ম্যান্ডেলা দিবস

‘ঘৃণা নিয়ে কেউ জন্মায় না’

নেলসন ম্যান্ডেলা
নেলসন ম্যান্ডেলা। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

'শিক্ষা সব থেকে শক্তিশালী অস্ত্র, যার মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে বদলে দেওয়া যায়।'

'ঘৃণা মনকে অন্ধকার করে, ঘৃণা নিয়ে কেউ জন্মায় না।'

'সফলতার ভিত্তিতে আমায় বিচার করো না, আমাকে বিচার করো আমার ব্যর্থতা এবং আমার ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তিকে দিয়ে।'

উক্তিগুলো নেলসন ম্যান্ডেলার।

২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল নেলসন ম্যান্ডেলা ফাউন্ডেশন বিশ্ববাসীকে ম্যান্ডেলা দিবস পালনের আহ্বান জানায়। দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে না রেখে তারা নেলসন ম্যান্ডেলার আদর্শে সামাজিক সেবামূলক কাজের দিন হিসেবে স্থির করেন।

২০০৯ সালের নভেম্বরে নেলসন ম্যান্ডেলার সম্মানে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে 'নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস' উদযাপনের ঘোষণা দেয়।

২০১০ সালের ১৮ জুলাই নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিনে সর্বপ্রথম এই আন্তর্জাতিক দিবস পালিত হয়।

'জনগণের মুক্তির জন্য প্রকৃত নেতাদের অবশ্যই সবকিছু ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে', বলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী রাজনৈতিক নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা।

নেলসন ম্যান্ডেলা
নেলসন ম্যান্ডেলা। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

প্রতি বছর নেলসন ম্যান্ডেলা আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপনের কারণ হচ্ছে তার কাজের ওপর আলোকপাত করা। তিনি ২০ শতকের পরিবর্তন করেছিলেন এবং ২১ শতক গঠনে সহায়তা করেছিলেন।

ম্যান্ডেলা ব্রিটিশ দক্ষিণ আফ্রিকার এমভেজোর এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও উইটওয়াটারসরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং জোহানেসবার্গে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি উপনিবেশবিরোধী কার্যক্রম ও আফ্রিকান জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

তিনি ১৯৪৩ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং ১৯৪৪ সালে ইয়ুথ লিগ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসেবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

১৯৬২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে ও অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। কারাদণ্ডের অধিকাংশ সময়ই তিনি ছিলেন রবেন দ্বীপ, পলসমুর কারাগার ও ভিক্টর ভাস্টার কারাগারে।

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াই করেছেন এই কিংবদন্তি নেতা। একসময় দক্ষিণ আফ্রিকার লাখো কৃষ্ণাঙ্গ তার দীর্ঘ ২৭ বছরের কারাজীবন থেকে মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তার কারামুক্তির মধ্য দিয়েই দেশটিতে অবসান ঘটতে শুরু করে ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা শ্বেতাঙ্গ শাসনের।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এবং বর্ণবাদী গৃহযুদ্ধের আতঙ্কে প্রেসিডেন্ট এফ. ডব্লিউ. ডি ক্লার্ক ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তাকে কারামুক্ত করার নির্দেশ দেন। কারামুক্তি লাভের পর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সঙ্গে বর্ণবাদ নিপাতের প্রচেষ্টায় শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৯৪ সালে সব বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ম্যান্ডেলা তার দল এএনসির হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং জয়লাভ করে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেইসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবসান ঘটে বর্ণবাদের এবং প্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্ৰ৷

গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে গণ্য ম্যান্ডেলা ২৫০টিরও অধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯৯৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৯০ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত ভারতরত্ন পুরস্কার। এ ছাড়া, তিনি ১৯৮৮ সালে শাখারভ পুরস্কারের অভিষেক পুরস্কারটি যৌথভাবে অর্জন করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ম্যান্ডেলা তার গোত্রের কাছে 'মাদিবা' নামে পরিচিত। এই শব্দের অর্থ 'জাতির জনক'।

অ্যাক্টিভিস্ট, রাজনীতিবিদ, চিন্তাবিদ, মানবতাবাদী এই নেতাকে সারা বিশ্ব নানা সময়ে নানা সম্মানে ভূষিত করেছে। সমানাধিকার, দারিদ্র দূরীকরণ ইত্যাদির পাশাপাশি এইচআইভি-এইডসের মতো ব্যাধির বিরুদ্ধেও তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন।

নেলসন ম্যান্ডেলা ৬৭ বছরের জীবনের ২৭ বছর কারাগারে কাটিয়েও হেরে যাননি, থেমে যাননি। তিনি মানুষকে এগিয়ে চলার বার্তা দিয়ে গেছেন।

নেলসন ম্যান্ডেলা দীর্ঘ জেল জীবনেই লিখেছিলেন আত্মজীবনী 'লং ওয়াক টু ফ্রিডম'।

২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর এই বহু বৈচিত্র্যময় মানুষটির জীবনাবসান হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Rod prices hit 3-year low as construction demand dries up

Steel rod prices have fallen below Tk 90,000 per tonne for the first time in more than three years, as construction demand continues to fall amid reduced government spending and economic uncertainty..The retail price of 60-grade mild steel (MS) rod, widely used by construction sites and in

1h ago