রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যাপারে যা জানাল মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল

রোহিঙ্গা, মিয়ানমার, এনবিসি,
বৃহস্পতিবার সকালে ১৪ সদস্যের মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল একদিনের সফরে কক্সবাজারের টেকনাফে আসেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পেতে হলে এনভিসির (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) মাধ্যমেই আবেদন করতে হবে বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের একটি অংশের বৈঠক শেষে আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান  সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এর আগে, আজ সকালে ১৪ সদস্যের মিয়ানমারের ওই প্রতিনিধি দলটি একদিনের সফরে কক্সবাজারের টেকনাফে আসেন।

আরআরআরসি কমিশনার বলেন, 'প্রতিনিধি দলের বক্তব্যের মূল ফোকাস ছিল প্রত্যাবাসনের জন্য বাছাই করা ১ হাজার ১৭৬ জন ফেরত যাওয়ার পর তাদের পুনর্বাসন কীভাবে হবে তার ওপর। প্রেজেন্টেশন শেষে রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টি তুলে প্রতিনিধি দলকে প্রশ্ন করেন। রোহিঙ্গারা বলেন, তাদের প্লেস অব অরিজিন অর্থাৎ তাদের পিতা-মাতার যে ঘরবাড়ি আছে, জমি আছে-সেখানে তারা ফেরত যেতে চান। নতুন যে ভিলেজগুলো হয়েছে, যেগুলো ক্যাম্পের মতো দেখতে তারা সেগুলোতে ফিরে যেতে চান না। এছাড়া সন্তানদের পড়ালেখা ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয় তারা তুলে ধরেন।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিনিধি দল তাদের আইন মোতাবেক উত্তর দিয়েছেন। তারা বলেছেন, নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য এনভিসির মাধ্যমে যেতে হবে। প্রতিনিধি দল দুজন রোহিঙ্গার পাসপোর্ট প্রদর্শন করেন এবং বলেছেন, তারা এনভিসির মাধ্যমে এসেছেন। প্লেস অব অরিজিন নিয়ে তারা দুরকম উত্তর দিয়েছেন। যাদের জমিজিরাত আছে তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য নির্ধারিত গ্রাম যদি সংলগ্ন হয় তবে বিবেচনা করা হবে। না হলে আপাতত এই নির্ধারিত গ্রামে ওঠার পরে তারা যদি কাগজপত্র দেখাতে পারেন, তাহলে সেগুলো বিবেচনা করা হবে।'

মিজানুর রহমান বলেন, 'প্রত্যাবাসন ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থা ছিল। তাদের একটি টেকনিক্যাল টিম এসেছিল, তারপর রোহিঙ্গাদের একটি দল মিয়ানমারে যায়। পরবর্তীতে আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে একটি ফলোআপ ভিজিটের জন্য বলেছিলাম, আজ সেটিই হলো। আমাদের প্রথম ব্যাচে প্রত্যাবাসনের জন্য বাছাই করা ২২২টি পরিবারে ১ হাজার ১৭৬ জন সদস্য আছেন। এসব পরিবারের প্রধান ও নারী-পুরুষসহ মোট ২৮০ জন রোহিঙ্গা আজ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বসেন। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের একটি দীর্ঘ প্রেজেন্টেশন দেন। প্রতিনিধি দলের প্রধান রিজিওনাল ডিরেক্টর অব মিয়ানমার'স মিনিস্ট্রি অব সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স ওয়াং মিউয়ের নেতৃত্বে ইমিগ্রেশন ও ডিসট্রিক্ট কমিশনারসহ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট প্রতিনিধিরা তার নিজ নিজ অংশের ওপরে প্রেজেন্টেশন দেন।'

'মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি দীর্ঘ সময় রোহিঙ্গাদের কথা শুনেছেন এবং প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে কখনো ইতিবাচক কখনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখতে পেয়েছি। মিয়ানমার প্রতিনিধি দল বিকেলে নিজ দেশে ফিরে যান। এখন আমরা দেখব কোন রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হচ্ছেন। মূলত এই দুটো ভিজিট 'গো অ্যান্ড সি' ও 'কাম অ্যান্ড টক' ভিজিটের পরে কারা কারা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী হবেন, তা আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব। যারা আগ্রহী হবেন নিয়ে আমরা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি শুরু করব,' বলেন তিনি।

তিনি জানান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি দল দ্বিতীয়বারের মতো কক্সবাজার সফর করলো।

এর আগে, গত ৫ মে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের নেওয়া ব্যবস্থা দেখতে ২০ রোহিঙ্গা সদস্য ও ৭ বাংলাদেশি কর্মকর্তা রাখাইন রাজ্যে সফর করেন। মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের এই সফর পূর্ব নির্ধারিত ছিল। কিন্তু, ১৪ মে কক্সবাজার সীমান্তের কাছে মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানায় সফর বিলম্বিত হয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আছেন। তাদের বেশিরভাগ ২০১৭ সালে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এখন পর্যন্ত কয়েকবার প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করা হলেও সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।

Comments

The Daily Star  | English
Reforms vs election

Reforms vs election: A distracting debate

Those who place the election above reforms undervalue the vital need for the latter.

7h ago