ডেঙ্গু: জুলাইয়ের শুরুতেই আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী

ছবি: স্টার

জুলাইয়ের প্রথম চারদিনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত এক হাজার ৩৬৪ জন, যেখানে পুরো জুনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৯৫১। জুলাইয়ের শুরুতেই আক্রান্তের এই সংখ্যা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ২০৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৬০ জনে এবং মারা গেছেন ৪৫ জন।

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে সামনে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান।

'পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে এবং সরকারও প্রস্তুত রয়েছে', বলেন তিনি।

গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে ডা. সাইদুর রহমান এই কথা বলেন। অনুষ্ঠানে চীন বাংলাদেশকে 'ডেঙ্গু কম্বাইন্ড কিট' হস্তান্তর করে।

ডা. সাইদুর বলেন, 'চিহ্নিত হটস্পটগুলোতে আমরা সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছি। আমরা প্রস্তুত। তবে ডেঙ্গু আরও ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়তে পারে। মানুষ যদি আমাদের পরামর্শ মেনে চলে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।'

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সাধারণ ফগিংয়ের চেয়ে লার্ভিসাইড ব্যবহার ও প্রজননস্থল ধ্বংস করার ব্যাপারে সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ ফগিং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকর নয়।

তিনি বলেন, 'শুধু নিশ্চিত হটস্পট এলাকাতেই ফগিং করা উচিত। সার্বক্ষণিকভাবে এর ওপর নির্ভর করা একটি ভুল কৌশল।'

লার্ভিসাইডের পাশাপাশি তিন মাস পর্যন্ত ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর (আইজিআর) ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি, মশার বংশবৃদ্ধি ঠেকাতে পানি জমে থাকা পাত্র পরিষ্কার ও উল্টে রাখার আহ্বান জানান অধ্যাপক কবিরুল।

জনসচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ তিনি বলেন, 'প্রজননস্থল ধ্বংসে জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।'

দেশের ৬৪ জেলায় আগের বছরের তুলনায় ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসক, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলো যাতে জরুরি ভিত্তিতে মশার লার্ভা ও প্রজননস্থল ধ্বংস করে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সেই নির্দেশনা দিতে আহ্বান জানান তিনি।

এই কীটতত্ত্ববিদ আরও বলেন, মন্ত্রণালয় যেন ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর সরবরাহ করে কিংবা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সঠিক নির্দেশনার মাধ্যমে তা সংগ্রহ ও ব্যবহার করার অনুমতি দেয়।

কীটতত্ত্ববিদ জিএম সাইফুর রহমানও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এডিস মশার দ্রুত বৃদ্ধিই আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ার কারণ। একবার সংক্রমিত হলে মশাগুলো সংক্রমিত ডিম পাড়ে, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে।

মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষায়িত বিভাগ গঠনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'এই বিভাগটি ক্লাস্টার শনাক্তকরণ, নজরদারি ও লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নেবে। একটি কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি ছাড়া বর্তমান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh garment exports face US tariff hike

Can Bangladesh retain its foothold in US market?

As Bangladesh races against a July 9 deadline to secure a lower tariff regime with the United States, the stakes could not be higher.

16h ago