শরীয়তপুর

নকলে বাধা দেওয়ায় শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ছাত্রলীগকর্মীর বিরুদ্ধে

ছাত্রলীগকর্মী ও শরীয়তপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসাইন সরণ। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরে অনার্স পরীক্ষায় নকলে বাধা দেওয়ায় শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি খাতা ছিঁড়ে ফেলেছেন এক শিক্ষার্থী। 

অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসাইন সরণ ছাত্রলীগকর্মী বলে জানা গেছে।

গতকাল সোমবার সরকারি গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের ৩০১ নম্বর কক্ষে ওই ঘটনা ঘটে। 

কলেজ সূত্রে জানা যায়, সোমবার ব্যবস্থাপনা বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের প্রথম পরীক্ষা ছিল। ৩০১ নম্বর কক্ষে পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আমিমুল এহসান ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক কামরুল হাসান আশিক।

পরীক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসাইন সরণ মোবাইল ফোনে তুলে আনা ছবি দেখে পরীক্ষার উত্তর লিখছিলেন। সে সময় প্রভাষক আমিমুল এহসান সরণকে মোবাইল দেখে পরীক্ষা দিতে নিষেধ করেন। 

ওই পরীক্ষার্থী তখন রাগ হয়ে উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলেন এবং পরে ওই প্রভাষককে লাঞ্ছিত করেন, মারতে উদ্যত হন এবং বাইরে গিয়ে গালিগালাজ করেন। পরে তিনি লাথি দিয়ে দুটি জানালার কাঁচও ভেঙে ফেলেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি পাশেই অন্য একটি রুমে পরীক্ষার ডিউটি করছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনে ৩০১ নম্বর রুমে গিয়ে দেখি শিক্ষক আমিমুল এহসান এক পরীক্ষার্থীকে বলছেন তুমি দেখে দেখে পরীক্ষা দিতে পারবে না। এতে ওই পরীক্ষার্থী রেগে যান এবং পরীক্ষার খাতা ছিঁড়ে ফেলেন।'

'পরে ওই পরীক্ষার্থী শিক্ষক আমিমুল এহসানকে মারতে উদ্যত হলে পরীক্ষারত শিক্ষার্থীরা এবং আমরা বাধা দেই। পরে সে বলতে থাকে তুই বাহিরে আয় তোর খবর আছে,' বলেন তিনি।

জানতে চাইলে প্রভাষক আমিমুল এহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয় নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।' 

খাতা ছিঁড়ে ফেলা এবং আমিমুল এহসানকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এইচ এম আক্তার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই মুহূর্তে কোনো বক্তব্য দিতে চাচ্ছি না।' 

যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী সাজ্জাদ হোসেন সরণ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি নকল করিনি, শিক্ষককে লাঞ্ছিত করিনি। এমনকি জানালার কাঁচও ভাঙিনি। আমি আমার পেছনের এক পরীক্ষার্থীর খাতা দেখে লিখছিলাম। তখন আমিমুল স্যার আমাকে অন্যের খাতা দেখে লিখতে নিষেধ করেন। স্যার খাতা নিয়ে যেতে চাইলে আমি খাতা ধরে রাখি। তখন স্যারের হাতে টান লেগে পরীক্ষার খাতা ছিঁড়ে যায়।'

ছাত্রলীগে কোনো পদ আছে  কিনা, জানতে চাইলে সরণ বলেন, 'এখন ছাত্রলীগের কোনো পদে নাই। তবে আগে ছাত্রলীগ করতাম।'

কলেজ ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের মার্চে এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে সরণ কলেজ শাখা  ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী দাবি করে আসছেন। 

সরণের ফেসবুক প্রোফাইলে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে তার ছবি দেখা গেছে। জেলা ছাত্রলীগের ধান কাটা কর্মসূচিতে তাকে দেখা গেছে।

ছাত্রলীগকর্মী সাজ্জাদ হোসেন সরণের বিরুদ্ধে জেলা ছাত্রলীগ কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না, জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. রাশেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি বিষয়টি জানি না। আমার জানামতে সরণ নামে কেউ ছাত্রলীগ করে না। তবুও আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।'

পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সহকারী অধ্যাপক গোলাম হায়দার খান মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মাদ সমির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরীক্ষার্থী সরণ গতকাল প্রভাষক আমিমুল এহসানের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছেন। আমিমুল ওই পরীক্ষার্থীকে দেখে লিখতে নিষেধ করলে তিনি খারাপ ব্যবহার করেন।'

'আমরা যদি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই তাহলে তার শিক্ষাজীবন মূল্যহীন হয়ে পড়বে। ৪ বছরের জন্য তিনি বহিস্কৃত হবেন। তাই আমরা তাকে একটু সুযোগ দিতে চাই। তিনি আমাদের কাছে ক্ষমা চাইলে হয়ত আমরা তাকে আগামী ৯ তারিখে দ্বিতীয় পরীক্ষায় বসতে দেব। নাহলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে অন্য ব্যবস্থা নেবে,' বলেন এই শিক্ষক।

Comments

The Daily Star  | English

Next nat'l polls: BNP urges CA, CEC to disclose what they discussed

Ensuring free and fair polls is now the main responsibility of EC and govt, he says

1h ago