ইথিওপীয় অভিবাসন প্রত্যাশীদের গুলি করে হত্যা করেছে সৌদি সীমান্তরক্ষী বাহিনী: এইচআরডব্লিউ

ইথিওপিয়া থেকে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীরা ইয়েমেনে মানবেতর জীবনযাপন করেন। ছবি: রয়টার্স
ইথিওপিয়া থেকে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীরা ইয়েমেনে মানবেতর জীবনযাপন করেন। ছবি: রয়টার্স

ইথিওপিয়া থেকে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীরা সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টা চালালে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের ওপর 'বৃষ্টির মতো' গুলিবর্ষণ করে। এতে শত শত মানুষ প্রাণ হারান। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।

আজ সোমবার বার্তাসংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে।

সৌদি সরকারের এক সূত্র এই অভিযোগকে 'ভিত্তিহীন' বলে দাবি করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) গবেষক নাদিয়া হার্ডম্যান এক বিবৃতিতে বলেন, 'সৌদি কর্মকর্তারা বহির্বিশ্বের অন্তরালে থাকা দুর্গম সীমান্ত এলাকায় শত শত অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাশীদের হত্যা করছে।'

'বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে পেশাদার গলফ ও ফুটবল ক্লাব কেনা ও বড় বড় বিনোদন অনুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে সৌদি আরবের ভাবমূর্তি উন্নয়নের যে চেষ্টা চলছে, তাতে প্রভাবিত হয়ে এ ধরনের ভয়ানক অপরাধ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া উচিৎ হবে না', যোগ করেন তিনি।  

সৌদি সরকারের এক সূত্র এএফপিকে বলেন, 'এইচআরডব্লিউ'র প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সৌদি-ইয়েমেনি সীমান্ত পার হওয়ার সময় ইথিওপিয়া থেকে আসা মানুষের ওপর সৌদি সীমান্ত রক্ষীরা গুলিবর্ষণ করে। এই অভিযোগ কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া যায়নি এবং এটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন।'

এইচআরডব্লিউ'র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা মন্তব্যের জন্য সৌদি স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং উত্তর ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণকারী হুতি বিদ্রোহীদের কাছে চিঠি পাঠালেও কোন উত্তর পায়নি।

এইচআরডব্লিউ'র প্রতিবেদনে ইয়েমেন সীমান্তের মাধ্যমে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন এরকম ৩৮ জন ইথিওপীয় অভিবাসন প্রত্যাশীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও, সংস্থাটি স্যাটেলাইট ছবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া ছবি ও ভিডিও-সূত্রের কথা জানায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা সাক্ষাৎকারে ২৮টি 'বিস্ফোরক অস্ত্র সহকারে আক্রমণের' ঘটনার বর্ণনা দেন, যার মধ্যে মর্টারের গোলাও অন্তর্ভুক্ত।

বেঁচে ফিরে আসা কয়েকজন ইথিওপীয় নাগরিক এসব ঘটনার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। একজন বলেন, সীমান্তরক্ষীরা তাকে জিজ্ঞাসা করে, 'শরীরের কোন অঙ্গে গুলি খেতে চাও?'।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'প্রায় সব প্রত্যক্ষদর্শীই সাক্ষাৎকারে আতঙ্কজনক সব ঘটনার বর্ণনা দেন—নারী, পুরুষ ও শিশুরা মারাত্মক আহত বা মৃত অবস্থায় সেই পার্বত্য অঞ্চলের মাটিতে শুয়ে আছেন। অনেকেই এক বা একাধিক অঙ্গ হারিয়েছেন।'

ইয়েমেন-সৌদি সীমান্তে প্রহরা দিচ্ছেন সৌদি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। ফাইল ছবি: এএফপি
ইয়েমেন-সৌদি সীমান্তে প্রহরা দিচ্ছেন সৌদি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। ফাইল ছবি: এএফপি

ইথিওপিয়ার ওরোমিয়া অঞ্চলের ২০ বছর বয়সী এক নারী জানান, সৌদি রক্ষীরা এক দল অভিবাসন প্রত্যাশীকে মুক্তি দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের ওপর এলোপাতারি গুলি চালায়।

'তারা আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি চালায়। সেই ঘটনা মনে পড়লেই আমি কাঁদি', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমি এক ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি করতে দেখি। সে তার ২টি পা হারিয়েছে। সে চিৎকার করছিল। সে বলছিল, "আমাকে কী এখানে ছেড়ে যাচ্ছ তোমরা? দয়া করে আমাকে ছেড়ে যেও না"। কিন্তু আমরা তাকে সাহায্য করতে পারিনি, কারণ আমরা দৌড়ে পালাচ্ছিলাম।

এইচআরডব্লিউ রিয়াদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয় প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের সহিংস মনোভাব দেখানোর নীতিমালাকে তাৎক্ষণিক ও জরুরিভাবে বাতিল ও প্রত্যাহার করতে।

মানবাধিকার সংস্থাটি জাতিসংঘকে এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করার অনুরোধ জানায়।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

7h ago