মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আব্দুল মতিন সিলেটে গ্রেপ্তার

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. আব্দুল মতিন। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. আব্দুল মতিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় তার বাড়ি।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাহিনীটি জানায়, পলাতক আব্দুল মতিনকে গতকাল রাতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।

র‍্যাব আরও জানায়, আব্দুল মতিন এবং একই মামলার আসামি আব্দুল আজিজ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বারপুঞ্জিতে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তারা পালিয়ে বড়লেখায় এসে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। আব্দুল মতিন বড়লেখা থানা জামায়াতে ইসলামী এবং ১৯৭১ সালে ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। আবদুল মতিনসহ রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মৌলভীবাজারে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাত।

একাত্তরের ১৯ মে আব্দুল মতিনসহ এই মামলার অপর দুই আসামি আব্দুল আজিজ, আব্দুল মান্নান এবং তাদের সহযোগীরা মিলে মৌলভীবাজারের বড়লেখার ঘোলসা গ্রাম থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা হরেন্দ্রলাল দাস, মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাস এবং শ্রীনিবাস দাসকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতন চালায়। পরে জুড়ি বাজার বধ্যভূমিতে হরেন্দ্রলাল দাস, মতিলাল দাস ও নগেন্দ্র কুমার দাসকে হত্যা করা হয়। রাজাকার ক্যাম্প থেকে পালিয়ে গিয়ে বেঁচে যান শ্রীনিবাস দাস।

আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে বড়লেখার কেছরিগুল গ্রামের এক নারীকে অপহরণ করে গণধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িতে লুটপাট বিভিন্ন জনকে নির্যাতন, বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর আব্দুল মতিন, আব্দুল মান্নান এবং আব্দুল আজিজ বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর তদন্ত শেষ হয়। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে সে বছর ১ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। পরোয়ানা জারির দিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মান্নানকে গ্রেপ্তার করে। তারা এখন কাশিমপুর কারাগারে আছেন। তখন থেকে আত্মগোপনে ছিলেন আব্দুল মতিন। এই আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয় প্রসিকিউশন। পরে ২০২২ সালের ১৯ মে ট্রাইব্যুনাল তিন জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন।

র‍্যাব জানায়, আব্দুল মতিন মৌলভীবাজারের বড়লেখা ছেড়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জে তার ভাগ্নের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। সেখানে তিনি নিজেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিতেন।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

2h ago