হেফাজতে নির্যাতনে অভিযুক্ত ‘তদন্তে নির্দোষ’ ২ পুলিশ ৮০ দিন পর যোগ দিলেন থানায়

হেফাজতে নির্যাতনে অভিযুক্ত ‘তদন্তে নির্দোষ’ ২ পুলিশ ৮০ দিন পর যোগ দিলেন থানায়
পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন এবং এসআই আবদুল আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে ডায়ালাইসিসের খরচ বাড়ানোর প্রতিবাদ করায় মো. মুনতাকিম প্রকাশ মোস্তাকিম নামের এক যুবককে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালতের নির্দেশে পাঁচলাইশ থানার ওসি এবং এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মামলা করা হয়। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুনতাকিমকে নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) আদালতে এই প্রতিবেদন দেওয়ার পর ৮০ দিন 'অসুস্থতাজনিত' ছুটি শেষে থানায় যোগ দিয়েছেন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার অভিযুক্ত ওসি নাজিম উদ্দিন এবং এসআই আবদুল আজিজ।

সিআইডি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে বলেছে, 'হেফাজতে নির্যাতনের কিছুই পাওয়া যায়নি' এবং মামলায় যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে সেগুলোরও সত্যতা পাওয়া যায়নি।

ডায়ালাইসিসের ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে গত ১০ জানুয়ারি সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। কিডনি রোগী মাকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা মুনতাকিম (২৩)। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগে মামলা করে মুনতাকিমকে গ্রেপ্তার পুলিশ। জামিন পাওয়ার পর ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি হেফাজতে নির্যাতনে অভিযোগ দিলে আদালত মামলা হিসেবে তা লিপিবদ্ধ করার আদেশ দেন।

গণমাধ্যমে মুনতাকিমের যেসব ছবি প্রকাশ হয় সেখানে তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল।

তখন গণমাধ্যমে মুনতাকিমের যেসব ছবি প্রকাশ হয় সেখানে তার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল।

এর পরই আদালতের আদেশ অনুযায়ী মোস্তাকিমের পক্ষে চট্টগ্রাম সিআইডির পুলিশ সুপার মো. শাহনেওয়াজ খালেদ গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন ও এসআই আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করেন। এই মামলা হওয়ার আগের দিন হঠাৎ 'ছুটিতে' চলে যান ওসি এবং এসআই। ফৌযদারি মামলা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

গত বৃহস্পতিবার আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় বলে জানিয়েছে সিআইডি সূত্র।

সিএমপির উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওসি তার অসুস্থতার ছুটি' শেষে থানায় যোগদান করেছেন। তিনি তার জয়েনিং লেটারসহ কিছু ডাক্তারি সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন।

সিআইডি রিপোর্ট দেওয়ার পরই হঠাৎ 'অসুস্থ' ওসি কীভাবে 'সুস্থ' হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি জানি না। যে কেউ যেকোনো সময় অসুস্থতা থেকে সেরে উঠতে পারেন।'

তবে মুনতাকিমের আইনজীবীদের ভাষ্য, গ্রেপ্তার এড়াতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ওসি ও এসআই অসুস্থতার অজুহাতে ছুটিতে গেছেন আর সিআইডির ইতিবাচক প্রতিবেদন পেয়ে তারা আবার চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে চট্টগ্রামের সিআইডি প্রধান শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, 'আমরা আমাদের প্রতিবেদনটি 'মিস্টেক অব ফ্যাক্ট' বলে আদালতে দাখিল করেছি। এ ছাড়া মুনতাকিম যেসব তথ্য দিয়েছেন তার মধ্যে কিছু তথ্য মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'তদন্তে আমরা হেফাজতে নির্যাতনের প্রমাণ পাইনি।'

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সিআইডি উল্লেখ করেছে, পুলিশকে লাঞ্ছনার মামলায় জামিন পেয়ে  মুনতাকিম  হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন। মুক্তির পর প্রথমে তিনি চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) যাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়,  মুনতাকিম মামলায় বলেছেন যে তিনি পুলিশি হয়রানির ভয়ে চমেক হাসপাতালে যাননি তবে তিনি মামলার নথিতে বহির্বিভাগের টিকিট জমা দিয়েছেন। মামলায় বলা হয়েছে ঘটনার দিন ওসি তার মাকে চমেক হাসপাতালে লাথি মারেন।

সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুটি তথ্যই মিথ্যা। সিআইডি বলেছে, চমেক কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে জানিয়েছে  মুনতাকিম  জেনারেল হাসপাতাল থেকে চমেকে গেলেও তিনি চিকিৎসকদের তার শরীর দেখাতে রাজি হননি। পরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে একজন বেসরকারি চিকিৎসকের কাছে যান। গ্রেপ্তারের সময় তার মা ডায়ালাইসিস বেডে ছিলেন তাই তাকে লাথি মারার দাবিও অসত্য।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এপিক হেলথ নামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, মুনতাকিম ঘটনার দিন ছবি তোলার সময় ওসির মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ) মুনতাকিমকে আদালতে আইনি সহায়তা দিচ্ছে। বিএইচআরএফ-এর আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইন অনুযায়ী চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের আগে বাদীকে জানানো হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাদীকে জানানো হয়নি।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Tax authority to split. Will it bring the desired outcome?

Touted as a historic overhaul, the move has ignited debate over whether it will drive meaningful reform or merely deepen the layers of bureaucracy, given the NBR's persistent failure to meet its targets.

14h ago