নায়ককে ছাড়িয়ে যাওয়া ৫ খলনায়কের গল্প

নায়ককে ছাড়িয়ে যাওয়া ৫ খলনায়কের গল্প
নায়ককে ছাড়িয়ে যাওয়া ৫ খলনায়ক

নায়ক নয়, খলনায়কদের জন্য এমন সহানুভূতির সুর শোনা যায় নচিকেতার গানে– 'রাম যদি হেরে যেত, রামায়ণ লেখা হতো, রাবণ দেবতা হতো সেখানে'। একই সুরে, বহু সময় আগে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তও তার মহাকাব্যের মূল চরিত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এক তথাকথিত খলনায়ককেই। এর পেছনের মনস্তত্ত্বটা হয়তো এই; নায়কের গল্পটা বাঁধাধরা ছাঁচে হয়। আর খলনায়ক বা বিপরীত এসব চরিত্রের মধ্যেই থাকে গণ্ডির বাইরের গল্পটা। যে গল্প আমাদের অন্যভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে, দেখতে শেখায় মুদ্রার অন্য পিঠটাও। 

সাধারণ নিয়মে জয়গান শোনা যায় সব নায়কের জন্য। নায়কোচিত আচরণে তারা হয়ে ওঠেন সকলের প্রিয়, অতঃপর জনপ্রিয়। কিন্তু সেলুলয়েড জগতে এমন বেশ কিছু খলনায়ক বা ভিলেন রয়েছেন, যাদের জনপ্রিয়তা একটা পর্যায়ে ছাড়িয়ে গেছে নায়কদেরকেও। এ লেখায় কথা হবে তাদের নিয়েই। 

জোকার

জোকার 

জোকার চরিত্রটি নিঃসন্দেহে কাল্পনিক চরিত্রদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় অ্যান্টাগোনিস্ট। জোকারের প্রতি দর্শকের আগ্রহ এতটাই উদ্যমী ছিল যে, শুধু জোকারকে নিয়েই নির্মিত হয়েছে একটি সম্পূর্ণ চরিত্র। এই চৌকস অথচ ভীষণ দুখী জোকারের আবির্ভাব ঘটে ডিসি কমিকস অবলম্বনে ২০০৮ সালে নির্মিত ব্যাটম্যান সিরিজের 'দ্য ডার্ক নাইট' চলচ্চিত্রে। হিথ লেজার অভিনীত জোকার চরিত্রটি প্রোটাগনিস্ট, অর্থাৎ ব্যাটম্যানের বাইরেও নিজস্ব এক ভক্তগোষ্ঠী গড়ে নেয়। সেই জের ধরে পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আসে 'দ্য জোকার' সিনেমাটি, যাতে নামভূমিকায় অভিনয় করেন হোয়াকিন ফিনিক্স।

জীবনের বহুমুখী বেদনায় কাতর হয়েও মানুষ দেয়ালে পিঠ ঠেকবার ঠিক আগের মুহূর্তে থমকে যায়। সাহায্যের অন্য কাউকে না পেলে নিজেই নিজেকে সামলে নেয়, হয়তো জোকারের মতোই প্রশ্ন ছোঁড়ে আয়নায় থাকা মানুষটির দিকে– 'হোয়াই সো সিরিয়াস?'

হ্যানিবাল ল্যাক্টার

হ্যানিবাল ল্যাক্টার 

খুনীদের মনস্তত্ত্ব এমনিতেই সাধারণ মানুষের চেয়ে ঘোরানো-প্যাঁচানো, অতিমাত্রায় জটিল হবে– এ নতুন কিছু নয়। কিন্তু নিজের ভিক্টিমকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে রেখে, তারই মাথার মগজ ভেজে খেয়ে ফেলার মতো নিষ্ঠুরতা বোধহয় অন্যসব খুনী বা নিপীড়কদেরও পেছনে ফেলে দেয়। হ্যানিবাল লেক্টার এমনই তুখোড় বুদ্ধিসম্পন্ন এক ক্যানিবাল সিরিয়াল কিলার, যাকে বলিউডি ডনের চেয়েও অধিক হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়ায় আইনি লোকেরা। তবে তাকে ধরা অসম্ভব হয় না। মজার বিষয় হচ্ছে, সে ধরা পড়েও সবার নাকে দড়ি লাগিয়ে ঘোরাতে সক্ষম হয়। আর এখানেই যেন হ্যানিবাল হেরে গিয়ে জিতে যায়। 

তার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ বোধহয় তার কখনো হার না মানা বুদ্ধির খেলা আর অদ্ভুত এক আত্মবিশ্বাস। মুখে ঝুলে থাকা বাঁকা হাসিতে অভিনেতা অ্যান্থনি হপকিন্স জেলের শলাকার ভেতরে থেকেও অপরাধী ধরতে সাহায্য করে যান আর তার বদলে হাতিয়ে নিতে থাকেন নিজের জন্য, অর্থাৎ 'ক্যানিবাল হ্যানিবাল'-এর জন্য সুযোগ-সুবিধা। এই সাইকোপ্যাথ চরিত্রটি নিয়ে নির্মিত হ্যানিবাল ফ্র্যাঞ্চাইজিতে মোট ৫টি সিনেমা রয়েছে। তৈরি করা হয়েছে টেলিভিশন শো-ও। 

নরমান বেটস

নরমান বেটস 

আলফ্রেড হিচককের সিনেমায় সাসপেন্স ও সাইকোপ্যাথ জনরাঁর আবির্ভাবেই আছে নরমান বেটসের নাম। বেটস মোটেল নামের রহস্যেঘেরা বিশ্রামশালাটিতে বিশ্রামের চেয়ে বেশি অস্থিরতা বিরাজ করে। সঙ্গে থাকে এক মা-ছেলের সম্পর্কের ধোঁয়াশা, সেই সঙ্গে বলি হওয়া গল্পের অন্য চরিত্ররা। ১৯৫৯ সালে রবার্ট ব্লচের থ্রিলার উপন্যাস 'সাইকোতে' পাঠক পরিচিত হয় বেটসপুত্রের জটিল মনস্তত্ত্বের সঙ্গে। পরবর্তী বছরে একই নাম নিয়ে হিচকক তৈরি করলেন সাসপেন্স সিনেমার জগতের অন্যতম মাইলফলক। এক দ্বৈত জীবনে বাঁচে নরমান। তার অবদমিত কামনা-বাসনা এবং মুখোশপরা চেহারা খুব স্বাভাবিক সময়েও যেন দর্শককে বিব্রত করে তোলে। অথচ একই সঙ্গে কোথায় নরমানের জন্য একটা সহানুভূতি বোধ হয়, ঠিক যেমন মানসিকভাবে অসুস্থ একজন ব্যক্তির জন্য হওয়া উচিত। 

ডার্থ ভেডার

ডার্থ ভেডার 

স্টার ওয়ার্স ফ্র্যাঞ্চাইজির খলনায়ক হচ্ছে এই ডার্থ ভেডার। শক্তিমত্তা, আগ্রাসী ভাব আর প্রতীকী ক্যারিশমায় চরিত্রটি তার আশপাশ দাপিয়ে বেড়ায়। সেই সঙ্গে তার পেছনের ট্র্যাজেডিময় গল্পটা দর্শককে তার প্রতি অনেকটা সহানুভূতিশীলও করে তোলে। ডার্থ ভেডারকে কেউ পছন্দ করে তো কেউ দু চোখে দেখতে পারে না। তবে স্টার ওয়ারস দশকদের মধ্যে থাকা এই দুপক্ষের কেউই তাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। তার অতীতে থাকা রহস্যের ধোঁয়াশাজাল যেন সবকিছুর ভবিষ্যতের সঙ্গে যুক্ত থাকে, আর তাই তাকে ভয়ের সঙ্গে একরকম সমীহ ও আগ্রহের চোখেও দেখে তার শত্রুপক্ষ। 

থানোস

থানোস 

মার্ভেল জগতের অন্যতম শক্তিশালী অ্যান্টাগোনিস্ট থানোস। বিভিন্ন সুপারহিরোর সঙ্গে তাকে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে দেখা যায়। জানা যায়, টাইটান নামের গ্রহের আদি বাসিন্দা ছিল সে– তবে নিজেদেরই লোকেদের সঙ্গে ভিন্নমতের কারণে নির্বাসিত হতে হয় তাকে। গ্রহের অধিক জনসংখ্যা থেকে বাঁচতে সে পরামর্শ দিয়েছিল অর্ধেক বাসিন্দাকে বাদ দিয়ে দেওয়ার, যাতে অবশিষ্ট সদস্যরা ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে। অত্যন্ত নিষ্ঠুর কিন্তু বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া এই ভিলেনের আছে মহাজাগতিক সব শক্তি। তবু আরও শক্তির পেছনে ছুটতে থাকে সে। দমে না যাওয়ার এক অনন্য মানসিক ক্ষমতা আছে থানোসের, আর তাই বোধহয় অনুপ্রেরণা জাগায় দর্শকের মাঝে। যেকোনো অভিযানেই যত দুঃসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক, থানোসকে দেখা যায় কোনোরকম আবেগের বশবর্তী না হয়ে নিজের পদক্ষেপে অটল থাকতে। একজন ভিলেনের চরিত্রে থেকেও এই দৃঢ়তাই থানোসকে করে তুলেছে সিনেপ্রেমীদের চোখে অন্যতম সেরা চরিত্র। 

তথ্যসূত্র: গোবুকমার্ট, সিবিআরডটকম, দ্য ফ্যানটাসি রিভিউ, মারভেলডটকম

Comments

The Daily Star  | English

Iran's top security body to decide on Hormuz closure

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

13h ago