বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ, শয্যা নেই ঢামেক হাসপাতালে

ঢাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি
আর মাত্র কিছুদিন, তারপরই নতুন ভাই কিংবা বোন আসছে। এ নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিল ১১ বছরের সায়মা। কিন্তু তার সেই উচ্ছ্বাস পরিণত হয়েছে বিষাদে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ আগস্ট সকালে মারা গেছেন সায়মার মা—৮ মাসের সন্তানসম্ভবা ফারজানা। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যাওয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত মোহাম্মদ সাকিবকে (২০) ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর এমন পরিস্থিতিকে 'সতর্কতা সংকেত' হিসেবেই ধরে নেওয় হয়।

গত রোববার ঢামেক হাসপাতালে যাওয়ার পর তিনি কোনো শয্যা পাননি। বাধ্য হয়ে মেডিসিন ইউনিটের মেঝেতে শুয়েই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাকে।

সাকিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার টাইফয়েড ও ডেঙ্গু দুটোই ধরা পড়েছিল। এখন কিছুটা ভালো আছি। কিন্তু সুস্থ হয়ে গেলে ঢাকার চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে যাব। কারণ, আমি কাজ করি মাতুয়াইলে, থাকিও ওই এলাকাতেই। সেখানে মশা নিধনে তেমন কোনো তৎপরতাই নেই।'

ঢামেক হাসপাতালে শয্যা স্বল্পতার কারণে সাকিবের মতো অনেক রোগীরই জায়গা হয়েছে মেঝেতে।

ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, 'আমরা এমন কোনো রোগীদের ফেরত পাঠাই না যাদের পরিস্থিতি গুরুতর বা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। কিন্তু শয্যা স্বল্পতার কারণে মেঝেতে রেখে হলেও তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।'

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক এইচ এম নাজমুল আহসান বলেন, 'ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর পেটে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড দুর্বলতা, বমি অথবা মাড়ি ও নাক থেকে রক্ত আসতে দেখলে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। যদি এমন অবস্থা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি না করা হয় তাহলে রোগীর ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম হয়ে যেতে পারে।'

গত শনিবার থেকে ঢামেক হাসপাতালের মেঝেতে পাটি পেতে শুয়ে চিকিৎসাধীন আবির (১৫)। তার খালা জাহেদা বেগম জানান, নিয়মিত চিকিৎসায় আবির এখন ভালো আছেন।

কুমিল্লার দাউদকান্দির বাসিন্দা মোরশেদ আলম (৩০) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত রোববার ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। টেস্ট রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তার চিকিৎসা শুরু হওয়ার কথা ছিল।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমাকে থাকতে হচ্ছে মেঝেতে। সেদিন আমার টেস্টের রিপোর্ট, মোবাইল ফোনসহ সব চুরি হয়ে গেছে।'

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার মারা গেছেন চিকিৎসক আলমিনা দেওয়ান মিশু (৩২)। তিনি ৩৯তম ব্যাচের বিসিএস ক্যাডার। গত ১ আগস্ট থেকে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এর আগে, গত ২৬ জুলাই ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে তার পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ঢামেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৩ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ১১ জনই ঢাকায়। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট ৩৪০ জন মারা গেলেন।

একই সময়ে আরও ২ হাজার ৭৪২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৭২ হাজার ২২৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৩৭ হাজার ৭২২ জন।

আর মাত্র কিছুদিন, তারপরই নতুন ভাই কিংবা বোন আসছে। এ নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ছিল ১১ বছরের সায়মা। কিন্তু তার সেই উচ্ছ্বাস পরিণত হয়েছে বিষাদে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে মারা গেছেন সায়মার মা—৮ মাসের সন্তানসম্ভবা ফারজানা। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

Comments

The Daily Star  | English

Protests disrupt city life, again

Protests blocking major thoroughfares in Karwan Bazar and Shahbagh left the capital largely paralysed

1h ago