সংস্কারের ১৪ মাস না যেতেই সড়কে গর্ত, উঠে গেছে পিচ-খোয়া

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিলের সুপারিশ
সংস্কারের ১৪ মাস না যেতেই সড়কে গর্ত, উঠে গেছে পিচ-খোয়া
সংস্কারের ১৪ মাস না যেতেই সড়কে গর্ত, উঠে গেছে পিচ-খোয়া। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে ১৪ মাস আগে। এরই মধ্যে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। অনেক স্থান থেকে পিচ-খোয়া উঠে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার হরষপুর-মির্জাপুর সড়কের বর্তমান চিত্র এটা।

বিজয়নগর উপজেলা সদর থেকে হরষপুর বাজার পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার হয় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে। 

এলজিইডির বিজয়নগর উপজেলা কার্যালয় থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সড়কটি সংস্কারের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়।

ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

৪ কোটি ৬ লাখ টাকায় কাজটি পায় মেসার্স রাঙ্গামাটি-রিপন-পিন্টু কনস্ট্রাকশন নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরপর মার্চ মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিন্টু কনস্ট্রাকশন সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু করে। পরবর্তী ৬ মাসে তারা সড়কটির মাত্র আড়াই কিলোমিটার অংশ সংস্কার‌ করলে স্থানীয়রা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাজ করার অভিযোগ তোলেন। 

এ ঘটনার পর এলজিইডির পক্ষ থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আতাউর রহমান পিন্টুকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তিনি তাতে গুরুত্ব না দিলে কাজের চুক্তি বাতিলের সুপারিশ করে এলজিইডি। 

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটির বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গা থেকে পিচ-খোয়া উঠে যাওয়ায় যানবাহন চলতে হচ্ছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। দুয়েক জায়গায় পিকআপ ভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা গর্তে আটকে যেতেও দেখা গেছে। 

ওই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশার চালক সোহাগ মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আমরা তো এখন অল্প গতিতে হলেও চলতে পারছি। কিন্তু সামান্য পরিমাণ বৃষ্টি হলেই গাড়ি চলাচল দায় হয়ে পড়ে। 

স্থানীয় পাঁচগাও গ্রামের বাসিন্দা ইজিবাইকের চালক সবুজ মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত কয়েকদিন আগে হওয়া বৃষ্টিতে সড়কটির বেহাল অবস্থা হয়েছিল। সে সময় একটি ইজিবাইক উল্টে কয়েকজন যাত্রী আহত হয়।

জানা গেছে, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ও হরষপুর ইউনিয়নের লোকজনসহ পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংস্কার কাজ শুরুর আগে রাস্তায় থাকা পুরাতন ইটের খোয়া ব্যবহারের পর ওপর দিয়ে ৪ ইঞ্চি পরিমাণ নতুন ইটের খোয়া বিছানোর কথা শিডিউলে উল্লেখ থাকলেও ঠিকাদারেরা তা করেননি। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি সড়কটির সংস্কার কাজে অনেক বেশি সময় নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির বিজয়নগর উপজেলা প্রকৌশলী আশিকুর রহমান ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দীর্ঘসূত্রতার যে অভিযোগ করা হয়েছিল, তা প্রমাণিত হওয়ায়, তাদের সঙ্গে কাজের চুক্তি বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।' 

অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিন্টু কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আতাউর রহমান পিন্টু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই সড়কে গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে লোড ক্যাপাসিটি কেউ মানে না। এই সড়ক দিয়ে বড়জোর ৫ টনের গাড়ি যাওয়ার সক্ষমতা থাকলেও এটা দিয়ে নিয়মিত অনেক বেশি লোড নিয়ে গাড়ি যাতায়াত করে। সড়কের পাশে গড়ে ওঠা ৩টি ইটের ভাটায় ৩০ টন পরিমাণের কয়লার গাড়ি নিয়মিত যাতায়াত করে। এতে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সবাই শুধু ঠিকাদারকে দোষ দেয়।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

8h ago