দারিদ্র্য কমেছে রংপুর বিভাগে, শীর্ষে বরিশাল
২০২২ সালে দেশে সার্বিকভাবে দারিদ্র্যের হার কমলেও ঢাকা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে বেড়েছে। মূলত গ্রামাঞ্চলে উচ্চ দারিদ্র্যের কারণে এই ৩টি বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। তবে, এসব বিভাগের শহরাঞ্চলে দারিদ্রের হার তুলনামূলক কমেছে।
রংপুরসহ খুলনা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগে ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দারিদ্রের হার অনেক কমেছে। বিশেষ করে রংপুর বিভাগে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
বরিশালে দারিদ্র্যের হার ২০১৬ সালের ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ হয়েছে। যেখান একই সময়ের ব্যবধানে রংপুরে দারিদ্র্য হার ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ হয়েছে। সেই হিসাবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের হার বরিশাল বিভাগে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনৈতিক উন্নতির সুবিধা সব স্তরের মানুষ সমানভাবে না পাওয়ায় ধনী-গরিবের বৈষম্য বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপে (এইচআইইএস) দেখা গেছে, জাতীয় দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১৬ সালে ছিল ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। তবে, ২০২২ সালে ঢাকা ও সিলেটে দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ ও ১৭ দশমিক ৪ শতাংশে, যা ২০১৬ সালের জরিপে ছিল যথাক্রমে ১৬ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরি বলেন, 'দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য আমাদের অর্থনীতির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। কারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সমানভাবে বণ্টন হচ্ছে না, কিছু অঞ্চল সবসময় সরকারের প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'করোনা মহামারির প্রভাব বেশি পড়েছে ঢাকা বিভাগের মানুষের ওপর। এছাড়া, অনেক মানুষ অস্থায়ীভাবে গ্রামে ফিরে গেছে। এটি গ্রামাঞ্চলে উচ্চ দারিদ্র্য হারের একটি কারণ হতে পারে।'
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মুজেরি পরামর্শ দেন, বছরের পর বছর ধরে বাড়তে থাকা বৈষম্য কমাতে সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মেগা প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করেন শহরের মানুষ। প্রান্তিক এলাকার মানুষ যেন এর সুফল পেতে পারে, সেজন্য গ্রামাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী খুলনায় ২০১৬ সালে ছিল দারিদ্রের হার ছিল ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০২২ সালে তা কমে হয়েছে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে ২০১৬ সালে ছিল ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০২২ সালে কমে হয়েছে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ২০১৬ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০২২ সালে কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। ময়মনসিংহ বিভাগে ২০১৬ সালে দারিদ্রতার হার ছিল ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে তা কমে হয়েছে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, 'বাংলাদেশে আঞ্চলিক বৈষম্য সবসময়ই দেখা যায়। যেহেতু গ্রামে কাজের সুযোগ পর্যাপ্ত নয়, তাই এই বৈষম্য দেখা যায় এবং গ্রামের মানুষ তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য দেশের অন্য অংশে চলে যায়।'
সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার নিয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক রায়হান বলেন, 'করোনা মহামারিতে দারিদ্র্যের কেমন প্রভাব ছিল তা এখান থেকে জানা যায়নি। মহামারির পর পরিস্থিতির সামঞ্জস্য হয়েছে, তাই জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য। তবে, কীভাবে চরম দারিদ্র্য ১২ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়।'
Comments