রূপার গয়নার চিরায়ত আবেদন
সাজসজ্জার দুনিয়ায় বহুদিন ধরে জেঁকে বসে থাকা রূপার গয়নাকে চাইলেও নির্দিষ্ট কোনো সময়ের ঘেরাটোপে বন্দী করা যায় না। এই যুগেও পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে রূপার গয়না পরা হলে এক আধুনিক কিন্তু ধ্রুপদী আমেজ যোগ হয়। রূপার হার বা কানের দুল যেন অভিজাত আর একটা বনেদী নান্দনিকতা ছড়িয়ে দেয়। এর সঙ্গে মানিয়ে যায় মুক্তোর কারিকুরিও। পরিধেয় সবকিছুই তখন হয়ে ওঠে একটু বিশেষ। রূপার সহজলভ্যতা, বহুমাত্রিকতা আর শাশ্বত রূপ যেন গয়নার আবেদন আর গুরুত্ব দুটোই বাড়িয়ে তোলে।
গয়নার জগতে উঁচুমানের ধাতু, অর্থাৎ সোনা কিংবা প্লাটিনামের তুলনায় রূপর গয়না সহজে ক্রয়যোগ্য। আর তাই বহু ক্রেতার কাছেই আছে এর আলাদা গ্রহণযোগ্যতা। সোনা বা প্লাটিনামের গয়নাগুলোতে যেসব নকশা সাধারণত চোখে পড়ে, তা চাইলেই রূপায় করে নেওয়া যায়। দিনে দিনে এমনিতেও লোকে গয়নার জন্য বেশি টাকা খরচের প্রবণতা থেকে সরে আসছে। তাই রূপা আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনেকের কাছেই। যারা একইসঙ্গে স্টাইলটাও ধরে রাখতে চান আবার পকেটের স্বাস্থ্যও হালকা করতে চান না, তাদের কাছে রূপার গয়না চমৎকার একটি সমাধান। উৎসব-আনন্দের পাশাপাশি প্রতিদিনের জীবনযাপনে, প্রতিদিনের পোশাক-আশাক সঙ্গেও রূপার গয়না মানিয়ে যায়।
সুলভ মূল্যের পাশাপাশি একটা ভিন্টেজ ধাঁচ আনার জন্যও অনেকের প্রথম পছন্দ এখন রূপার গয়না। এর মনোরম আর মার্জিত ভাব যেন অন্যসব রঙ, যেমন– সবুজ, লাল, ছাই, সোনালি, সাদা এবং নীলের পরিপূরক হয়ে ওঠে। নকশার দিক দিয়ে দেখতে গেলে রূপার গয়না যেমন প্রতিদিন পরার মতো ছিমছাম আর 'মিনিমালিস্ট' হতে পারে, তেমনি রূপা দিয়ে ভারি ধাঁচের গয়নাও তৈরি করা সম্ভব।
রূপার গয়নার এই বহুমাত্রিকতাই এর অন্যতম আকর্ষণীয় দিক। বিভিন্ন ধরনের পোশাক-আশাকের সঙ্গে এটিকে সেইমতো সাজিয়ে-গুছিয়ে নেওয়া যায়। সাবেকি, আটপৌরে বা ঐতিহ্যবাহী তো বটেই, পাশ্চাত্য ধাঁচের বেশভূষাতেও রূপার গয়না মানিয়ে যাবে। তাই যেকোনো ধরনের উদযাপনেই রূপার গয়নাকে বিভিন্নভাবে গড়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে।
গয়নার ক্ষেত্রে রূপার সঙ্গে মুক্তার মিশেল বেশ জনপ্রিয়। এতে একইসঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ও পরিপাটি একটা আমেজ আনা যায়। সাদা মুক্তার জমকালো ভাবটা রূপার ছিমছাম আর উজ্জ্বল ভাবের সঙ্গে মিলে এমন এক জমকালো ও অভিজাত রূপ তৈরি করে, যা যেকোনো অনুষ্ঠানে পরলেই বেশভূষায় আসবে অন্যরকম এক মাত্রা। সেইসঙ্গে যদি মুক্তাকে ধরা যায় শুদ্ধ-নিষ্পাপ আর ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে, তাহলে রৌপ্যসঙ্গ তাতে জুড়ে দেবে এক মনোমুগ্ধকর ও অর্থপূর্ণ স্বভাব। গয়নার সাথে বাড়বে পরিধানকারীর কদরও।
জমকালো বা জ্যামিতিক কিংবা সাবেকি- যেকোনো ধরনের ছাঁচেই রূপার গয়না হয়ে উঠতে পারে সাজসজ্জার একটি পরিশীলিত রূপ। একটা ছিমছাম ভাব থাকে বলে আধুনিক ফ্যাশনের সঙ্গেও রূপার গয়না বেশ মানিয়ে যায়।
খুব সূক্ষ্ম নকশা থেকে শুরু করে ভারি-সবই মেলে এতে। সেজন্যই রূপার গয়নার প্রচলন প্রজন্মের পর প্রজন্ম থেকে চলে এসেছে, আজও তার আবেদন একটুও কমেনি। অন্য সব গয়নার মতো রূপার গয়না 'আজ আছে, কাল নেই' ধরনের নয়। তাই বংশপরম্পরায় তা উপহার হিসেবে রেখে যাওয়া যায়, বহু বছর পরেও কাউকে এটি সুশোভিত করে তুলবে সেই আশায়।
অনুবাদ করেছেন অনিন্দিতা চৌধুরী
Comments