সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা, সুবিধাবঞ্চিত ‘প্রায় ২৫ হাজার’ জেলে

জাল মেরামত করছেন এক জেলে। ছবি: রাজিব রায়হান/স্টার

সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। নিবন্ধিত না হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলার প্রায় অর্ধেক সংখ্যক মৎস্যজীবী সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না।

নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর থেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা, ফলে তাদের পরিবার চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েছে।

জীবিকার তাগিদে তাদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ বরফকলে, কেউ পৌরসভায় ঝাড়ুদারের কাজ করছেন, আবার কেউ কেউ রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরুর পরে বন্দর নগরীতে রিকশা চালানো শুরু করেছেন অনিবন্ধিত জেলে সুনীল জলদাস।

'বৃদ্ধ বাবা-মাসহ আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। তারা সবাই আমার আয়ের ওপর নির্ভরশীল,' দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন সুনীল।

তিনি বলেন, 'সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পরে আমি বেকার হয়ে পড়ি। কোনো উপায় না দেখে রিকশা চালানো শিখেছি। প্রথম সপ্তাহ বিভিন্ন অলি-গলিতে রিকশা চালাই, এরপর প্রধান সড়কে রিকশা চালানো শুরু করি।'

নিষেধাজ্ঞা শুরুর পরে অনিবন্ধিত জেলেদের পাশাপাশি যেসব জেলেরা সরকারি সহায়তা পান তাদেরও অন্য পেশা বেছে নিতে হচ্ছে। তাদের ভাষ্য, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে তা দিয়ে পরিবার চালাতে পারছেন না তারা।

নিবন্ধিত জেলে রমাকান্ত দাস গত ২৫ মে সরকারের কাছ থেকে ৫৬ কেজি চাল পেয়েছেন। তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, আগামী মাসে আরও ৩০ কেজি চাল দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা।

আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১০, তারা সবাই আমার উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল। রমাকান্ত বলেন, 'সরকার আমাদের ৬৫ দিনের জন্য সাহায্য হিসেবে দুই ধাপে মোট ৮৬ কেজি চাল সরবরাহ করে। অর্থাৎ ১ দিনের জন্য বরাদ্দ ১ দশমিক ৩২ কেজি চাল কিন্তু আমার পরিবারে প্রতিদিন ৪ কেজি চাল দরকার হয়। তাছাড়া আমাকে সবজি, মাছ ও রান্নার অন্যান্য সামগ্রী কিনতে হয়। তাই আমি জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছি।'

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম নগরীর সনাতনী মত্স্যজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুবল চন্দ্র দাস জানান, চট্টগ্রামের প্রায় ৫০ হাজার জেলে সাগরে মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। তাদের প্রায় অর্ধেকই সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত না হওয়ায় সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় কোনো সহায়তা পান না।

নিষেধাজ্ঞার পুরো সময় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত উভয় ধরনের জেলেই বেকার হয়ে পড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'নিবন্ধিত জেলেদের জন্য সরকারি সহায়তা বাড়ানোর এবং অনিবন্ধিত জেলেদের নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।'

সামুদ্রিক মৎস্য দপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সাগর জানান, সাগরে মাছ সংরক্ষণ ও প্রজননের লক্ষ্যে সরকার গত ১৯ মে মধ্যরাত থেকে ৬৫ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা ২৩ জুলাই পর্যন্ত বহাল থাকবে।

অনিবন্ধিত জেলেদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, '২০১২ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের অধীনে জেলেদের নিবন্ধন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রতি বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নিবন্ধনের হালনাগাদ করা হচ্ছে।'

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক বিক্রম জিৎ রায় বলেন, 'চট্টগ্রামে মোট ২৭ হাজার ৩ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের সরকারি সাহায্য দেওয়া হয়। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন উপজেলা থেকে অনিবন্ধিত জেলেদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নিবন্ধনের জন্য তাদের নাম ও বিস্তারিত তথ্য মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠাচ্ছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

2h ago