আগের তুলনায় দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে, আরও বাড়বে: দিলীপ বড়ুয়া
সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া বলেছেন, 'এই সরকার বঙ্গবন্ধুর নীতিকথা বলে। কিন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কাজ করে সেই নীতিকথার সম্পূর্ণ উল্টো।' এ ছাড়া অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বিভিন্ন সেক্টরে লুটপাট বেড়েছে, যার দায় জোটসঙ্গী হিসেবে তাদেরও বহন করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত জ্বালানিবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, 'আমি শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন দেখেছি কীভাবে কর্ণফুলী সার কারখানায় স্থানীয় দামে গ্যাস সরবরাহ করে আন্তর্জাতিক দামে সার কিনতে হতো। যখন গ্যাস সরবরাহ কম থাকতো, তখন আমাদের অন্য কারখানাগুলো বন্ধ করে রেখেও তাদের গ্যাস দিতে হতো। যখন আমরা গ্যাস আমদানি করি, তখনো প্রথম কর্ণফুলীকে সাপ্লাই দিতে হতো, বেশি দামে আমদানি করেও স্থানীয় দামে তাদের গ্যাস দিতে হতো।'
'শিল্পপতিরা বলতেন, আমাদের ফার্টিলাইজার কারখানার দরকার নেই। এগুলো বন্ধ করে রেখে বিদেশ থেকে ইমপোর্ট করলেই তো পারেন। কিন্তু বিদেশ থেকে ইমপোর্ট করলে যে কস্ট ইফেক্টিভ হবে না, কৃষকদের ওপর চাপ পড়বে, সেটা তাদের কাছে বিচার্য নয়, বিচার্য হচ্ছে তার কমিশন। এই নিয়ে আমাদের কিছু সার কারখানা বন্ধও রাখা হয়েছিল, কিছু ঝগড়া বিবাদও হয়েছে।'
তৎকালীন জ্বালানি সচিব আবুল কালাম আজাদ ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী সার কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে ছিলেন বলে মন্তব্য করেন দিলীপ বড়ুয়া।
চিনি ও লবণের ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেন, এমন উদাহরণ দিয়ে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ''তারা 'মনোপোলাইজড ম্যানিপুলেশন' করে।'
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, 'বঙ্গবন্ধু সরকার শতভাগ জনগণের মালিকানায় শেল কোম্পানিগুলোকে জাতীয়করণ করেছিলেন। তার পরবর্তীতে অনেক কিছু হয়েছে। আমাদের ১৪ দলীয় জোটে যখন আমরা ২৩ দফা ঘোষণা করি তখন জাতীয় সম্পদ কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে, সমুদ্রের তেল-গ্যাসের কী হবে, এ বিষয়গুলো উল্লেখ ছিল।'
'এই সরকার বঙ্গবন্ধুর নীতিকথাই বলেন, এসব নীতিকথা বলে আজকে গ্যাস ও জ্বালানির ক্ষেত্রে টোটালি উনার চিন্তা চেতনার পরিপন্থী কাজটা করছে। প্রথমত, যে হারে বিদ্যুৎকেন্দ্র হয়েছে; বাইরে থেকে লোক ধরে এনে, যাদের কোনো অভিজ্ঞতা আছে কি নাই দেখা হলো না—তাকে বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে দেওয়া হলো এবং সেগুলো বোঝায় পরিণত হলো। সরকারের পলিসিমেকাররা অ্যাডহক ভিত্তিতে চিন্তা করেছে। তারা চিন্তা করে নাই ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাস যদি না আসে, ডিজেল যদি না আসে তাহলে কী হবে।'
তিনি আরও বলেন, ''কারণ তারা চাচ্ছে রাতারাতি ধনী হয়ে যেতে। আমাদের দেশেও কেউ কেউ রাতারাতি ধনী হয়ে গেছে, জ্বালানি বিক্রির টাকায়। কেউ সিঙ্গাপুরে গিয়ে তাদের হেড অফিস করে ফেলেছে… এভাবে লুটপাট। 'কিন্তু আমরাও (জোট) তো সৎ হতে পারিনি। আমরা তো লুটপাটটাকে আরও এক্সিলারেট করেছি (গতি বাড়িয়ে দিয়েছি)। এসব লুটপাটের ভার জনগণকে বহন করতে হচ্ছে।'
'এভাবে তো জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সুরক্ষা করা যাবে না। এই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্থ, লুটেরা ধনিক শ্রেণি সৃষ্টি করে। আগে বলা হতো সরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারের মদদে চুরি হতো, এখন তো প্রাইভেট ব্যাংকগুলোতে পুকুর চুরি হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকে কী হচ্ছে? অন্য ব্যাংকগুলোতে কী হচ্ছে?'
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, 'আমাদের দেশে বর্তমানে লুটেরা ধনিক শ্রেণির লোকেরা একত্রিত হয়েছে। আগের তুলনায় দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে, আরও বাড়বে।'
'জনগণের মালিকানা পেতে চাইলে এই রাজনৈতিক ব্যবস্থায় হবে না। যে রাজনৈতিক সিস্টেম জনগণের মালিকানাকে সমুন্নত রাখবে, তার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম ছাড়া বিকল্প কিছু নেই' বলে মন্তব্য করেন তিনি।
Comments