অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতির কোনো মূল্য নেই: তথ্যমন্ত্রী

হাছান মাহমুদ
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ফাইল ফটো

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য বিবৃতি দেয়। অথচ, ফিলিস্তিনে শিশুরা পাথর ছুড়লে ইসরাইলি বাহিনী গুলি ছুড়ে পাখি শিকারের মতো শিশুদের হত্যা করে তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করে না; ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বাংলাদেশে মানুষ পোড়ানোর বিরুদ্ধে কিছু বলে না। তাদের এই বিবৃতির কোনো মূল্য নেই।'

'এই দুটি সংগঠন আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে,' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'আগামী নির্বাচন হচ্ছে দেশের ভূমি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নির্বাচন। দেশ কি পাকিস্তান হবে, নাকি দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অভিযাত্রায় আরও দ্রুত বেগে এগিয়ে চলবে—সেই ফয়সালা হওয়ার নির্বাচন। এই দেশে কোনো তাবেদারি সরকার বসবে, নাকি যারা দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিবে তারা বসবে, নাকি শেখ হাসিনার মতো স্বাধীনচেতা জননেত্রীর সরকার থাকবে—সেই ফয়সালা হওয়ার নির্বাচন।'

আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত 'গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৪ বছর' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এতে সভাপতিত্ব করেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম।

হাছান মাহমুদ বলেন, 'আজকে পত্রিকায় দেখলাম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটা বিবৃতি দিয়েছে। আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যারা র‌্যাবে কাজ করবে কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাদেরকে যেন স্ক্রিনিং করা হয় এবং শান্তিরক্ষী বাহিনীতে না নেওয়া হয়।'

তিনি বলেন, 'আমরা অ্যামনেস্টিকে চিনি। তারেক রহমানের বেয়াইন আইরিন খান অ্যামনেস্টির জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। এখনো তিনি অ্যামনেস্টির সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি তারেক রহমানের বউয়ের চাচাতো বোন।'

নিজের বক্তব্যে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতির বিষয়েও কথা বলেন তিনি।

হাসান মাহমুদ বলেন, 'অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ—এগুলোর বিবৃতি কীভাবে হয়, কোথায় ড্রাফট হয়, আর কিসের বিনিময়ে এই বিবৃতি আসে, সেটা আমরা জানি। যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করার জন্য বিবৃতি দেয়, ফিলিস্তিনে পাখি শিকারের মতো যেভাবে মানুষ শিকার করা হয় তখন ইসরাইলের বিপক্ষে কোনো বিবৃতি দেয় না, আমাদের এগুলো নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার নৈতিক কোনো অধিকার তাদের নেই। আমাদের দেশের কিছু পত্রপত্রিকা সেগুলোকে বড় করে ছাপায়। এই বিবৃতির কোনো মূল্য নেই। সুতরাং এগুলোতে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো দরকার নেই।'

তিনি বলেন, 'বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন বঙ্গবন্ধু ও আমাদের পূর্বসূরি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন পূরণের পথে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে, তখন আবার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অপশক্তি এক হওয়ার চেষ্টা করছে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই কারণে আজকে বিএনপি-জামাতের পক্ষ থেকে দেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। সেই লবিস্টের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে কয়েকটা বিবৃতি আর কিছু কিছু কংগ্রেসম্যান কিংবা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট মেম্বারের চিঠি ক্রয় করা হয় দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে।'

ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের মেম্বার ৭০৫ জন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এর মধ্যে মাত্র ৫ জন বাংলাদেশের ব্যাপারে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারের কাছে চিঠি দিয়েছে। যেটির কোনো মূল্য নেই। আমাদের দেশকেও চিঠি দেয়নি তারা। অথচ, এটা নিয়ে কী যে মাতামাতি, পত্রিকায় কত সংবাদ। এতে পুলকিত মির্জা ফখরুল দেখি দুই ইঞ্চি লাফ দেয়।'

২০০২ সালে বিএনপি ক্ষমতাসীন থাকাকালীন সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, 'তখন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশন পাশ করেছিল—বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে এবং আওয়ামী লীগসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর দমন-নিপীড়ন হচ্ছে। তখন ৭০০ জনের বেশি পার্লামেন্ট মেম্বার ছিল। এখন ৭০৫ জনের মধ্যে মাত্র ৫ জন একটা চিঠি দিয়েছে। এগুলোতে ওনাদের কী লেগেছে জানি না, সম্ভবত কাতুকুতু লেগেছে।'

'নির্বাচন সমাগত, এই নির্বাচন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচন হচ্ছে দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূমি রক্ষার নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ফয়সালা হবে দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে নাকি সমুদ্রের একটা অংশ কেউ নিয়ে যাবে, আমাদের কোনো দ্বীপ অন্য কোনো দেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এই নির্বাচনে ফয়সালা হবে দেশে কী হামিদ কারজাই মার্কা তাবেদারি সরকার হবে, নাকি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।,' যোগ করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আত্মতুষ্টিতে না ভোগার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি-জামাত। সুতরাং আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। দল আজকে সাড়ে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায়। সাড়ে ১৪ বছর আগের চিত্র আর আজকের চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরুন, সেই উন্নয়নের চিত্রগুলোই ফেসবুকসহ সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। শুধু নিজের ছবি তুলে ফেসবুকে দিবেন, সেই কর্মীদের আমাদের প্রয়োজন নেই। যে সব কর্মী উদ্ধত আচরণ করে, তারা দলের জন্য বোঝা। তাদের দায়-দায়িত্ব দল নিবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Drone crash triggers commotion on Ijtema ground, 40 injured

It was not immediately known how the drone fell or who it belonged to

25m ago