ঘূর্ণিঝড়ের পর কক্সবাজারে পর্যটক কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নেই যথেষ্ট পর্যটক। আজ মঙ্গলবার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে তোলা। ছবি: মোকাম্মেল শুভ/স্টার

ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব শেষ হয়ে গিয়েছে গত রোববার সন্ধ্যায়। এখনো কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা অনেক কম। ঘূর্ণিঝড়ের আগের দিনগুলো তুলনায় বর্তমানে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউজ মালিকরা।

কক্সবাজারে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোখার প্রভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে পর্যটক কম আসছেন। চলমান এসএসসি পরীক্ষার কারণেও পর্যটক কমে যাওয়ার কথা বলছেন তারা।

কক্সবাজার হোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ আজ মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বর্তমানে কক্সবাজারে ৪-৫ হাজার পর্যটক অবস্থান করছেন।

তিনি বলেন, 'এখন অফ সিজন। টুরিস্ট এমনি কম আসে। তারপরে মোখার প্রভাবে সে সংখ্যা আরও কমেছে। সাথে যোগ হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা।'

কক্সবাজারে আছে প্রায় ৪০০ হোটেল। এসব হোটেলের ধারণক্ষমতা প্রায় ৮৪ হাজার। অফ সিজনে সাধারণত ধারণক্ষমতার ১৫-২০ ভাগ অবস্থান করে পর্যটকে। কিন্তু, বর্তমানে এই সংখ্যা আরও কমে গেছে।

সেলিম নেওয়াজ বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগে টুরিস্টের সংখ্যা প্রায় ১৫-২০ হাজার ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে প্রভাব শুরু হওয়ায় অনেক টুরিস্ট কক্সবাজার ছেড়ে চলে গেছে।'

সাগরে নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় মোখা শুরু হওয়ার আগে কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকতে লাবনী বিচ থেকে কলাতলী পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ সৈকতে এসেছেন। বর্তমানে সেই সংখ্যা ১০ হাজারের নিচে নেমে গেছে।'

তিনি বলেন, 'বর্তমানে সাগর অনেক উত্তাল, বাতাসের গতিবেগও বেশি। এ সময় সমুদ্রে নামাটা বিপজ্জনক। আমরা লাল পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছি। তারপরও কিছু পর্যটক আমাদের বিধি-নিষেধ মানছেন না, সমুদ্রে নেমে পড়ছেন। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত টুরিস্টদের বেশি ভিড় থাকে।'

পর্যটকদের ছবি তুলে জীবিকা নির্বাহ করেন তরিকুল ইসলাম বাবু। আজ বিকেল পর্যন্ত আয় করতে পারেননি। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আয়ের অবস্থা ভালো না। সিজনে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় হয়। অফ সিজনে ৫০০-৬০০ টাকা হয়। কিন্তু বর্তমানে টুরিস্ট কম থাকায় আয় আরও কমে গেছে।'

ঘোড়া বাহাদুরকে নিয়ে সৈকতে ঘোরাফেরা করছিলেন মোহাম্মদ আরিফ। দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ঘোড়াটি ভারত থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়ে কিনে আনা হয়েছে। প্রতিদিন ঘোড়ার পেছনে তার খরচ ৮০০-১৪০০ টাকা। আজকে আয় হয়েছে ২০০ টাকার কম।

সৈকতে প্রায় ৬০টি ঘোড়া আছে। সব ঘোড়সওয়ারের একই অবস্থা বলে জানান তিনি।

সুগন্ধা বিচে সারি সারি রাখা বিচ বাইক। সেগুলোর চালকও ছিলেন আশেপাশে। তারা জানান, পর্যটক না থাকায় তাদের আয়ের অবস্থা ভালো না।

বিচ বাইক চালক মোহাম্মদ রফিক ডেইলি স্টারকে জানান, আজ বিকেল পর্যন্ত কোনো রোজগার হয়নি। পর্যটক কম থাকায় তার আয় অনেক কমে গেছে।

এনজিও থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ঋণ করে বিচ বাইকটি কিনেছিলেন তিনি। প্রতিমাসে কিস্তি দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা।

তবে হোটেল মালিক সমিতি বলছে, আগামী মাস থেকে পর্যটকের এই মন্দাভাব কেটে যাবে। এসএসসি পরীক্ষা শেষে পর্যটকের আনাগোনা বেড়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন।

Comments

The Daily Star  | English
health reform

Priorities for Bangladesh’s health sector

Crucial steps are needed in the health sector for lasting change.

10h ago