লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের ঝুঁকিতে নবজাতক
হেপাটাইটিস বি এমন একটি ভাইরাস, যা সহজেই মা থেকে শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে তা নবজাতকের ভবিষ্যতে লিভার সিরোসিস বা ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে।
এই কারণেই অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য এই ভাইরাস পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে নবজাতকের জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
লিভার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেন ও হেপাটাইটিস বি ই-অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে, তাদের শিশুর মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের প্রায় ৯০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া যাদের হেপাটাইটিস বি ই-অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে, তাদের শিশুর মধ্যেও ভাইরাসটি সংক্রমণের ১০ থেকে ২০ শতাংশ ঝুঁকি থাকে।
যে শিশুরা জন্মের ৬ মাসের মধ্যে ভাইরাসে সংক্রমিত হয়, তাদের এই ভাইরাসটির দীর্ঘস্থায়ী বাহক হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ। আর তাদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশ ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হন, বলেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ছাড়া, যেসব নারীরা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন, সন্তান জন্মদানের পরেও তারা ভাইরাসটির বিস্তার অব্যাহত রাখে।
উদাহরণস্বরূপ: ঘন ঘন পেট ব্যথা ও জ্বর হলেও তা গুরুত্ব দেননি নেত্রকোণার গৃহকর্মী মার্জিয়া আক্তার (২৩)। প্রায় দেড় বছর ভোগার পর পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে (এইচবিভি) আক্রান্ত।
পরবর্তীতে চিকিৎসক মার্জিয়ার ৩ বছর বয়সী মেয়েকেও পরীক্ষা করতে বলেন এবং দেখা যায়, সেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত।
বর্তমানে মা ও শিশু ২ জনেই ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশে (এনএলএফবি) চিকিৎসাধীন।
এনএলএফবির আরেকজন নিয়মিত রোগী ৫০ বছর বয়সী রাবেয়া বেগম। নিজের অজান্তে তিনি একমাত্র মেয়ে ও ছেলেকে সংক্রমিত করেছিলেন।
তবে, তার ২৪ বছর বয়সী কন্যা সুমি আক্তার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার শিশুর জন্য বার্থ শট ও ইমিউনোগ্লোবুলিন (অ্যান্টিবডি) দিয়েছিলেন।
লিভার সার্জন ও এনএলএফবির প্রতিষ্ঠাতা ডা. মোহাম্মদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিশ্বব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী হেপাইটাইটিস বি ভাইরাস সংক্রমণের প্রায় ৫০ শতাংশের জন্য দায়ী মা থেকে শিশুর সংক্রমণ (এমটিসিটি)। যেহেতু অন্তঃসত্ত্বা নারীরা গর্ভধারণের পরপরই প্রথমে একজন গাইনোকোলজিস্টের কাছে যান, সেই চিকিৎসককে অবশ্যই প্রসবপূর্ব চেক-আপের সময় হেপাটাইটিস বি ভাইরাস পরীক্ষার পরামর্শ দিতে হবে। একইসঙ্গে প্রত্যেক নবজাতককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বার্থ শট নেওয়ার সুপারিশও তাদের করা উচিত। এই শট বর্তমানে ৬ সপ্তাহ পরে নেওয়ার চর্চা থাকলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা নিতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু যে দেশে ৬২ শতাংশেরও বেশি মাই প্রসব-পূর্ব সেবা নেন না এবং প্রায় অর্ধেক প্রসব হয় দক্ষ ধাত্রী ছাড়া, সেই পরিস্থিতিতে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের হেপাটাইটিস বি ভাইরাস পরীক্ষা করা এবং নবজাতককে বার্থ শট দেওয়া বেশ কঠিন। এ ছাড়া, ভাইরাল হেপাটাইটিস এবং এর সংক্রমণ সম্পর্কে মায়েদের জ্ঞানও অপর্যাপ্ত। অন্যদিকে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বার্থ শট, ইমিউনোগ্লোবুলিন ও হেপাটাইটিস বি সারফেস অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সুবিধাও সীমিত।'
এই চিকিৎসকের মতে, হেপাটাইটিস বি ই-অ্যান্টিজেন পজিটিভ মায়েদের নবজাতকের জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বার্থ শট ও ইমিউনোগ্লোবুলিন দেওয়া হলে তা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৯০ শতাংশ কমিয়ে দেয়।
বর্তমানে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের বার্থ শটের দাম ৪০০ টাকা এবং ইমিউনোগ্লোবুলিনের দাম ৫ হাজার ৪৩০ টাকা। তবে, এগুলো বাজারে সচরাচর পাওয়া যায় না।
সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদন পড়কে ক্লিক করুন Hepatitis B During Pregnancy: Newborns at risk of liver cirrhosis, cancer
Comments