সত্যপ্রকাশে লক্ষ্যভেদী কবি রুদ্র

ছবি: সংগৃহীত

রুদ্র, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কবিতাকে ভালবেসেছিলেন জীবনের পরতে পরতে। কবিতাকে ভালোবাসা মানে দেশকে ভালোবাসা। আর দেশকে ভালোবাসা, মানুষকে ভালোবাসা মানে তাবৎ পৃথিবীকে ভালোবাসা, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, প্রকৃতি ও প্রতিবেশকেভালোবাসা। কেননা, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আবর্তিত হচ্ছে মানুষকে কেন্দ্র করে। মানুষ এখানে মুখ্য ও একক। প্রকৃতার্থে এই মানুষের মুক্তি ঘটলে সকল প্রাণীরই মুক্তি ঘটে-ঘটবে। যে মুক্তির সাধনা করে গেছেন গৌতম বুদ্ধ। পরবর্তীতে আমরা সেই সাধনার তীব্র প্রকাশ দেখেছি বিশ্বের তাবৎ মহাপ্রাণ মানুষের জীবন ও কর্মে, বাণী ও ব্যবহারিকতায়। রুদ্র'র কবিসত্ত্বায় সেই মহাপ্রাণ মানুষের সার্থক উত্তরসূরীর প্রকাশ ঘটেছে সর্বৈবভাবে। 

আমরা জানি না, রুদ্র দীর্ঘ আয়ু পেলে, এই বহমানতার তরীকে কোন কূলে নিয়ে ভেড়াতেন। তিনিও কি পদ-পদক-পদবী-উপঢৌকন, প্লট-ফ্ল্যাট-বিদেশ ভ্রমণের মোহে হয়ে পড়তেন দলান্ধ, দলদাস? আদর্শের বিকিকিনি করে বাগিয়ে নিতেন সুযোগ-সুবিধার যাবতীয় হাতছানি। আর সামষ্টিক মুক্তির হতশ্রী বাস্তবতা দেখে, প্রতিষ্ঠান সমূহের নুয়ে পড়া ঋজুতায়, ব্যক্তিতন্ত্রের বিকাশ দেখেও থাকতেন বধির, অন্ধ? রুদ্রর অনুপস্থিতিতে এসবের কিনার করা সম্ভব নয়। উনার মৃত্যুদিনে এসব প্রসঙ্গের অবতারণা  হওয়ায় স্পষ্ট যে, কবির ইশতেহার তো বাস্তবায়ন হয়ইনি, সে লক্ষ্যে হাঁটেনি বাংলাদেশ। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কবিদের যে ভূমিকা পালন করার কথা সেই পথকে শ্রেয়জ্ঞান করেননি রুদ্রর বন্ধুরা, বাংলার কবিকূল।

রুদ্র কবিতা লেখার সাধনায় নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন, গায়ত্রী মন্ত্র জ্ঞান করেছিলেন ফুল পাখির রূপ-সৌষ্ঠব আর নান্দনিকতা উচ্চারণের জন্য নয়। ছন্দ মেলানোর মুখস্থ কোশেশ বাস্তবায়নের জন্য নয়। উপমা-উৎপ্রেক্ষা, প্রতীক-রূপকের ব্যবহার, চিত্রকল্প আর মিথ পুরাণের গৎবাঁধা জারিজুরির প্রকাশের উদ্দেশে নয়। কবিতার মধ্যে দিয়ে রুদ্র মূলত মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছেন, কবিতাকে সর্বক্ষণের সঙ্গী করে জীবনভর সেই পথে হেঁটেছেন। কবিতার যে শিল্প প্রকরণ তা ছিল রুদ্রর কাছে উপরি কাঠামোবিশেষ। প্রকাশভঙ্গির ব্যবহারিক উপাদান। পুরোভাগে ছিল মূলত মানবমুক্তির পবিত্র উচ্চারণ।

এই উচ্চারণ যেন ফলবতী হয়। মেঘেরা যেমন বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে পৃথিবীতে। একজন কবির উচ্চারণও যেন সত্যবৃষ্টি হয়ে এদেশকে-এ পৃথিবীকে সকল মানুষের বাসযোগ্য করে তোলে, এই প্রত্যাশা ছিল রুদ্রর। সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রুদ্র সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রুদ্রর কাছে এই জোট কেবলই একটা সংগঠণ ছিল না, ছিল সম্মিলিত স্বর বাস্তবায়নের প্ল্যাটফর্ম বিশেষ। যার কাজ হবে দলতন্ত্রের সীমাবদ্ধতাগুলোকে চিহ্নিত করে সংস্কৃতির আলোয় তার বিকাশ ঘটানোর। দলীয় আদর্শের বাইরে গিয়ে স্বাধীন সত্ত্বার চর্চাকে উৎসাহিত করার পাটাতন হবে এই জোট। বুদ্ধিজীবীর ধর্ম পালনে নীলকণ্ঠ হবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। 

দলতন্ত্র-ব্যক্তিতন্ত্রের ঊর্ধ্বে উঠে দেশতন্ত্র-গণতন্ত্র-জনতন্ত্রর ধারক বাহক হয়ে উঠবে। রুদ্রর প্রত্যাশিত পথে নয় উল্টোপথে হেঁটেছে-হাঁটছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। রুদ্র মরে গিয়ে বেঁচে গেছে। প্রিয় সংগঠণের এরূপ বাস্তবতা তাকে দেখতে হচ্ছে না। রুদ্র জানে না, তাঁর প্রিয় জোটেও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। এখানে কতিপয় পদ-পদবীধারীরাই আমৃত্য নিজেদেরকে স্বপদে অবিকল্প জ্ঞান করে চলেছেন।

অথচ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জন্মই হয়েছিল, দেশের গণতন্ত্রকে আরও বেশি সংহত করার লক্ষ্যে। দলতন্ত্র-ব্যক্তিতন্ত্রের দূর্বিনীত রূপ যেন জাতির কাঁধে চেপে বসতে না পারে সেই সংস্কৃতির চর্চাকে বেগবান ও জোরদার করার লক্ষ্যে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সংস্কৃতির বহুধা শক্তিকে বহুমাত্রিকভাবে ব্যবহার করবে গণতন্ত্রকে বিকাশমান করার জন্য-গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে ঋজু করার লক্ষ্যে।

ছবি: সংগৃহীত

দেশ ও জাতির সংকটে, দূর্বিপাকে জোট বাতিঘর হয়ে দেখা দেবে জাতির ভাগ্যাকাশে, রুদ্রর স্বপ্ন ছিল এরকম পবিত্র ও কলুষমুক্ত সাংস্কৃতিক চেতনায় লালিত। জোট হয়ে উঠবে স্বাতন্ত্র্যবাদী বুদ্ধিজীবীদের সম্মিলিত এক কণ্ঠস্বর। জোট দেখাবে কীভাবে সংস্কৃতিকে ধারণ করতে হয়, কীভাবে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবীত হতে হয়, কীভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর প্রয়োজনে সকলকে এক হয়ে লড়তে হয়, যেমনটা হয়েছিল গত শতাব্দের বায়ান্নে, ঊনসত্তরে, একাত্তরে এবং নব্বইয়ে। রুদ্রর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সেই স্পপ্নের পথে হাঁটেনি।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মতোই কবিতার মুক্তি, বিকাশ ও নির্মাণের লক্ষ্যে রুদ্র জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠণের প্রারম্ভিক লগ্নের প্রতিষ্ঠাতা যোদ্ধাদের অন্যতম ছিলেন। জাতীয় কবিতা পরিষদ কতিপয় ব্যক্তির কিংবা বিশেষ কোন দলের পকেট সংগঠণ না হয়ে প্রকৃতার্থে পুরো জাতির কবিদের একটা প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে এই প্রত্যাশা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতাদের, রুদ্ররও। কবিতা কারও মুখাপেক্ষী হবে না। কবিরা হবেন নির্ভীক, আপসহীন, সত্যাচারী। বুদ্ধি, যুক্তি ও সুন্দরের প্রতি থাকবে তাদের পক্ষপাত, বাকী সব তুচ্ছজ্ঞানে উড়িয়ে দেবে হাওয়ার ফুৎকারে। কোন পোশাকের কাছে, ডাণ্ডার কাছে, কোন তন্ত্রের কাছে, কোন প্রত্যাশার কাছে নতজানু হবে না কবিসত্ত্বা এই ছিল রুদ্রর আকাঙ্ক্ষা, জাতীয় কবিতা পরিষদের মৌলমন্ত্র।

কবিরা সাম্যের কথা বলবেন, সুন্দর সমাজ নির্মাণের কথা বলবেন, দেশপ্রেম আর গণতন্ত্রের কথা বলবেন এই ছিল রুদ্রর কবি প্রতিভার সারসত্ত্ব চাওয়া। এর ব্যত্যয় হলে কিংবা এ ধারা বাধাগ্রস্ত-সংকটাপন্ন-সংশয়াপন্ন হলে কথা বলবে কবির কলম। দেশ পরিচালনায় 'জন'র অংশগ্রহণ ও 'জন'ভাবনা যদি হয় উপেক্ষিত। 'জন'কে পাশ কাটিয়ে যদি লোকদেখানো তুষ্টিকে পুঁজি করে সর্বনাশ করা হয় বৃহত্তর স্বার্থের তা হলে সবার আগে কথা বলবে কবির কলম।

সকলে যদি সোনার কাঠি রূপোর কাঠির ছোঁয়ায় ঘুমিয়ে যায়, কিংবা কালঘুম নেমে আসে সর্বত্র-ছাপান্নো হাজার বর্গমাইলের প্রতি ইঞ্চিতে, তবুও কবির ঘুম প্রত্যাশিত নয়। প্রকৃত কবির ধর্মের সঙ্গে এই ঘুম যায় না। সত্য যতই অপ্রিয় হোক, চোখরাঙানির ভয় যতই ভয়ংকর ও কালাশনিকভের রাইফেলের মতো প্রাণসংহারী হোক, কবি সবকিছুকে থোড়াই কেয়ার করবে। কারণ সে সত্যের সাধক। সত্য প্রকাশেই কবির মুক্তি। এ কারণে আমরা শঙ্খ ঘোষের শুনি দ্ব্যার্থবোধক সেই উচ্চারণ : 'দ্যাখ খুলে তোর তিন নয়ন/ রাস্তা জুড়ে খড়গ হাতে দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন'।

সত্যপ্রকাশে রুদ্রও ছিলেন লক্ষ্যভেদী, দ্ব্যার্থহীন। হাতের ‍মুঠোয় প্রাণ নিয়ে জীবন বাজি রাখা একজন আপাদমস্তক কবি। জাতীয় কবিতা পরিষদ নিয়ে উনার আকাঙ্ক্ষাও ছিল এসবেরই সমান্তরাল। রুদ্রর অবর্তমানে এই সংগঠন কতোটা কবি ও কবিতার জন্য নিবেদন রেখেছে সেই প্রশ্ন তোলা জরুরি।

রুদ্রর কবি প্রতিভার সহজাত বৈশিষ্ট্য হল তিনি কবিতায় প্রশ্ন জারি রেখেছিলেন নানাভাবে, প্রভূত মাত্রাকে অবলম্বিত করে। না, এই প্রশ্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মতো প্রশ্ন না করেও যে প্রশ্ন করা যায় তার সবিশেষ উদাহরণ রয়েছে রুদ্রর বেশীরভাগ কবিতায়। আমরা তো জানি, একজন কবি-দার্শনিকের প্রধান কাজ হল প্রশ্ন উত্থাপন করা।

এই অর্থে যিনি যত প্রশ্ন নিঃশব্দে অন্বেষণ করে যান, তিনি মূলত তত বড় কবি প্রতিভার পরিচয়ই দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীতে কবিতার যে বাঁকবদল ঘটে সেই সাত ও আটের দশকের কবিতায় রুদ্র স্বর্ণশস্য ফলিয়েছেন। এই সময়ের কবিতার যে প্রধান বৈশিষ্ট্য বাক্ মুখ্যতাকে ভরকেন্দ্রে রাখা। সেই বৈশিষ্ট্যকে আত্তীকরণপূর্ক রুদ্র পূর্বসূরি ও উত্তরসূরিদের মাঝে এবং সমসাময়িকদের ভীড়ে নিজেকে স্বতন্ত্রভাবে উপস্থাপন করেছেন। রুদ্রর কবিতায় প্রশ্ন আছে, গল্প আছে, সমসাময়িকতা আছে, ইতিহাস আছে দর্শন আছে, সমাজ রাষ্ট্র ও মানুষ আছে। এই এতকিছু রুদ্রর কবিতাকে যেমন জনপ্রিয় করেছে, তেমনি কবি হিসেবে তিনি হয়েছেন ভীষণ রকমের প্রভাবশালী।

রুদ্রর কবিতায় যেমন বিশ্বাস রেখেছিলেন মানবমুক্তির, দেশ নির্মাণের; তেমনি ব্যক্তি জীবনেও সবাইকে বেঁধেছিলেন বিশ্বাসের বন্ধনে। এই বিশ্বাসে তিনি হোঁচট খেয়েছেন, বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন কিন্তু বিশ্বাসে অনাস্থা আনেননি। এখানেই রুদ্রর কবি স্বভাবের বিশিষ্টতা এবং কবিসত্ত্বার ঋজুতর বহির্প্রকাশ। রুদ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে একবার সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। একই পদে কামাল চৌধুরী দাঁড়িয়েছিলেন ছাত্রলীগ থেকে। আলী রীয়াজ জাসদ ছাত্রলীগ থেকে। রুদ্র ছাত্র ইউনিয়ন থেকে। সেই সময় রুদ্র ক্যাম্পাসে কেবল পরিচিত নন, তুখোড় জনপ্রিয়। ভোট চাইলেই সবাই হ্যাঁ বলেন। রুদ্ররও বিশ্বাস ছিল সে বিজয়ী হবে। কিন্তু নির্বাচন শেষে ফলাফলে দেখা গেল বিজয়ী হয়েছেন আলী রীয়াজ।

রুদ্র তারপরও মানুষের ওপর বিশ্বাস হারায়নি, উনাদের বন্ধুত্বেও বিন্দুমাত্র ফাটল ধরেনি। কারণ রুদ্র বিশ্বাস করতেন মানুষের মুক্তি ও এ পৃথিবীর সকল সুন্দরের নান্দীপাঠ মানুষকে নিয়ে-মানুষের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব। এ কারণে মানুষের সাময়িক ত্রুটি কিংবা ভ্রমকে বিচ্ছিন্নরূপেই দেখতে হবে। রুদ্র ব্যক্তিজীবনেও এই চর্চা জারি রেখেছিলেন এমনকি জীবনের সবচেয়ে নিঃসঙ্গতায় ও চরমতম দুঃসময়েও রুদ্র এই সত্য থেকে বিচ্যুত হননি, এমনকি ইহজাগতিকতা থেকে বিদায়পর্বের দিনগুলোতেও নন।

রুদ্র নানাভাবে পঠিত ও আবৃত্তি চর্চায় উচ্চারিত কবিদের অন্যতম। এমনকি দেশের ভূগোল ছাড়িয়েও তিনি আদৃত। কারণ রুদ্র ভূগোল ও ভগবানের ওপরে মানুষকে শিরোপাধারী জ্ঞান করেছেন-মান্যতাও দিয়েছেন। উচ্চ শিক্ষায় ও গবেষণায় রুদ্র জায়গা করে নিয়েছেন স্বাতন্ত্র্যবাদী প্রতিভাগুণে। আমরা মনে করি রুদ্র পাঠ তখনই সার্থক ও অর্থবহ হয়ে উঠবে যখন উনার কবিতার অ্যানাটমি করার ক্ষেত্রে আমরা কবির আকাঙ্ক্ষা, লক্ষ্য ও অভীপ্সাকে বুঝতে সক্ষম হব। রুদ্রর যাপিত জীবন ও সংগঠন প্রয়াসগুলোকে বুঝতে পারব।

রুদ্র কবি, কবিতায় তিনি বুদ্ধি ও যুক্তিকে শিল্পের মোড়কে যেভাবে শব্দসম্ভারে মানুষের জয়গান গেয়েছেন এবং সভ্যতার যাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, সীমাবদ্ধতার আগপাশতলাকে খোলতাই করে দেখতে চেয়েছেন এবং ব্যর্থতাকে চপেটাঘাত করেছেন শিল্পের শর্ত সচল রেখে, তা বাংলা কবিতার মহার্ঘ্য এক সম্পদ। রুদ্র পদ পেয়ে কবি হননি। কবিতার সত্ত্বাকে তিনি কলুষিত করেননি কবি সত্ত্বাকে বিসর্জন দিয়ে, এ কারণে রুদ্রের স্বর বাণের জলে ভেসে আসে স্বর নয়। রুদ্রকে পাঠ করতে হবে তার ব্যতিক্রমীতার চশমা দিয়ে।

Comments

The Daily Star  | English

Grim discovery: Five bodies found on vessel in Meghna

The incident had occurred on the Meghna river under Chandpur Sadar upazila in an area adjacent to Shariatpur

1h ago