মানিকগঞ্জ

কাঁচা মরিচের দাম পাইকারিতে ২২০ টাকা, খুচরা বাজারে ৪০০

কাঁচা মরিচ
শিবালয় উপজেলার বরঙ্গাইল বাজারে পাইকারি মরিচ বিক্রি হচ্ছে। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

মানিকগঞ্জের খুচরা বাজারে মরিচের দাম কেজিপ্রতি ৩২০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা হলেও পাইকারি বাজারে এর দাম ২২০-২৫০ টাকা।

মরিচের উৎপাদন কমে যাওয়ায় হঠাৎ দাম বেড়ে গেছে বলে জানান পাইকার ও মরিচ চাষিরা। তবে মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণে মরিচের দাম বাড়ছে বলে দাবি ক্রেতাদের।

পাইকার ও খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৬০-১০০ টাকা দামের পার্থক্য হওয়ায় ক্রেতারা বিপাকে পড়েছেন।

এ অবস্থায় মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।  

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবার ৩ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয় ৩ হাজার ৫৪১ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫০ হেক্টর বেশি। 

জেলার শিবালয়, হরিরামপুর ও ঘিওর উপজেলায় মরিচের আবাদ সবচেয়ে বেশি।

আজ মঙ্গলবার ও গতকাল সোমবার জেলার শিবালয় উপজেলার বরঙ্গাইল বাজার এবং হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজারের পাইকার এবং বিভিন্ন উপজেলার মরিচ চাষিদের সঙ্গে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের।

তারা বলেন, মরিচ গাছ মরে যাচ্ছে এবং ফলন না হওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে।

অতিরিক্ত তাপে ও খরায় মরিচ গাছ থুবরে গেছে। ছবি: জাহাঙ্গীর শাহ/স্টার

বরঙ্গাইল বাজারের আড়তদার মো. সাইদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এ বাজারে ৩২ জন আড়তদার আছেন। এ অঞ্চলের উৎপাদিত মরিচ দেশের বড় বড় বাজারে যায়। দেশের চাহিদা পূরণ করে কুয়েত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বহু দেশে মরিচ রপ্তানি হয়। 

তিনি বলেন, 'এবার গাছগুলো থুবরে পড়ায় মরিচ ধরছে না। উৎপাদন খুবই কমে গেছে। আড়তে মরিচ আসছে না। প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় হঠাৎ মরিচের দাম বেড়ে গেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি সোমবার ২০০-২৬০ টাকা দরে ১০০ কেজি মরিচ কিনেছি। এই মরিচ সাতক্ষীরা জেলায় পাঠাব। এত অল্প মরিচ কিনে সেখানে পাঠাতে যে খরচ, তাতে পোষায় না। দাম এভাবেই বেড়ে যাচ্ছে।'

রঘুনাথপুর গ্রামের মরিচ চাষি বিল্লাল হোসেন ৫ বিঘা জমিতে মরিচ আবাদ করেছেন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেড় লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫০ কেজি মরিচ তুলে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। গতকাল ২২০ টাকা কেজি দরে দেড় কেজি মরিচ বিক্রি করে ৩৩০ টাকা পেয়েছি। গাছে আর মরিচ নাই। গাছ মরে যাচ্ছে। অতিরিক্ত তাপ আর খরার কারণেই গাছের এই অবস্থা হয়েছে।'

ঘিওর উপজেলার শ্রীবাড়ি গ্রামের মো. ইউসুফ আলী বলেন, 'আমি ১৫ শতাংশ জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। বৈশাখে মরিচের চাষ হয়। চার থেকে সাড়ে চার মাস ফলন হয়। কিন্তু এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় মরিচ গাছ থুবরে গেছে এবং ফলন হচ্ছে না। প্রথম দিকে অল্প ফলন হলেও গত ২ সপ্তাহ ধরে মরিচ ধরছে না। এখন তো আমাদেরও মরিচ কিনে খেতে হবে।'

হরিরামপুর উপজেলার গোড়াইল গ্রামের কৃষক সোরহাব বেপারী ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন। ঝিটকা বাজরে ২৫০ টাকা কেজি দরে ৬ কেজি মরিচ বিক্রি করেছেন।

তিনি জানান, গাছ মরে যাচ্ছে, ফলন হচ্ছে না।

এদিকে, মানিকগঞ্জ জেলা শহরের সাধারণ ক্রেতারা জানান তাদের মরিচ কিনতে হচ্ছে ৩৬০-৪০০ টাকা কেজি দরে।

শহরের বাসিন্দা যোগমায়া সরকার রমা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল বাসার সামনে একটি ভ্যানগাড়ি থেকে ১০০ টাকা দিয়ে ১ পোয়া মরিচ কিনেছি।'

জাকিয়া সুলতানা বলেন, 'মানিকগঞ্জ বাজার থেকে ১ পোয়া মরিচ কিনেছি ৮০ টাকা দিয়ে। হঠাৎ এভাবে দাম বেড়ে গেলে আমরা বিপাকে পড়ে যাই।'

মরিচের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবিএম সামসুন্নবী তুলিপ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উৎপাদন কমে গেলে দাম বেড়ে যায়, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু পাইকারি আর খুচরা বাজারে মরিচের কেজিপ্রতি দাম ৬০-৭০ টাকা ব্যবধান হওয়াটা দুঃখজনক। এ ব্যাপারে বাজার মনিটরিংসহ সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।'

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু মোঃ এনায়েত উল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার অতিরিক্ত তাপে ও খরায় মরিচ গাছ থুবরে গেছে। অনেক গাছ মরে গেছে। উৎপাদন কমে গেছে। মরিচ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।'

'গত বারের চেয়ে এবার মরিচের আবাদ বেশি হয়েছে। তবে আগামীতে মরিচের আবাদ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে,' যোগ করেন তিনি।
 

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

5h ago