শ্রোতার মন বুঝে গান শোনায় স্পটিফাই

স্পটিফাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মিউজিক স্ট্রিমিং অ্যাপ হিসেবে সর্বজনবিদিত। ছবি: সংগৃহীত
স্পটিফাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মিউজিক স্ট্রিমিং অ্যাপ হিসেবে সর্বজনবিদিত। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে স্ট্রিমিং অ্যাপ স্পটিফাই একটি প্রিয় নাম। বলা হয়ে থাকে, শ্রোতার মন বুঝে গান শোনায় এই অ্যাপ। 

এর বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য ফ্রি ভার্সন ও প্রিমিয়াম ভার্সন, উভয়ই রয়েছে, যা বাংলাদেশেও খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

স্পটিফাইয়ের সবচেয়ে মজার যে ফিচার শ্রোতাদের আকর্ষণ করে, তা হলো– 'স্পটিফাই ব্যবহারকারীর মুড বুঝে গান শোনায়!'

কিন্তু কীভাবে বোঝে? এই যোগাযোগের জটিল জীবনে মানুষই যেখানে অন্য মানুষের মন-মর্জি বুঝতে হিমশিম খেয়ে যায়, সেখানে স্পটিফাইর এত ভালো বোঝাপড়ার পেছনের 'সায়েন্স'টা আসলে কী? তা জানতেই আজকের এই লেখা।

বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভিস হিসেবে স্পটিফাইয়ে জুড়ি মেলা ভার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের দুর্দান্ত সমন্বয় ঘটিয়ে প্রযুক্তিকে আরো বেশি 'প্রো' মাত্রায় নিয়ে যেতে স্পটিফাই প্রতিটি কাস্টমার তথা শ্রোতার পছন্দের ভিত্তিতে অভিজ্ঞতা তৈরির চেষ্টা করে। এর জন্য সম্প্রতি তারা কিছু ডেটা সায়েন্স কোম্পানির সহায়তাও নিচ্ছে, যাতে করে মিউজিক স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের কাতারে 'স্পটিফাই' নামটিই এগিয়ে থাকে।

প্লেলিস্টের প্লেয়ার 'স্পটিফাই'

ডিসকভার উইকলি স্পটিফাইর অন্যতম জনপ্রিয় ফিচার। ছবি: সংগৃহীত
ডিসকভার উইকলি স্পটিফাইর অন্যতম জনপ্রিয় ফিচার। ছবি: সংগৃহীত

স্পটিফাই প্রতিটি প্রোফাইলের জন্য যে প্লেলিস্টগুলো তৈরি করে, তা অনেকসময় জাদুকরী ব্যাপার-স্যাপার বলেই মনে হয়। মনে হয় যেন শ্রোতার চেয়ে ভালো বুঝে যাচ্ছে স্পটিফাইয়ের কারিগররা। এক্ষেত্রে আসলে সব স্পটিফাই ব্যবহারকারীরই একটি করে 'টেস্ট প্রোফাইল' থাকে। টেস্ট প্রোফাইলে ব্যবহৃত সব ডেটা সংগ্রহের কাজটি অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে গান শোনার সময় স্পটিফাই মোটামুটি নির্ভুলভাবে করে থাকে। এই প্রোফাইলে যেসব তথ্য প্রাধান্য পায়, তা হলো–

  • সবচেয়ে বেশি শোনা গান
  • সবচেয়ে বেশি যে শিল্পী বা ব্যান্ডের গান শোনা হয়
  • শ্রোতা কোন গান 'স্কিপ' করেছেন, অর্থাৎ এড়িয়ে গেছেন
  • শ্রোতা কোন গানটিতে 'লাইক' ক্লিক (স্পটিফাইর ভাষায় ফেভারিট) করেছেন
  • কোন গানটি শ্রোতার পছন্দ হয়নি
  • শ্রোতার তৈরি করা প্লেলিস্ট

স্পটিফাইয়ের ৩ মডেল

ডিসকভার উইকলি' বা 'টপ ৫০ গ্লোবাল' এর মতো প্লেলিস্টগুলো স্পটিফাই তৈরি করে তিনটি মডেলের ভিত্তিতে।

১। কোলাবরেটিভ ফিল্টারিং

এ প্রক্রিয়ায় একাধিক ব্যবহারকারীর 'বিহেভিওরাল ট্রেন্ড' এর মধ্যে তুলনা করা হয়। সেইসঙ্গে একই ব্যবহারকারীর বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের আচরণও নজরে রাখা হয়, যাতে করে তার জন্য কনটেন্ট রেকমেন্ডেশন তৈরি করা যায়। একই ধরনের কনটেন্ট উপভোগ করেন, এমন ব্যক্তিদের একই ধরনের কনটেন্ট দেখার পরামর্শ দেয়া হয়।

২। ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এনএলপি)

স্পটিফাইর পরিছন্ন ইন্টারফেস এর অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয়। ছবি: স্ক্রিণশট
স্পটিফাইর পরিছন্ন ইন্টারফেস এর অন্যতম আকর্ষণীয় বিষয়। ছবি: স্ক্রিণশট

এনএলপি হচ্ছে স্পটিফাইর ব্যবহার করা এক ধরনের এআই, যেটি গানের ট্র্যাকের সঙ্গে সংযুক্ত মেটাডেটা স্ক্যান করে। মূলত গান ও শিল্পী– এই দুই নিয়েই অনলাইন পরিসরে কী ধরনের আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, কে কীরকম প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে, সবকিছুই খতিয়ে দেখে স্পটিফাই। তারপর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দ, নাম বা শব্দগুচ্ছকে কিওয়ার্ড ধরে নিয়ে 'কালচারাল ভেক্টর' ও 'টপ টার্ম' হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। প্রতি শিল্পী ও গানের সঙ্গে হাজারো টপ টার্ম যুক্ত থাকে, যা আবারো প্রতিদিন বদলায়। তাই মুহূর্তে মুহূর্তে সেরা ও জনপ্রিয় গানের তালিকায় 'হালনাগাদ' থাকাটা স্পটিফাইয়ের সাফল্যের অন্যতম কারণ।

৩। অডিও মডেল

অডিও ট্র্যাক থেকে ডেটা বিশ্লেষণ করতে এবং সে অনুযায়ী গানগুলোকে বিভিন্ন তালিকায় সাজানোই মূলত অডিও মডেলের কাজ। এতে করে ব্যবহারকারীদের নতুন গান শোনার সবধরনের সুপারিশ আরও সহজ হয়, অনলাইন সে সব গানের উপস্থিতি বা প্রতিক্রিয়া যেমনই হোক না কেন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এই প্ল্যাটফর্মে নতুন কোনো শিল্পীর গান আসার পর অনলাইন উপস্থিতি অত সরগরম না হলেও গানের ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে শ্রোতার প্লেলিস্টে সেটি যুক্ত করা সম্ভব হয়। এখানে জনপ্রিয়তার চেয়েও বেশি শ্রোতার ব্যক্তিগত পছন্দ প্রাধান্য পায়। শ্রোতা যদি এই শিল্পীর গান, বা তিনি যে ধরনের গান পরিবেশন করেন, সেসব গান বেশি পছন্দ করে থাকেন—তাহলে স্পটিফাইর অডিও মডেল সেই গানটিই তার শোনার জন্য সুপারিশ করবে।

১ মাস বিনামূল্যে ব্যবহারের পর মাসে ১৯৯ টাকা দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন স্পটিফাই প্রিমিয়াম। ছবি: সংগৃহীত
১ মাস বিনামূল্যে ব্যবহারের পর মাসে ১৯৯ টাকা দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন স্পটিফাই প্রিমিয়াম। ছবি: সংগৃহীত

গান শোনাতে যেয়ে বিভিন্ন পরিস্থিতি, যেমন, 'বিশ্রাম' বা 'ব্যায়াম' – এসব খুব কমই গুলিয়ে ফেলে স্পটিফাই। তাই এ নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই শ্রোতার। অন্তত ব্যায়ামের মাঝখানে থেমে ঘুমপাড়ানি গান এসে বাগড়া দেবে না, এটুকু নিশ্চিত থাকা যায়।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে কি না, নিলেও সেটা কেমন হবে– মানবজাতির কী পরিণতি হবে, ইত্যাদি বিভিন্ন কনস্পিরেসি থিওরি বা ফ্যান্টাসি তত্ত্ব তো প্রায়ই শোনা যায়। তবে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে স্পটিফাইয়ের এত বেশি বুঝে যাওয়া কখনো কখনো একটু ভয় পাইয়ে দিলেও সার্বিকভাবে এতে উপকৃত হচ্ছেন শিল্পী-শ্রোতা, উভয়ই।

তথ্যসূত্র: আউটসাইডিনসাইট, হার্ভার্ড ডট এডু, স্পেসশিপ ডট এইউ, হাইপবট ডট কম 

 

Comments

The Daily Star  | English
politics in 2024

Uprising, unity, and uncertainty: Power, protest, and politics in 2024

To speak of politics in 2024 is also to recall the entire history of political culture that has unfolded in Bangladesh since 1972.

11h ago