ট্রেইনি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি

আন্দোলন দীর্ঘায়িত হলে চিকিৎসা ব্যাহত হবে: চমেক পরিচালক

চমেক হাসপাতালে কর্মবিরতি পালন করছেন স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত বেসরকারি চিকিৎসকরা। ছবি: স্টার

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত বেসরকারি চিকিৎসকরা ৩ দফা দাবি আদায়ে আজ শনিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন।

কর্মবিরতি চলাকালে রোগীদের চিকিৎসা যাতে ব্যাহত না হয়, সেজন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত বেসরকারি চিকিৎসকদের শূন্যতা পূরণে হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকদের অতিরিক্ত কাজ করতে হয়েছে।   

সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরাতন একাডেমিক ভবনের সামনের লনের বসার আসনগুলোতে সকাল থেকে প্রায় ৫০ জন আন্দোলনরত চিকিৎসক বসে আছেন। মাসিক ভাতা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা, নিয়মিত ভাতা প্রদান ও প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের পাওনা পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে তারা এই কর্মবিরতি পালন করছেন।

আন্দোলনরত চিকিৎসক রাকিব আদনান চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা কাজ থেকে বিরত রয়েছেন। 

আজ চমেক হাসপাতালের ৩০০ জন স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত বেসরকারি চিকিৎসক কাজ থেকে বিরত ছিলেন বলেও জানান তিনি।

কতদিন কাজ থেকে বিরত থাকবেন জানতে চাইলে রাকিব আদনান চৌধুরী বলেন, 'এ বিষয়টি ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।'

আজ চমেকের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, শুধু সরকারি চিকিৎসকসহ ইন্টার্নি চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করছেন।

মেডিসিন ওয়ার্ডে সকালে যথারীতি রুটিন রাউন্ডআপ অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি চিকিৎসক, স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত সরকারি চিকিৎসক, অনারারি মেডিকেল অফিসার ও ইন্টার্নি চিকিৎসকদের ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।  

গাইনি ওয়ার্ড, কার্ডিওলজি ওয়ার্ড ও কার্ডিয়াক সার্জারি ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

চমেক হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. নাজমুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওয়ার্ডে কোনো স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত চিকিৎসক নেই, তাই এই ওয়ার্ডে তাদের কর্মবিরতির কোনো প্রভাব নেই।'

হাসপাতালের আউটডোর চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান থাকতে দেখা গেছে। 

চন্দনাইশ উপজেলা থেকে গাইনি সমস্যার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন শ্যামলী মজুমদার। তিনি জানান, কোনো ঝামেলা ছাড়াই আউটডোর চিকিত্সার জন্য টিকিট নিয়েছেন এবং ডাক্তার দেখাতে পেরেছেন।

কর্মবিরতি পালন বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি একটি যৌক্তিক আন্দোলন।'

'বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন ডাক্তার মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা দিয়ে জীবনধারণ করতে পারে না। স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত বেসরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার অনুমতি নেই। তাই তাদের আর কোনো আয়ের উৎসও নেই', বলেন তিনি।

তবে রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের কোনো কর্মসূচি পালন করা উচিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, 'আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের এটি মাথায় রাখতে হবে।'

চমেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শাহেনা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত বেসরকারি চিকিৎসকরা সংখ্যায় চমেক হাসপাতালের মোট স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত চিকিৎসকদের মাত্র ৩৫ শতাংশ, তাই তাদের কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে রোগীদের চিকিত্সা তেমন ব্যাহত হয়নি।'

তিনি বলেন, 'আমাদের স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত চিকিৎসক, অনারারি মেডিকেল অফিসার, ইন্টার্নি ডাক্তার এবং নিয়মিত সরকারি ডাক্তার আছেন। তবে অন্যদের কর্মবিরতির কারণে তাদের কাজের চাপ বেশি নিতে হয়েছে।'   

যোগাযোগ করা হলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত বেসরকারি চিকিৎসকদের কর্মবিরতি এ মুহূর্তে রোগীদের চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে না, তবে আন্দোলন যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে এটি অবশ্যই রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত করবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Mindless mayhem

The clashes between students of three colleges continued yesterday, leaving over 100 injured in the capital’s Jatrabari.

4h ago