বান্দরবান

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কাটেনি বিশুদ্ধ পানির সংকট

‘বন্যায় টিউবওয়েলসহ পানির সব উৎস ডুবে যাওয়ায় গত ৩ দিন ধরে খাবার পানির চরম সংকটে আছি।’
ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করে পানি দেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল বলে জানান স্থানীয়রা। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জেলা সদর পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় পুকুর থেকে পানি তুলে ভ্রাম্যমাণ পানি বিশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলা সদরের বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে করে সরবরাহ করতে দেখা গেছে।

স্থায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার ৮ দিনের মাথায় আজ তারা বিশুদ্ধ পানি পেয়েছেন। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল।

বৃহস্পতিবার সকালে বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, সেনাবাহিনী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ও পৌরসভার পক্ষ থেকে জেলা সদরের ক্যাংমোড়, পৌরভবন এলাকা, বান্দরবান বাজার ও বালাঘটা পুলিশ লাইনস এলাকায় এই বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে।

জেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান পৌর এলাকায় ৪০ হাজারেরও বেশি এবং জেলায় ৪ লাখ ৮০ হাজার ৬৪২ জনেরও বেশি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে থানচি, রুমা, লামা ও বান্দরবান সদর মিলে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্য-পরবর্তী বৃষ্টির পানি সঞ্চয় করে এতদিন ব্যবহার করলেও তা এখন শেষ।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাজার এলাকার বিপ্লব দাশ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ডিপ-টিউবওয়েল থেকে পানি তোলা যাচ্ছে না। নদীর পানি ঘোলা ও পলি মাটি যুক্ত থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

কালাঘাটার বাসিন্দা উম্মে কুলসুম বলেন, 'বন্যায় টিউবওয়েলসহ পানির সব উৎস ডুবে যাওয়ায় গত ৩ দিন ধরে খাবার পানির চরম সংকটে আছি।'

ক্যাচিংঘাটার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, 'এতদিন বৃষ্টির পানি খাওয়াসহ সব কাজে ব্যবহার করেছিলাম। বিদ্যুৎ না থাকায় সাপ্লাইয়ের পানি বা কারও ডিপ-টিউবওয়েল থেকেও পানি পাচ্ছি না। গত ২ দিন ধরে পানি না থাকায় গোসলও করতে পারছি না।'

বালাঘাটা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী সরোয়ার আলম জানান, বালাঘাটা এলাকায়ও খাবার পানির তীব্র সংকট। ৮ আগস্ট সকাল থেকে তার ব্যক্তিগত জেনারেটর বিশ্রামে নেই। তিনি কোনো ভাড়াও নেন না। মানবিক কারণে শুধু প্রয়োজনীয় অকটেন দিলেই তিনি পানি তুলে দিচ্ছেন।

বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অনুপম দে ডেইলি স্টারকে জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সাপ্লাই প্ল্যান্টগুলোও চালু করা যাচ্ছে না। তবুও পানি বিশুদ্ধিকরণের জন্য ভ্রাম্যমাণ যন্ত্রের সাহায্যে বান্দরবান বাজার ও বালাঘাটা পুলিশ লাইনস এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

বন্যা-কবলিত মানুষের জন্য বন্যা-পরবর্তী সময়ে জেলা পরিষদের মাধ্যমে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জেলা শহরসহ সব উপজেলায় বন্যায় আশ্রয়শিবিরে আসা মানুষদের জন্য জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার সঙ্গে সমন্বয় করে ২ বেলা খিচুরি ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করে চলেছি গত ৮ দিন ধরে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার জেলা ও উপজেলার সব সাধারণ মানুষের জন্য গতকাল দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৪০ লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ-পরবর্তীতে তাৎক্ষণিক শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থার নিতে লামা ও জেলা সদর পৌরসভার জন্য ১০ লাখ টাকা এবং বাকি ৫টি উপজেলা রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, লাম, ও নাইক্ষ্যংছড়ির জন্য ৪ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছি।'

'এখনো পুরো জেলার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে খুব দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও ডেটা সংগ্রহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব ডেটাসহ তথ্য পেলে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Culprits of Khagrachhari, Rangamati violence will be brought to book: CA office

High-powered probe body to be formed; home adviser to visit Khagrachharai and Rangamati tomorrow

2h ago