ফারহান তানভীর: ওভার ওয়েটদের পোশাক তৈরির কারিগর

বিগশট
‘বিগশট’র স্বত্বাধিকারী ফারহান তানভীর। ছবি: সংগৃহীত

ফারহান তানভীর গত ৮ বছর আগে ওয়েট গেইন করতে শুরু করেন। একটা সময় গিয়ে 'ওভার ওয়েট' হয়ে যান। প্রায় ৬ ফুট উচ্চতার এই ব্যক্তির ওজন বেড়ে ৮৭ কেজি থেকে এখন ১৩৪ কেজি।

এতোটা ওয়েট গেইনের ফলে তিনি তার মাপ অনুযায়ী পছন্দসই শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি বা প্যান্ট কোনোটাই কিনতে পারেন না।

গত বছরের ঈদুল ফিতরের সময় তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পর সিদ্ধান্ত নেন তিনি নিজেই 'ওভার ওয়েট' মানুষদের জন্য জামা-কাপড় বানানো শুরু করবেন। যেই কথা সেই কাজ। প্রতিষ্ঠা করেন 'বিগশট' ব্যান্ড।

তানভীর জানান, তিনি 'ওভার ওয়েট' মানুষদের জন্য এক্সেল থেকে এইট এক্সেল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সাইজের পোশাক বানিয়ে থাকেন। বর্তমানে তিনি তার পণ্য অনলাইন শপের মাধ্যমে বিক্রি করছেন। ভালো সাড়া পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, 'গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে ঠিক ৬-৭ দিন আগে অনেক টেইলার্সে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। কারণ এত অল্প সময়ের মধ্যে আমার সাইজের পাঞ্জাবি তারা কেউ বানিয়ে দিতে পারবেন না বলে জানান।'

এরপর ঢাকার আরও অনেক এলাকায় পাঞ্জাবি বানানোর জন্য খোঁজ নেওয়ার পর বসুন্ধরা সিটির একটি পাঞ্জাবির দোকানদার তাকে বানিয়ে দিতে রাজি হন। তারা যে টাকা চেয়েছিলেন তানভীর তাই দিয়েছিলেন।

'তবে যে মানের কাপড় দিয়ে পাঞ্জাবি বানিয়ে দেওয়ার কথা ছিল, তারা তা দেননি। তাই খুব কষ্ট পেয়েছি,' যোগ করেন তানভীর।

'সে রাতে ঘুমানোর আগে সিদ্ধান্ত নিই। আমার মতো কেউ না কেউ এমন সমস্যার মুখে পড়েন। এর সমাধান দরকার। তাই এ ধরনের পোশাক নিজেই তৈরি করব,' বলেন তিনি।

তানভীর খোঁজ নিতে শুরু করলেন কোথায় ভালো মানের কাপড়, সুতা ও বিভিন্ন ধরনের এক্সেসরিস পাওয়া যাবে। পাশাপাশি তিনি ক্লোদিং প্রডাকশন নিয়ে পড়াশোনাও শুরু করেন।

বিগশট
‘বিগশট’-এ এক্সেল থেকে এইট এক্সেল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সাইজের পোশাক বানানো হয়। ছবি: সংগৃহীত

এরপর শুরু করেন কারখানার খোঁজ। যেখানে তার অর্ডার অনুযায়ী পণ্য তারা বানিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু ভালো খুঁজে পাওয়া তার জন্য অমাবস্যার চাঁদের দেখা পাওয়ার মতোই কঠিন হয়ে পড়ল। তারপর অনেক খুঁজে একটা কারখানার সন্ধান পান তিনি।

কিন্তু এরপর পড়লেন আরেক সংকটে। তিনি যে সাইজের পণ্য তৈরির কথা কারখানার মালিককে জানান তারা সেই সাইজের পোশাক তৈরি করতে পারবেন না বলে জানান। অনেক আলাপ-আলোচনা শেষে কারখানার মালিক তা তৈরি করতে রাজি হন।

'মান খারাপ হওয়ায় প্রথম চালানে আমাদের ৩০ শতাংশ শার্ট রিজেক্ট হয়ে যায়। আমি আরও কয়েকদিন সময় নিই। বুঝে গিয়েছিলাম, অল্প জ্ঞান নিয়ে এসে কারো ওপর ভরসা করতে গেলে ঠকতে হবে,' বলেন এই উদ্যোক্তা।

তিনি জানান, এরপর আরও ভালো ফ্যাক্টরির খোঁজ পান। যারা কি না দেশের অন্যতম সেরা ব্রান্ডের সঙ্গে কাজ করে। তাদের সঙ্গে পাঞ্জাবির বানানোর চুক্তি করেন তিনি।

২০২২ সালের অক্টোবরে যাত্রা শুরু করে তার ব্যান্ড 'বিগশট'। শার্ট, হুডি ও জ্যাকেট বানানোর মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে ব্যান্ডটি। ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করা ব্যবসায় তানভীর এ বছরের ২ ঈদে প্রায় ৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন।

তানভীর বলেন, 'আমার স্ত্রী ফারহানা আমাকে অনেক আগে বলেছিলেন এই সেক্টর নিয়ে কাজ করতে। তবে আমি আসলে তখন ওভাবে ভাবিনি। এখন মনে হচ্ছে ভালো একটা উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছি।'

'আমি আমার ক্যারিয়ারের ফোকাস এখন "বিগশট'কে ঘিরেই। জীবনে কোনো সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে নানান চ্যালেঞ্জ আসবেই। তবে সেগুলো মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে,' বলেন তানভীর।

তিনি মনে করেন, একটি ব্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অনেক মানুষের সহায়তার প্রয়োজন হয়। 'আমি তেমন কিছু মানুষ পেয়েছি এই ব্যান্ডটির যাত্রার শুরুর সময় থেকেই। তারা এখনো আমার সঙ্গে আছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ,' যোগ করেন তিনি।

যতদিন যাচ্ছে 'বিগশট'কে নিয়ে তার স্বপ্ন ততই বড় হচ্ছে। আগামী মাসে অস্ট্রেলিয়ায় 'বিগশট'র অনলাইন সেল কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছেন বলেন জানান তানভীর।

রাজধানীর আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করা তানভীর আশা করেন, আগামীতে 'বিগশট'-এ জুতা বেল্ট, পোলো শার্ট, প্যান্টসহ অন্যান্য পণ্য পাওয়া যাবে।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur, MRT-1, Matarbari to get special focus

Three mega projects will get special focus in the upcoming development budget with the view to providing cheaper electricity, easing Dhaka dwellers’ transportation problem and enhancing international trade for Bangladesh.

13h ago