হামলা-বিক্ষোভ-বৃষ্টিতে যেমন হলো বরিশালের ভোটগ্রহণ

বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ছবি: টিটু দাস ও হাবিবুর রহমান

কিছু কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ও হাতপাখার এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগের মধ্যেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা ও সমর্থকদের বিক্ষোভ, দুয়েকটি কেন্দ্রের সামনের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানে সৃষ্ট সাময়িক উত্তেজনা, কেন্দ্রভেদে ভোটারদের কমবেশি উপস্থিতি এবং ইভিএমে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতির প্রবণতার ভেতর দিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হলো।

আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট চলে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি অনেকটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। তবে, দুপুর পৌনে ৩টার পর থেকে শুরু হওয়া মুষলধারার বৃষ্টি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে নামিয়ে আনে।

সকাল থেকে বরিশাল শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন জায়গার ৩০টির বেশি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদকরা। এর ভেতর প্রায় সবগুলো কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা ও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের এজেন্টদের দেখা যায়। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রে জাতীয় পার্টি সমর্থিত লাঙল প্রতীকের এজেন্টদের দেখা মেলেনি।

অনেক কেন্দ্রের সামনে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের ভিড় দেখা গেলেও প্রভাব খাটানোর কোনো অভিযোগ করেননি কেন্দ্রের ভোটাররা।

বাইরের তুলনায় কেন্দ্রের ভেতরের পরিবেশ ছিল অপেক্ষাকৃত শান্ত। ভোটগ্রহণের পুরো সময় শহরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করিম ও জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন ঘড়ি প্রতীকের মো. কামরুল আহসান রুপন, হাতি প্রতীকের আসাদুজ্জামান ও হরিণ প্রতীকের আলী হোসেন।

এ সিটি করপোরেশনের সদ্যবিদায়ী মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না দিয়ে দেওয়া হয়েছে তার চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি দেখা যায়।

আজকের নির্বাচনে সাদিক আবদুল্লাহ ভোট দেননি। গত ২৬ মে প্রচারণা শুরুর পর থেকেই তিনি বরিশালের বাইরে অবস্থান করছেন বলে জানান দলীয় নেতারা।

সকাল সাড়ে ৮টায় ভোট দেওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেছেন, 'আমরা এখনো সুষ্ঠু ভোটের জন্য আশাবাদী। কিন্তু পরে কী হবে জানি না।'

অন্যদিকে শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ২ কেন্দ্রে ১৫ এজেন্টকে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন মেয়র পদে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. কামরুল আহসান রুপন। সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হলে যেকোনো ফলাফল মেনে নেবেন বলেও জানান তিনি।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমও জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ফলাফল যাই হোক না কেন, তিনি মেনে নেবেন।

জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশা ব্যক্ত করে সকাল সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) বলেন, 'ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন। এভাবে নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমি জয়ী হলে নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেবো।'

বরিশাল ও খুলনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে বলে সকাল সোয়া ১১টায় মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান।

এরপরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে এবং এই ঘটনাকে 'আকস্মিক ও বিচ্ছিন্ন' বলে মন্তব্য করেন আহসান হাবিব খান।

নিজের ওপর হামলা ও কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ এনে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগও দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ফয়জুল করিম।

তবে সেই অভিযোগ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিনি (মুফতি ফয়জুল করীম) যে অভিযোগ নিয়ে আমাদের এখানে এসেছেন, তার সবটা সত্য না। তিনি এখানে আসার ৪৫ মিনিট আগেই আমরা আমাদের নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে কাছাকাছি কিছু অভিযোগ জানতে পেরেছিলাম। দ্রুত সেটার সমাধান করা হয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করেছি।'

এবারের নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৮ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪২ জনসহ মোট ১৬৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১ হাজার ৫০০ ইভিএমের মাধ্যমে ৩০টি ওয়ার্ডে ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

বরিশাল সিটির ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৪ জন।

Comments

The Daily Star  | English
Gunfight

Local BNP leader shot dead in Dhaka’s Badda

When Kamrul was sitting on a chair on the roadside and talking with 2-3 people, two assailants on foot came from behind and shot him before fleeing the scene

47m ago