আফগান স্পিনারদের সেরা মেনে ওয়ার্ন-মুরালির প্রসঙ্গ আনলেন বাংলাদেশের কোচ
আফগানিস্তানের স্পিনারদের বিপক্ষে গড়ে ১৫ রান তুলতেই একটি করে উইকেট হারাচ্ছে বাংলাদেশ। রশিদ খান, মুজিব উর রহমানদের ধাঁধা কোনভাবেই যেন সমাধান করা যাচ্ছে না। আফগানদের স্পিনারদের বিপক্ষে নিজেদের এই দুর্বলতা নিয়ে অনেকটা অসহায় ভঙ্গি সহকারী কোচ নিক পোথাসের। এদেরকে এই সময়ে বিশ্বের সেরা আখ্যা দিয়ে তিনি তুলনার জন্য টেনে আনলেন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন ও মুত্তিয়া মুরালিধরণের নাম।
এই ম্যাচেই বাংলাদেশের নাজুক পরিস্থিতির বড় কারণ আফগান স্পিন ত্রয়ী রশিদ, মুজিব আর মোহাম্মদ নবি। বিশেষ করে বড় চিন্তার কারণ রশিদ আর মুজিব।
প্রথম ম্যাচে তিন আফগান স্পিনার মিলে ২৪ ওভার বল করে কেবল ৬৯ রান দিয়ে তুলেছেন বাংলাদেশের ৫ উইকেট। পরের ম্যাচে তাদের ২৫ ওভার থেকে ৯৭ রান তলে ৬ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।
পরিসংখ্যানই বলে দেয় কতটা দুর্বার ছিল আফগান স্পিনারদের ঘূর্ণি। সোমবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দলের হয়ে কথা বলতে এসে স্পিন প্রসঙ্গ উঠতেই প্রতিপক্ষকে সেরা বলে রায় দেন সহকারী কোচ, 'সত্যি কথা বলতে তাদের স্পিন আক্রমণ দুনিয়ার সেরা। এটাই বাস্তবতা। এই তিনজন অনেক সাদা বলের ম্যাচ খেলেছে দুনিয়া ঘুরে। তাদের পাওয়া যেকোনো অধিনায়কের স্বপ্ন। তাদের হাতে বল দিলেই তারা কিছু না কিছু করছে।'
পোথাসের কথার সত্যতা আছে দুই ম্যাচের চিত্রে। এই সিরিজে ছন্দে থাকা বাংলাদেশের ব্যাটারদের সবাই ভুগেছেন স্পিনে। নাজমুল হোসেন শান্ত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুজিবের লেন্থ থেকে হালকা টার্নের বল পড়তে না পেরে বোল্ড হন। তাওহিদ হৃদয় বুঝতে পারেননি রশিদের গুগলি। দুই ম্যাচেই রশিদের সামনে চরম দুর্দশায় পড়েন আফিফ হোসেন। দ্বিতীয় ম্যাচে চাপহীন পরিস্থিতিতে রান পেলেও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম প্রথম ম্যাচে রশিদের বলে হয়েছিলেন বোল্ড। সাকিব শিকার হন নবির।
তবে তারা নিজেরাই না, আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে বাকি দুনিয়ার সবাইকেই ভুগতে দেখেন বলে জানান পোথাস, 'প্রশ্নটা এটা নয় যে আমরা তাদের বিপক্ষে ভুগছি। প্রশ্নটা এটা যে পুরো বিশ্ব তাদেরকে সামলাতে সংগ্রাম করছে। তাদের র্যাঙ্কিং কত সেটা বলে দেয় সারা বিশ্ব তাদের সামলাতে ভুগে। মিডলসেক্সে মুজিবের সঙ্গে আমি ছিলাম। একজন উইকেটরক্ষক হয়েও আমি যখন স্টাম্পের পেছনে উইকেটরক্ষকের চোখে দাঁড়িয়েছি, তার সঙ্গে কথা বলার পরেও ডেলিভারি বুঝতে সমস্যা হয়েছে আমার। এ কারণেই তারা এত ভালো।'
রশিদ-মুজিবের মান বোঝাতে বাংলাদেশের সহকারী কোচ উদাহরণ দিতে টেনে আনেন দুই কিংবদন্তি স্পিনারের নাম, 'সবাই কি শেন ওয়ার্ন, (মুত্তিয়া) মুরালিধরনকে পড়তে পারত? এজন্যই তারা বিশ্বের সেরা। এজন্যই দুনিয়ার সব প্রতিযোগিতায় রহস্য স্পিনারদের পেছনে এত টাকা ঢালা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি করতে যাচ্ছি, এবং কীভাবে ভালো করতে পারি?'
২০১৭ মুজিব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসার পর স্পিন দিয়ে ৬৩ ম্যাচে ২৭৬ উইকেট পেয়েছে আফগানিস্তান। এই সময়ে যা কেবল ভারতের স্পিনারদের চেয়ে কম। আফগানিস্তানের স্পিনাররা অবশ্য বড় দলের বিপক্ষে তেমন খেলেলনি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচ খেলে তাদের উইকেট নেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২, ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের ১০টি করে উইকেট। এর কোন ম্যাচই জেতেনি আফগানিস্তান।
২৭৬ উইকেটের মধ্যে ১৯৫ উইকেটই আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
পোথাস একটি ভালো দিকও দেখছেন। আফগানিস্তানের এমন বিষধর স্পিনারদের সামলাতে পারে আর কারো বিপক্ষে সমস্যা দেখছেন না তিনি, 'টেকনিক্যালি তারা যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে এটা আমাদের জন্য একদিক থেকে সুবিধার। এটা আমাদের আরও ভালো আপনি যদি এই লেভেলের স্পিন সামলান, আপনি যে কাউকে সামলাতে পারবেন।'
'তারা আমাদের দিকে ধেয়ে আসে। বিশ্বে খুব বেশি দল নেই যাদের এরকম মানের তিন স্পিনার আপনার দিকে সব সময় ধেয়ে আসবে। এটা আমাদের দলের জন্য লাভজনক। তারা আমাদের চেয়ে র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে আছে। কিন্তু তাদের দুজন স্পিনার বিশ্বের সেরা তিনের মধ্যে থাকবে। আমরা এটাকে খুব ইতিবাচকভাবে নিচ্ছি।'
Comments