বিবাহবিচ্ছেদের পদ্ধতি নিয়ে যা আছে আইনে

ছবি: সংগৃহীত

বিয়ে একটি শক্তিশালী ও পবিত্র বন্ধন। একটি বিয়ে শুরু হয় উদযাপন ও ভালবাসায়। এই বন্ধন ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত অনেক কঠিন হলেও জীবন চলার পথে বিভিন্ন কারণে অনেককে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েছে, অসংখ্য পরিবারে এর প্রভাব পড়ছে। যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে আগে ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে হবে।

লিঙ্গ ও ধর্মভেদে এই প্রক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-

ইসলাম ধর্মে বিবাহবিচ্ছেদ

ডিভোর্সের ক্ষেত্রে ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে-

মুসলিম পুরুষের ক্ষেত্রে

একজন মুসলিম পুরুষ তার স্ত্রীর কাছে মৌখিক বা লিখিতভাবে বিবাহবিচ্ছেদের ইচ্ছার কথা জানাতে পারেন। এই প্রক্রিয়ার নাম তালাক। বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে যদি স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া না করেন, তাহলে বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হবে।

বাংলাদেশের আইন অনুসারে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ স্থানীয় চেয়ারম্যানকেও জানাতে হয়। চেয়ারম্যানের অফিসে যেদিন নোটিশটি জমা দেওয়া হবে, সেদিন থেকে ৯০ দিন গণনা শুরু হবে। কিন্তু স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকেন, তাহলে সন্তান জন্মদানের আগে বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর হবে না।

মুসলিম নারীর ক্ষেত্রে

একজন মুসলিম নারীও উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করে তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে বিয়ের কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্বামী তাকে তালাকের অনুমতি প্রদান করেছেন কি না, সেটি দেখতে হবে।

যদি কাবিননামা অনুযায়ী স্ত্রীর তালাকের অনুমতি না থাকে, তাহলে তিনি আদালতে তালাকের জন্য আবেদন করতে পারবেন। নির্যাতন, বিয়ের ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে শারীরিক সম্পর্ক না হওয়া, স্বামী ৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকা, ভরণ-পোষণে স্বামীর ব্যর্থতাসহ অন্যান্য কারণে স্ত্রী তালাক চাইতে পারেন। আদালত পরিস্থিতি বিবেচনা করে তালাকের ডিক্রি জারি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ডিক্রি জারির দিন থেকে ৬ মাস পার হলে বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে। 

হিন্দু ধর্মে বিবাহবিচ্ছেদ

হিন্দু আইনে ডিভোর্সের কোনো উল্লেখ নেই। হিন্দু ধর্মে বিয়েকে পবিত্র ও চিরস্থায়ী বিবেচনা করা হয়। স্বামী যদি কোনো রোগে আক্রান্ত হন (স্ত্রীর থেকে নয়), পুনরায় বিয়ে করেন, অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হন, উপপত্নী রাখেন, স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন কিংবা অন্যান্য যৌক্তিক কারণে একজন হিন্দু নারী স্বামীর কাছ থেকে সেপারেশন ও ভরণপোষণ চাইতে পারেন।

ধর্মীয় দিকের বাইরে, কোনো হিন্দু দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আদালতে আবেদন করতে পারেন এবং উভয় পক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেন। উভয় পক্ষের যুক্তি শুনে আদালত বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

খ্রিস্টান ধর্মে বিবাহবিচ্ছেদ

খ্রিস্টান আইনে দম্পতিকে বিবাহবিচ্ছেদের আদেশের জন্য আদালতে আবেদন করতে হবে। বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদনকারী পক্ষকে আদালতে নিম্নলিখিত কারণগুলো মধ্যে যেকোনো একটি প্রমাণ করতে হবে-

  • স্বামী/স্ত্রী ব্যভিচার করেছে
  • স্বামী/স্ত্রীর যৌন অক্ষমতা রয়েছে
  • স্বামী/স্ত্রীকে উন্মাদ ঘোষণা করা হয়েছে
  • বিয়ের সময় স্বামী/স্ত্রীর আগের কোনো বিয়ে কার্যকর বা সক্রিয় ছিল

বিশেষ বিবাহ আইন ১৮৭২ অনুসারে বিয়ে করা দম্পতির ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ

যারা খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, মুসলিম, পার্সি, বৌদ্ধ, শিখ অথবা জৈন ধর্ম অনুসরণ করেন না, বিশেষ বিবাহ আইনটি তাদের জন্য। এই আইনের অধীনে বিয়ে করা দম্পতিরা ১৮৬৯ সালের ডিভোর্স অ্যাক্ট অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারবেন। এজন্য আদালতে আবেদন করতে হবে এবং আদালতের অনুমতিক্রমে ডিভোর্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। ব্যভিচারের ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার আবেদন করতে পারবেন। আর স্ত্রী স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার আবেদন করতে পারবেন ব্যাভিচার, অন্য নারীকে বিয়ে, নির্যাতনসহ আরও কিছু ক্ষেত্রে।

স্বামী বা স্ত্রী যে পক্ষই ডিভোর্সের আবেদন করুক না কেন, আদালতে তাদের আবেদনের পক্ষে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। সব তথ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে আদালত রায় দেবেন।

লেখক তাসনিম হক একজন আইন গবেষক (এলএলবি এন্ড এমডিএস)

অনুবাদ করেছেন আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

3h ago