ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করেছে: গিলমোর

ইমন গিলমোর। ছবি: ইউএনবি থেকে নেওয়া

নির্বাচনকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় উল্লেখ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর আশা প্রকাশ করেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন 'অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত' হবে।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) রাতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে ইউএনবিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ আশা প্রকার করেন।

তিনি বলেন, 'নির্বাচন সহিংসতামুক্ত হবে এটিই আমাদের প্রত‌্যাশা। আর তাহলেই তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।'

গিলমোর বলেন, 'কীভাবে নির্বাচন আয়োজন করা হবে সে বিষয়ে আমি কোনো রাজনৈতিক মতামত দেবো না। কিন্তু যখন কেউ নির্বাচনের কথা ভাবে, তখন শুধু ভোটের দিন কী হবে তা নিয়ে চিন্তা করে না। নির্বাচনের পরিবেশ কী হবে তা নিয়েও আমরা ভাবছি। অনুসন্ধানমূলক মিশন ঠিক সেই বিষয়টিই দেখছিল।'

তিনি বলেন, 'বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশের বেশিরভাগ নির্বাচনই সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়। রাজনীতির বৈশিষ্ট‌্যই হলো গণতান্ত্রিক সম্পৃক্ততা। আর এর মাধ‌্যমেই জনগণ তাদের পরিস্থিতিকে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও সম্মানজনক করে তুলে এবং এরপর ভোটাররা তাদের সিদ্ধান্ত নেয়।'

গিলমোর বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা এখানে একটি অনুসন্ধানমূলক মিশন সম্পন্ন করেছেন। তবে তারা এ সম্পর্কে এখনই বিস্তারিত বলতে পারছেন না। কারণ তারা মিশনটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছেন। যার ওপর ভিত্তি করেই মূলত নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল মোতায়েন করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি মনে করেন, নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর জন্য আরও বড় ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে দেশের আরও কাজ করতে হবে।

গিলমোর বলেন, 'আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) নিয়েও কথা বলেছি। এই আইন মূলত কীভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিক সমাজের কার্যক্রমকে সীমিত করছে তা নিয়ে আমাদের মত প্রকাশ করেছি।'

তিনি বলেন, ডিএসএ সংশোধনের বিষয়টি সরকার নিশ্চিত করেছে। এই সঙ্গে অতি দ্রুতই তা সংশোধনের জন‌্য আমলে নেবে সরকার।

গিলমোর আরও বলেন, 'আমরা আশা করি এটি উল্লেখযোগ্য পার্থক্য তৈরি করবে, আমরা দেখব কী ধরনের সংশোধনী আনা হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক মতানৈক‌্য ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিস্তৃত ক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে। সুতরাং আমি আনন্দিত যে ডিএসএ সংশোধন করা হবে। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে এবং এর বিস্তারিত দেখতে হবে। তবে এটি উৎসাহব্যঞ্জক।'

শ্রম অধিকার ইস্যুতে গিলমোর বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষেত্রে তারা কিছু উন্নতি দেখতে চান। 'শ্রম অধিকার ও বাণিজ্য বিষয়ে অগ্রাধিকারের পুরো পরিবেশটি পরিবর্তিত হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোতে আমি এসব বিষয় তুলে ধরেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'গত ৪ বছরে বিশ্বব্যাপী বড় পরিবর্তনগুলোর মধ্যে এটি একটি এবং এটাই আমি দেখেছি।'

গিলমোর উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। কোন পণ্য কোথা থেকে আসছে, কী কী শর্তাবলী রয়েছে, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হচ্ছে কি না, এসব বিষয়ে ভোক্তারা সচেতন হয়ে উঠছে।

একইসঙ্গে পণ্য তৈরির সময় তার জন্য ন্যায্যমূল্য দেওয়া হচ্ছে কি না, সে সম্পর্কেও ভোক্তারা সচেতন হয়ে উঠছেন।

তিনি বলেন, 'তবে বিনিয়োগকারীরাও শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হয়ে উঠছেন।'

গিলমোর বলেন, 'আমি মনে করি ব্যবসাগুলোর বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার, বিশেষ করে কাজের পরিবেশ ও শ্রম অধিকারকে কীভাবে দেখা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করেই অবস্থার পরিবর্তন হয়।'

তিনি বলেন, 'বাণিজ্য অগ্রাধিকারের স্কিমে কাজ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখন যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই বাণিজ্য পছন্দগুলো শর্তসাপেক্ষ। আমি মনে করি আমরা অগ্রগতি দেখেছি। আমি মনে করি, আমাদের এখন দেখতে হবে তাদের (প্রাসঙ্গিক নিয়মাবলী) বাস্তবায়ন।'

গিলমোর বলেন, প্রাসঙ্গিক বাণিজ্য ও শ্রম ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য সেপ্টেম্বরে একটি মনিটরিং মিশন আসবে।

মানবাধিকারকে রাজনৈতিক লাভের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, 'মানবাধিকারকে আমরা সর্বজনীন হিসেবে দেখি। একটি দেশের সরকারের রাজনৈতিক গঠন বা ভেতরের রাজনৈতিক ব্যবস্থা যাই হোক না কেন, তারা মানুষের জন্য, সব জায়গার মানুষের জন্য। এসব অধিকার সব জায়গার প্রত‌্যেক মানুষের প্রাপ‌্য।'

গিলমোর বলেন, 'মানুষ যাতে সমানভাবে এসব অধিকার ভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য মানবাধিকারের সরঞ্জামগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর সেটাই আমরা সমর্থন করি।'

তিনি আরও বলেন, 'ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমরা একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করি, এতে আমাদের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্র সম্মত হয়েছে। এই কর্মপরিকল্পনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু করা হয়।'

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন ইইউর বিশেষ এই প্রতিনিধি। এ ছাড়া ইইউ-বাংলাদেশ সম্পর্কের 'মানবাধিকারের কেন্দ্রিকতা' নিয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশে ৫ দিনের সফরে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পও সফর করেছেন গিলমোর।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

8h ago