বেসরকারি হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসকদের ধর্মঘটে রোগীদের ভোগান্তি

স্টার ফাইল ফটো

রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ২ চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটির সারাদেশে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ রাখার ঘোষণায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।

সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকরা রোগীদের ভোগান্তির চিত্র দেখেছেন।

প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এই সংগঠনটি ১৭ ও ১৮ জুলাই কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। তবে, সরকারি সকল হাসপাতালে স্বাভাবিক সেবা দেওয়া হয়েছে।

সাভারে আজ সোমবার সকাল থেকে শত শত রোগী বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে গিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। পরবর্তীতে তারা সেবা নিতে গিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক (হাসপাতাল) আশরাফুল্লা চৌধুরী বলেন, 'আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসকরা অন্যান্য সময়ের মতোই দায়িত্ব পালন করছেন। এখানে কোনো সমস্যা নেই।'

সাভার থানাস্ট্যান্ডে অবস্থিত পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রোগীদের ফিরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্রাঞ্চ ইনচার্জ রাজু আহম্মেদ খালেক বলেন, 'কোনো চিকিৎসকই আজ চেম্বারে আসেননি। তাই সকাল থেকে রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন। যারা আগে থেকে সাক্ষাতের সময় নিয়ে রেখেছিলেন তাদের ফোন করে আসতে নিষেধ করেছি।'

তিনি আরও বলেন, 'আজ আমাদের প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৩০ জন চিকিৎসকের চেম্বার করার কথা। তারা চেম্বার করলে কমপক্ষে ৪০০ রোগী সেবা নিতে পারতেন।'

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে আসা মো. জসিম উদ্দিন (৫০) বলেন, 'এত দূর থেকে আসলাম অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে, এখন ফিরে যেতে হবে। রোগীদের এভাবে কষ্ট দিয়ে চিকিৎসকদের কী লাভ হচ্ছে জানি না।'

সাভারের দ্বীপ ক্লিনিকে গাইনি চিকিৎসক দেখাতে আসা রোগী মনি বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এতদূর থেকে এসে দেখি ডাক্তার নেই। আমার সিরিয়াল নেওয়া ছিল। আগে থেকেই না করে দিলে পারত। রোগীদের এমন হয়রানি চিকিৎসকদের কাছ থেকে মোটেও কাম্য না।'

একই পরিস্থিতি সাভারের প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালের।

জানতে চাইলে সাভারের বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সংগঠন প্রাইভেট হসপিটাল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব সাভারের সাধারণ সম্পাদক ও ল্যাব জোন হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ওয়াকিলুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতালের জরুরি সেবা চালু আছে। যেসব রোগী ভর্তি আছেন, আবাসিক চিকিৎসকরা তাদের দেখভাল করছেন। তবে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আজ আসেননি। অপারেশনের শিডিউলও পিছিয়ে দিয়েছে।'

নারায়ণগঞ্জ শহরের বেসরকারি ক্লিনিকগুলো খোলা থাকলেও গাইনি চিকিৎসক না থাকায় সেখানে এ সংক্রান্ত কোনো নতুন রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না এবং বন্ধ রয়েছে অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম। কোনো রোগী যোগাযোগ করলে তাদের বুধবার আসতে বলা হচ্ছে। গুরুতর অসুস্থ কেউ এলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

ক্লিনিক মালিকরা জানান, চিকিৎসকরা ২ দিন চেম্বার বন্ধ রাখায় তারা আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলায় প্রায় ১০০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টার রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার শিবুমার্কেট এলাকা থেকে ৭২ বছর বয়সী শাশুড়িকে নিয়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডাক্তার দেখাতে আসা অন্তঃসত্ত্বা নাসরিন আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইসা শুনি ডাক্তার নাই। কোনো হাসপাতালেই নাকি ডাক্তার নাই। এখন এতদূর থেইকা আসছি। আগে জানলে তো হয়রানিতে পড়তাম না।'

চাষাঢ়ায় অবস্থিত কেয়ার জেনারেল হাসপাতালের কাউন্টার ম্যানেজার খন্দকার মেহেদী হাসান বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে এখানে ১০-১২টি অস্ত্রোপচার হয়। আজ ওটি বন্ধ। বহির্বিভাগের চিকিৎসা সেবাও বন্ধ। কারণ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও এই ২ দিন চেম্বার করবেন না বলে জানিয়েছেন। তাই আমরা নতুন রোগী ভর্তি নিচ্ছি না।'

ডনচেম্বার এলাকার মেডিহোপ হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার মো. ফয়সাল জানান, প্যাথলজি বিভাগ ছাড়া বাকি সব কার্যক্রম বন্ধ। জরুরি বিভাগে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। নতুন কোনো রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না।

নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) ডা. আবুল বাশার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডাক্তার না পেয়ে আমাদের হাসপাতালে চাপ বাড়তে পারে। সেটা বিবেচনায় রেখে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। রোগীরা যাতে সেবাবঞ্চিত না হন, সে প্রস্তুতি রয়েছে।'

চট্টগ্রামে চিকিৎসকরা আল্ট্রাসনোগ্রাম, এন্ডোস্কোপি, কোলনোস্কোপি ও মাইক্রোস্কোপিক প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা না করায় অনেক রোগী ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।

তবে চট্টগ্রামের ম্যাক্স হাসপাতাল, পার্কভিউ হাসপাতাল, রয়েল হাসপাতাল ও সিএসসিআর হাসপাতালসহ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে দেখা যায়, চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন।

ম্যাক্স হাসপাতাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, 'আমাদের সব চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছেন, তাই রোগীদের চিকিৎসায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া, বেসরকারি চেম্বারে ধর্মঘট চললেও আমাদের চিকিৎসকরা রোগীদের মোবাইলে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি অপারেশনও করছেন।'

একই কথা জানান পার্কভিউ হাসপাতাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল করিম চৌধুরী।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. রাজীব পালিত বলেন, প্রাইভেট চেম্বারে ডাক্তারদের প্রতিবাদ কর্মসূচির কারণে তাদের হাসপাতালে রোগীর চাপ খুব বেশি বাড়েনি।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

3h ago