পাবনায় সওজের প্রকৌশলী ও তার স্ত্রীর নামে দুদকের মামলা

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

দুর্নীতির অভিযোগে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করায় তার স্ত্রী জোবাইদা শাহানূর রশিদের নামে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. খায়রুল হক বাদী হয়ে এই দম্পতির নামে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।

তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

আবু হেনা মোস্তফা কামাল বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুষ্টিয়া সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা শাহানূর রশীদ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের প্রভাষক।

দুদক সূত্র জানায়, আবু হেনা মোস্তফা কামাল সিরাজগঞ্জে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ২৩ জুন দুদক তার কাছে সম্পদের বিবরণী চেয়ে চিঠি দেয়।

ওই বছরের ১৬ আগস্ট পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সম্পদ বিবরণী জমা দেন আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তাতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে ২ কোটি ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৩৯২ টাকার সম্পদের হিসাব দেন তিনি। দুদকের হিসাব অনুযায়ী তার ৩ কোটি ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৭৩ টাকার সম্পদ রয়েছে।

দুদকের মতে, তিনি ৯১ লাখ ১৩ হাজার ৮১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

এছাড়া তার স্ত্রীকে দানসহ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় হিসাব করা হলে মোট ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬০ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে দুদক। যার মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয় ১ কোটি ৫০ লাখ ৯২ হাজার ২৬৭ টাকা বাদ দিলে ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৪ হাজার ৪৯৩ টাকার সম্পদের উৎস দেখাতে পারেননি আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

সূত্র আরও জানায়, আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার মায়ের দানকৃত ৬ কোটি ২০ লাখ টাকা তার আয়কর নথির ২০০১-০২ থেকে ২০০৬-০৭ করবর্ষ পর্যন্ত প্রদর্শন করেছেন। এই টাকা থেকে তিনি তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা শাহানূর রশীদকে বিভিন্ন সময়ে ২ কোট ৭০ লাখ টাকা দান করেছেন। তাদের দুজনের আয়কর নথিতে সেই দান গ্রহণ ও প্রদানের বিষয়টি প্রদর্শিত রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আসামি মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়কে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে বৈধতা দানের জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে প্রথমে তার মায়ের আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেন এবং পরবর্তীতে তা দান হিসেবে নিজের আয়কর নথিতে প্রদর্শন করেছেন।

ডা. জোবাইদা শাহানূর রশীদ দুদকে দাখিলকৃত তার সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট ২ কোটি ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৭৩১ টাকার সম্পদের তথ্য জমা দিয়েছেন। দুদক অনুসন্ধানে তার নামে মোট ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬২ হাজার ৩১ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পেয়েছে। অর্থাৎ তিনি ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩০০ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, ডা. জোবাইদা শাহানূর রশীদের ৪ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার ৫০৯ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। তার গ্রহণযোগ্য আয় ১ কোটি ৫২ লাখ ১২ হাজার ৫৭ টাকা বাদ দিয়ে ২ কোটি ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫২ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা তার স্বামী আবু হেনা মোস্তফা কামাল থেকে দান সূত্রে পাওয়া। স্ত্রী হিসেবে স্বামীকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

খাইরুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অবৈধ অর্থ উপার্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদক মামলাটি তদন্ত করবে।

Comments

The Daily Star  | English
BNP rally venue

BNP agrees to 10yr PM cap, objects to NCC

Party leaders said the decision was made to improve the BNP's image ahead of the next general election, as sticking to the previous stance was drawing criticisms.

8h ago