গোপালদী পৌর নির্বাচন

নৌকা ছাড়া এজেন্ট নেই একাধিক কেন্দ্রে, গোপন কক্ষে উঁকি

রামচন্দ্রদী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এজেন্টকে গোপন কক্ষে উঁকি দিতে দেখা যাচ্ছে। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

নারায়ণগঞ্জের গোপালদী পৌরসভা নির্বাচনে একাধিক কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রার্থী ছাড়া বাকি ৪ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। এছাড়া একটি কেন্দ্রের গোপন কক্ষে ভোটার থাকার সময় ২ এজেন্টকে উঁকি দিতে দেখা গেছে।

আজ বুধবার সকাল ৮টায় পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। 

এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত এম এ হালিম শিকদার (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর আহম্মেদ (নারিকেল গাছ), গোপালদী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর (জগ) ও গোপালদী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির (মোবাইল ফোন)।

সকাল সাড়ে ১০টায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জালাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মহিলা কেন্দ্রের ৫টি বুথের একটিতেও নারিকেল গাছ ও মোবাইল ফোন প্রতীকের পোলিং এজেন্টকে পাওয়া যায়নি। 

জালাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরুষ কেন্দ্রের শুধু ৩ নম্বর বুথে সবগুলো প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন।

একই কেন্দ্রের ১, ২, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর বুথে মোবাইল ফোন প্রতীকের পোলিং এজেন্ট পাওয়া যায়নি। ৬ নম্বর বুথে শুধু নৌকা প্রতীকের এজেন্টকে দেখা গেছে বাকি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কোন এজেন্ট ওই বুথে ছিলেন না।

১ নম্বর বুথে থাকা নারিকেল গাছ প্রতীকের পোলিং এজেন্ট মো. রুবেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্বাচনের শুরু থেকে হুমকি-ধামকি, হাত কেটে ফেলবে, এই-সেই কথা বলে নৌকার লোকজন। সবাই ভয়ে আছে। দেখেন কেন্দ্রে নৌকার বাইরে কেউ নাই।'

এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মিরাজ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্টরা কেন্দ্রের প্রতিটি বুথে আছেন। তবে একাধিক মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট আসেননি। যারা এসেছেন তারা সবাই উপস্থিত আছেন।'

সকাল থেকে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম/স্টার

একই কথা বলেন মহিলা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আরিফ সরকার।

তবে মোবাইল ফোন প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনিরের অভিযোগ, সবগুলো কেন্দ্রেই তিনি তার এজেন্ট নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও তার লোকজনের হুমকিতে এজেন্টদের অনেকেই কেন্দ্রে থাকার সাহস করেননি।

একই অভিযোগ করেন নারিকেল গাছ প্রতীকের প্রার্থী তানভীর আহম্মেদের। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবগুলো কেন্দ্রে আমি এজেন্ট দিয়েছিলাম। এজেন্টদের ভয় দেখিয়ে কেন্দ্রে যেতে দেয়নি। যারা কেন্দ্রে গেছে তাদের বের করে দিচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'নৌকার এজেন্টরা গোপন বুথের সামনে দাঁড়িয়ে থাকছেন। ভোটারদের নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করছেন। আমাকে ভোট দেওয়ায় এক ভোটারকে মারধরও করেছে।'

গোপন কক্ষে উঁকি

পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রামচন্দ্রদী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্টরা গোপন কক্ষে উঁকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সকাল সাড়ে ১১টায় বিদ্যালয়টির পুরুষ কেন্দ্রের ১ নম্বর বুথে একজন ভোট দেওয়ার সময় বাইরে থেকে দুজনকে গোপন কক্ষের পর্দা সরিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছিলেন। 

জানতে চাইলে তারা নিজেদের পৃথক ২ কাউন্সিলর প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট বলে পরিচয় দেন। তবে তাদের গলায় কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্টের পরিচয়পত্রের পাশাপাশি গলায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ব্যাজ দেখা যায়।

তাদের একজন শাহীন মোল্লা উটপাখি প্রতীকের এবং অপরজন মো. জাহাঙ্গীর পানির বোতল প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট বলে পরিচয় দেন।

শাহীন মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই ভোটার কোনটাতে টিপ (ইভিএম বোতাম) দিতে হবে বুঝতে পারছিল না। তাই আমরা দুজন বলে দিতে গেছিলাম। আর যামু না।'

গোপন কক্ষে প্রার্থীর এজেন্টদের উঁকি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই বুথে দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মো. শহীদুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুথের সামনে প্রচুর ভোটার। আমি তাদের ফিঙ্গার স্ক্যান, ভোটগ্রহণ নিয়েই ব্যস্ত। এজেন্টরা শৃঙ্খলা মানছেন না, এটা দেখার কথা প্রশাসনের।'

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোপালদী পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ বশির আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গোপন কক্ষে উঁকি দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে অফিসারকে পাঠিয়ে খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু এমন অভিযোগের সত্যতা পাইনি।'

এজেন্ট না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, 'প্রার্থীরা অনেক কেন্দ্রে তাদের পোলিং এজেন্ট দিতে পারেননি। কাউকে বের করে দেওয়া হয়েছে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি।'

Comments

The Daily Star  | English

Familiar Dhaka in an unfamiliar mood

The familiar city now appears in an unfamiliar form—no traffic jams, no honking, no packed footpaths

1h ago