বরগুনায় বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল, উদ্বেগে এলাকাবাসী

বরগুনার বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধে ফাটল। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

বিষখালী নদীর ভাঙনে বরগুনার বেতাগী পৌরশহর রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে শহরবাসীর। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মোখার পূর্বাভাস তাদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়েছে।

তাদের আশঙ্কা ভারী বর্ষণ আর জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেলে শহরের উত্তর ও পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত বিষখালী নদী তীরবর্তী শহর রক্ষা বাঁধটি ভেঙে প্লাবিত হতে পারে গোটা শহর।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘণীভূত হচ্ছে। এটি পর্যায়ক্রমে ঘূর্ণিঝড় থেকে তীব্র ঘূর্ণিঝড় ও অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।

গভীর নিম্নচাপটি আজকে সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়, আগামীকাল সকালে তীব্র ঘূর্ণিঝড় এবং আগামীকাল দিবাগত ভোররাতে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, গতি একই রকম থাকলে আগামী ১৪ মে সন্ধ্যায় ঝড়টি বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করবে, জানিয়েছে অধিদপ্তর।

গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধসহ বিষখালী নদীর অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অংশের প্রতিরক্ষায় ৪০৪ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন ও বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু নদী ভাঙন তীব্র হলেও এক বছরে ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজই শুরু করতে পারেনি।

তবে বরগুনা পাউবোর দাবি বিষখালী নদীর ভাঙন রোধে বেতাগী শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, লঞ্চঘাটের পশ্চিম দিকে শহর রক্ষা বাঁধের ওপর নির্মিত পাকা সড়কের একাধিক স্থানে বড় আকারের ফাটল দেখা দিয়েছে এবং কোনো কোনো স্থান দেবে গেছে। এতে যে কোনো সময় বাঁধের ওপর নির্মিত সড়কটি দেবে যাওয়া অংশসহ সড়কের দুই পাশের শতাধিক দোকান ও অন্যান্য স্থাপনা নদীতে বিলীন হতে পারে।

স্থানীয়রা জানান, বিষখালী নদীর ভাঙনে ইতোপূর্বে বিলীন হয়ে গেছে লঞ্চঘাট, বাজারের মূল অংশ, ছোট কলকারখানা, কয়েকশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আর এখন ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে নবনির্মিত মডেল মসজিদ, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, লঞ্চ ঘাটের যাত্রী ছাউনি, শত বছরের পুরোনো কালি মন্দিরসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

শহর রক্ষাবাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দা শাহআলম রুবেল বলেন, 'ভাঙনের কবলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি, বাপ-দাদার বসতভিটাও চলে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে আমাদের আশ্রয় হারাতে হবে তখন আমরা কোথায় যাব?'

একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রব বলেন, 'বর্ষা মৌসুম আসন্ন। বিষখালী নদী যেভাবে ভাঙছে, বর্ষা ও ঘূর্নিঝড় আঘাত হানলে যে কী অবস্থা হবে তা ভেবেই দুশ্চিন্তায় আছি।'

সড়কের পাশে ঝালকাঠি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকশর্পের মালিক সোহেল হাওলাদার বলেন, 'গত কয়েক মাস ধরে শহর রক্ষাবাঁধে ভাঙন বেড়েছে। ঝড়ের কারণে এ বাঁধ যে কোনো সময় ভেঙে গিয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।'

স' মিলের মালিক আব্দুল হালিম বলেন, সামনে বর্ষা মৌসুম যত এগিয়ে আসছে। ভাঙন আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করবে। এভাবে অব্যাহত থাকলে ভাঙনের কারণে তাদের নিঃস্ব হতে হবে।

বেতাগী পৌর সভার মেয়র এবিএম গোলাম কবির জানান, 'নানা জটিলতায় বেতাগী শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পটি আটকে আছে। এক বছর আগে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হলেও এখনও কাজ শুরু না হওয়ায় আমরা হতাশ।

এ বিষয়ে বরগুনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় গিয়ে বাঁধের অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শন করে এসেছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং জরুরি মেরামতের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, 'তাছাড়া বিষখালী নদীর ভাঙন রোধে শহর রক্ষাবাঁধ প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। খুব শিগগিরই টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে কাজ শুরু করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Shutdown is another economic peril

Vowing to continue an indefinite work stoppage and stage a protest march on tax offices, the NBR Reform Unity Council has intensified its demands

8h ago