পরিবারের জন্যই ঈদেও পরিবার থেকে দূরে

গতকাল শনিবার রাজধানীর ইব্রাহিমপুরে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন চালক জিয়াউল হক। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

ঈদে গ্রামের বাড়ি ফেরার গল্প চিরপরিচিত হলেও এমন অনেকেই আছেন যারা জীবিকার তাগিদে ঈদের দিনটিতেও কাজ করেন, রাজধানীবাসীর ঈদকে উপভোগ্য করে তোলেন।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে সবাই যখন গ্রামে ছুটছিলেন তখন পরিবারের কথা চিন্তা করেই ঈদের ছুটির দিনগুলোতে ঢাকায় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রিকশাচালক মো. জিয়াউল হক (৩৮)। গতকাল শনিবার ঈদের দিনে যাত্রী নিয়ে ঢাকা শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটছিলেন তিনি। ঈদের ছুটিতে কাজ করেই ফিরে যাবেন গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণায়, স্ত্রী ও ৩ সন্তানের কাছে।

জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ৩ মেয়ের দুজন স্কুলে পড়ে। বড় মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে, ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে। আমি দেড় বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালাই। পাশাপাশি একটা প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করি। হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর কিছু টাকা জমলে ১৫-২০ দিনের জন্য বাড়ি চলে যাই।'

ঈদের দিনেও কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'পরিবার থেকে দূরে আছি। খারাপ লাগে একটু। স্ত্রীর সঙ্গে, মেয়েদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি। ঈদে রিকশা চালালে যাত্রীরা বকশিস দেয়, কিছুটা বাড়তি আয় হয়। যদি বাড়ি চলে যেতাম তাহলে এই ৩ দিনে যে ৪-৫ হাজার টাকা আয় করলাম তা করতে পারতাম না। তাই খারাপ লাগলেও পরিবারের জন্যই অতিরিক্ত কাজ করা। ২ দিন পরে যাচ্ছি পরিবারের জন্য ভালোমন্দ কিছু নিয়ে যাবো, ভালো কিছু খাওয়াতে পারব এই তো আমার আনন্দ।'

একই কথা জানান আরেক রিকশাচালক শরীফ মাতব্বর। তার বাড়ি ভোলায়। ২০১১ সাল থেকে ঢাকা শহরে রিকশা চালান।

তিনি বলেন 'আমার স্ত্রী আছে, ৮ মাসের একটি বাচ্চা আছে। ঈদে বাড়ি যায়নি কিন্তু তাদের কাছে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি যেন তারা ঈদ করতে পারে। ঈদের আগে-পরে ৫ দিন রিকশা চালিয়ে ভালো আয় হয়। এখন তো আর ঈদ করার বয়স নাই। পরিবারের দায়িত্ব আছে, তাদের কথা ভেবেই এই সময়টায় কাজ করা। কয়েকদিন পরই চলে যাবো বাড়িতে। দীর্ঘসময় বাড়িতে কাটিয়ে আসব।'

ঈদের ছুটিতে কাজ করবেন বলে ঢাকায় রয়ে গেছেন দিনমজুর রমজান আলী (৪২)। কাওরানবাজারে কুলির কাজ করেন তিনি। বাড়ি সিরাজগঞ্জে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার ৩ মেয়ে, ১ ছেলে। ঈদের আগে তাদের জন্য কাপড় পাঠিয়ে দিয়েছি। সঙ্গে ২ হাজার টাকাও দিয়েছি। ঈদে তো কাজ করার লোক পাওয়া যায় না। তাই কাজ করলে ভালো বকশিস পাই। এজন্যই থেকে গেলাম। ঈদের তৃতীয় বা চতুর্থ দিন বাড়ি যেতে পারি।'

Comments

The Daily Star  | English

Dengue turns deadlier for Ctg in Nov

So far, 35 dengue patients died in Chattogram this year, including 10 in just the first two weeks of this month alone. The death toll is likely to rise further by the end of the month

25m ago