রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গণহত্যা দিবস পালন, স্বদেশে ফেরার আকুতি

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ৬ বছর পূর্তির দিনটিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে। ছবি: মো. রাজিব রায়হান/স্টার
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ৬ বছর পূর্তির দিনটিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে। ছবি: মো. রাজিব রায়হান/স্টার

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ৬ বছর আজ। দিনটিকে রোহিঙ্গারা কালো দিবস আখ্যা দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছেন।

এ উপলক্ষে আজ শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে 'হোপ ইজ হোম' ক্যাম্পেইন পালন করেছেন রোহিঙ্গারা।

সরেজমিনে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেখা যায়, 'হোপ ইজ হোম' ক্যাম্পেইন উপলক্ষে আশপাশের ক্যাম্প থেকে সকাল থেকে লোকজন খেলার মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন। ক্যাম্পেইন সমাবেশে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী, শিশুরাও যোগ দেন। পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি তুলে ধরেন।

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ৬ বছর পূর্তির দিনটিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে। ছবি: মো. রাজিব রায়হান/স্টার
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ৬ বছর পূর্তির দিনটিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে। ছবি: মো. রাজিব রায়হান/স্টার

রোহিঙ্গা ঢলের ৬ বছরপূর্তি ও রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসের সমাবেশে বক্তব্য দেন রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার শোয়াইব, মাস্টার নুরুল আমিন, মাস্টার জুবায়ের, মোহাম্মদ ইউসুফ, মাস্টার কামাল প্রমুখ।

সমাবেশে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, 'আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে চাই। আমরা এই গণহত্যা দিবসটি পালন করছি, কারণ এই দিনে মিয়ানমার জান্তা সরকার আমাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। এই দেশে আর কত বছর থাকবো? আর থাকতে চাই না। আমরা আমাদের স্বদেশে ফিরতে চাই।'

সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী সৈয়দউল্লাহ বলেন, 'মিয়ানমার আমাদের দেশ। অনতিবিলম্বে আমাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রত্যাবাসন সফল করতে দেশটির পাশে থাকতে হবে।'

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলের মংডু, বুচিথং ও রাসেথং জেলার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। ওই দিনটিকে স্মরণে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা 'রোহিঙ্গা জেনোসাইড রিমেম্বার ডে' পালন করে আসছে।

জানা গেছে, রোহিঙ্গা গণহত্যার ৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে কক্সবাজারের আশ্রিত ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১২, ১৩, ৮, ১৯, ২০ ও ২২ নম্বর ক্যাম্পসহ অধিকাংশ ক্যাম্পে (শুক্রবার ) একসঙ্গে পৃথকভাবে দিবসটি পালন করা হয়েছে। সমাবেশ থেকে মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার, দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা।

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ৬ বছর পূর্তির দিনটিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে। ছবি: মো. রাজিব রায়হান/স্টার
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ৬ বছর পূর্তির দিনটিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে। ছবি: মো. রাজিব রায়হান/স্টার

দাবিগুলো হলো- মিয়ানমারে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি, সীমিত সময় রাখা যাবে মিয়ানমার ট্রানজিট ক্যাম্পে, সকল রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে, সেফজোন, নিজস্ব সহায়-সম্বল ফেরত, প্রত্যাবাসনের সময় বেঁধে দেওয়া, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, এক বারে গ্রামের সব মানুষকে প্রত্যাবাসন করা, রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে উত্থাপন না করা। এছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশসহ দাতা সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা।

৮ আমর্ড পুলিশের অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর( বিপিএম) বলেন,আজ রোহিঙ্গাদের গণহত্যা দিবস উপলক্ষে  তারা একটি সমাবেশ করেছে। তাদের এই সমাবেশ ঘিরে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি ও তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Income inequality in Bangladesh

Growth obsession deepened rich-poor divide

Income inequality in Bangladesh has seen a steep rise over the past 12 years till 2022, according to official data, as economists blame a singular focus on growth rather than sorting out income disparities.

16h ago