহ নানান ব্যবস্থা আছে।'

তিনি জানান, বন্দিদের মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে প্রতি ফ্লোরের বন্দিদের খেলতে দেওয়া হয়। ফ্লোরে দাবা, ক্যারাম ও লুডুর ব্যবস্থা আছে।

সেলাই, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স, অটোমোবাইলের কাজ শেখানোর ব্যবস্থা আছে এই কেন্দ্রে।

এহিয়াতুজ্জামান আরও বলেন, 'চলতি বছর এই প্রতিষ্ঠানের ২ বন্দি মারা গেছে। পাঁচ তলা ও দোতলা ভবনে বন্দিরা থাকে। অনুমোদিত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ ৬৩টি। বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩১ জন। একটি প্রকল্পের আওতায় কর্মরত আছেন ৭ জন।'

প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তায় ৫৫ আনসার সদস্য কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।

গাজীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই কেন্দ্রের কোনো বন্দি অসুস্থ হলে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার ডাক্তাররা কিশোর উন্নয়নের রোগী দেখলে অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেন। আমরা সিভিল সার্জন অফিস থেকে ডাক্তার চেয়ে আবেদন করব।'

'কাশিমপুর কারাগারের মতো এখানেও সিভিল সার্জন অফিস থেকে ডাক্তার এসে যেন রোগী দেখতে পারেন সে ব্যবস্থা করব,' বলেন তিনি।

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দিদের চিকিৎসার বিষয়ে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে আরএমও ভালো বলতে পারবেন।'

এ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) তারিক হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের রোগী আমাদের এখানে আনা হলে আমরা চিকিৎসা দিই। প্রয়োজনে তাদের ভর্তিও করা হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Stay alert against conspiracies: Fakhrul

BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir today urged all to stay alert, warning that conspiracies are underway to once again plunge Bangladesh into new dangers

49m ago