বৃষ্টিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরও অবনতি
প্রাপ্তবয়স্ক মশা নিধন ও মশার প্রজনন উৎস ধ্বংস করা না গেলে এই বৃষ্টিতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি—বিশেষ করে ঢাকার—আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ববিদরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড এন্টামোলজির ফ্যাকাল্টি মেম্বার জিএম সাইফুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেহেতু এডিস মশা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পাত্রে প্রচুর ডিম পেড়েছে, সেহেতু এই বৃষ্টির পানি পেয়ে ডিমগুলো ফুটবে। এই নতুন এডিস মশা দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলবে।'
এডিস মশা প্রতি ৩ দিন পর পর ডিম দেয় এবং একটি স্ত্রী মশা তার জীবদ্দশায় ১৫০টি থেকে ৩০০টি ডিম দিতে পারে। একটি ডিম প্রায় ১ বছর পর্যন্ত নিষিক্ত না হয়ে থাকতে পারে এবং প্রয়োজনীয় পানি পেলে যেকোনো সময় ডিম ফুটতে পারে।
তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সব প্রাপ্তবয়স্ক মশা নিধন করতে হবে এবং সম্ভাব্য সব প্রজনন উৎস ধ্বংস করতে হবে।'
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় মাঝারি থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে ২৭৩ জনে।
সাইফুর রহমান পরামর্শ দেন, মশার লার্ভা মেরে ফেলতে প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া বিটিআই (ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস ইসরাইলেন্সিস) স্প্রে করা উচিৎ। পানিতে বিটিআই পেলে মশার লার্ভা সেটি খায় এবং মারা যায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বিটিআই নিয়ে এসেছে, যা আজ প্রথমবারের মতো দেশে ব্যবহার করা হবে।
সেফওয়ে পেস্ট কন্ট্রোলের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুর এ চৌধুরী বলেন, 'এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু তারা অনেক দেরি করে ফেলেছে।'
মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার জন। অথচ, জুনে এই সংখ্যা ছয় গুণ বেড়ে প্রায় ৬ হাজারে পৌঁছে গেছে।
জুওলজিকাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি মঞ্জুর এ চৌধুরী বলেন, 'জুলাইয়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা জুনের তুলনায় ৭ গুণেরও বেশি বেড়ে ৪৪ হাজারে পৌঁছেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আড়াই লাখে পৌঁছতে পারে।'
'ঢাকার ২ মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। কারণ তারা কখনই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করেননি,' যোগ করেন তিনি।
লার্ভার পরিবর্তে সব প্রাপ্তবয়স্ক মশা মেরে ফেলাই এখন অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। কারণ, এডিস মশা কামড় দেওয়ার ৭ দিনের মধ্যে একজন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়।
কিন্তু সিটি করপোরেশনগুলো প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারার ওপর জোর দিচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ইউএলভি মেশিনের মাধ্যমে কীটনাশক প্রয়োগ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারকে জরুরিভিত্তিতে অন্তত ১০টি ইউএলভি মেশিন কেনার পরামর্শ দিয়েছেন মঞ্জুর এ চৌধুরী।
ইউএলভি মেশিনের মাধ্যমে ১০ দিন স্প্রে করার পর সপ্তাহে ১-২ বার হ্যান্ড স্প্রে ও ফগার মেশিনের মাধ্যমে ফগিং করা প্রয়োজন।
মঞ্জুর এ চৌধুরী বলেন, 'ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এটা চালিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি, এই মারাত্মক ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার, ফুল হাতা শার্ট ও ট্রাউজার পরা এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে এডিস মশার বিস্তার রোধে সচেষ্ট থাকার বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে সরকারকে।'
Comments