ডেঙ্গুর প্রকোপ: আগস্টের আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ২০২২ সালকে
চলতি মাস শেষ হতে ৩ দিন বাকি থাকলেও গত বছরের মোট আক্রান্তের তুলনায় এই বছর শুধুমাত্র আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার নতুন করে ২ হাজার ৩২৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এতে করে এ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৬৭৯ জনে।
গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২ হাজার ৩৮২ জন।
এর পাশাপাশি, আগস্টে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৯৭ জন। গত বছর ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪৮ জনে এবং আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫১১ জনে।
পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এডিস মশা নিধন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বছর সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীন আচরণকে দায়ী করছেন তারা।
কীটতত্ববিদ জি এম সাইফুর রহমান বলেন, মৌসুমের শুরুতে সিটি করপোরেশনের উদাসীনতার কারণে ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশার প্রজনন বেড়েছে।
গত বছরের অক্টোবরের পর যখন এডিস মশার সংখ্যা কমে যায়, তখন সবটা নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যার জন্য এটি আবার ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এছাড়াও, এই বছরের শুরুতে ভাইরাস-ছড়িয়ে পড়া এসব মশা শনাক্তে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সারা বছরই বাংলাদেশ ডেঙ্গু প্রবণ হয়ে উঠেছে।
সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে এক সরকারি জরিপে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে গাজীপুরের ১ হাজার ৫০টি বাড়ির মধ্যে ১৫০টি এবং নারায়ণগঞ্জের ৭০৫ টি বাড়ির মধ্যে ৯৫টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে।
গত ২৩ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত গবেষকরা গাজীপুর শহরের ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪১টি এবং ৩০ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের ২৭টি ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন।
জরিপের নেতৃত্ব দানকারী ডিএইচজিএসের সাবেক প্রধান কীটতত্ত্ববিদ মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, দুই শহরে এডিসের ঘনত্ব বেশি এবং অব্যাহত বৃষ্টিপাতে আরও প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হবে।
দুই শহরেই পানির অভাবের কারণে বাসিন্দারা বালতি বা বড় পাত্রে পানি ধরে রাখেন। এই পাত্রগুলি প্রায়শই এডিস মশার জন্য আদর্শ প্রজনন স্থান হয়ে ওঠে, বলেন তিনি।
কবিরুল বাশারের মতে, রাজধানীর বাইরে এডিস নিয়ন্ত্রণে যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা খুবই অপ্রতুল।
তিনি বলেন, 'ঢাকার তুলনায় এডিস নিয়ন্ত্রণে সরকার এবং ওই দুই নগরবাসী তেমন মনোযোগ দেয়নি।'
কীটতত্ত্ববিদ সাইফুর রহমান বলেন, জেলা শহরগুলোতে যথাযথ নজরদারির অভাব এ বছর একটি বড় ব্যর্থতা।
ডেঙ্গু হটস্পট চিহ্নিত করতে অবশ্যই সরকারের কার্যকর নজরদারি থাকতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ, কমিউনিটি সংস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে এক্ষেত্রে যুক্ত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এবং বাসিন্দারা সচেতনতা তৈরি, ঘর পরিষ্কার করা এবং সম্ভাব্য প্রজনন ক্ষেত্র নির্মূল করার মাধ্যমে মশার উপদ্রব রোধে দায়িত্ব ভাগ করে নিতে পারেন।
গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং এ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৩২৭ জন।
Comments